ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা অনেক তুলকালাম কাণ্ড করেছে। তারা গায়ের ঝাল মিটিয়ে দেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিরুদ্ধে বলতে গেলে এক ধরনের যুদ্ধ ঘোষণা করে বসেছেন। তারা যা বলেছেন, এটা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদালতের চরম অবমাননা। দেশের সর্বোচ্চ আদালত এ পর্যন্ত সেসব কথাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেই দেখেছেন, সভ্য দুনিয়ার কম আদালতই তা করবেন। তবে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার লজ্জা-শরমের তেমন একটা ধার ধারে বলে মনে হয় না। নইলে আদালত অবমাননার দায়ে যে দুই মন্ত্রীকে সর্বোচ্চ আদালত দণ্ড দিয়েছিলেন, তারপর তাদের অবশ্যই মন্ত্রিসভা থেকে বের করে দেয়া উচিত ছিল। না, সরকারের ভূমিকায় মনে হলো, তারা এসব রায়ের থোড়াই পরোয়া করে চলেন। কথায় আছে, এক কানকাটা চলে রাস্তার এক পাশ দিয়ে, আর দুই কানকাটা চলে রাস্তার মাঝখান দিয়ে।
সরকার বোধ হয় মনে করে, দেশের সব লোক কেবল তাদের তোয়াজ করবে। সরকার যাই করুক না কেন, তাকেই হীরক রাজার পারিষদদের মতো ‘বাহবা বাহবা বেশ’ বলে সায় দিয়ে যাবে। তা সে সাধারণ নাগরিকই হোক, আর বিচার বিভাগই হোক। সাধারণ নাগরিকেরা যাতে ভিন্ন মত পোষণ করতে না পারে, এ জন্য আগের নিপীড়নমূলক আইন তো আছেই, নতুন করে নানাবিধ নিপীড়নমূলক আইন করা হয়েছে। সেদিন পত্রিকায় দেখলাম, একজন কয়েনের বদলে দোকানির কাছে কাগুজে নোট চেয়েছিলেন। আর সে কারণে তার বিরুদ্ধে ‘বঙ্গবন্ধুকে অবমাননায়’ আইসিটি আইনে মামলা করা হয়েছে। পাঁচ টাকার কয়েনে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি খোদাই করা রয়েছে। কিন্তু গ্রাহক যে পাঁচ টাকার কাগুজে নোট চেয়েছিলেন, তাতেও তো শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছাপা আছে। তাহলে লোকটি কিভাবে তাকে অবমাননা করলেন? অর্থাৎ হীরক রাজার মতো যা খুশি তাই করা হচ্ছে।
সরকারের দমনপীড়ন সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। নাগরিকদের আশ্রয়ের স্থানগুলো কেবলই সঙ্কীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত পূর্ববর্তী রায়ের আলোকে বিচার বিভাগকে পৃথক করতে চাইছেন, কিন্তু নিম্ন আদালত রয়ে গেছেন নির্বাহী বিভাগের অধীনে। আর তাই বিরোধী দলকে দমনপীড়নের জন্য সরকার নিম্ন আদালতকে ব্যবহার করেই যাচ্ছে। এ অবস্থায় কয়েনের বদলে কাগুজে নোট চাওয়ায় আইসিটি আইনে মামলাটি গ্রহণ করেছেন নিম্ন আদালত। অবশ্য সুপ্রিম কোর্ট এই অসাম্য দূর করার জন্য সম্প্রতি তৎপর হয়েছেন। কিন্তু সরকার নিম্ন আদালতকে কব্জায় রাখতে যেন বদ্ধপরিকর। জনগণ মনে করে, নির্বাহী বিভাগ উচ্চ আদালতের এখতিয়ার খর্ব করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আর সে কারণেই সমাজে মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু সাংবিধানিক দায়িত্ব হিসেবে বিচার বিভাগ মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথটি খোলা রাখার চেষ্টা করছে। সঙ্ঘাতের সূত্রপাত এখান থেকেই।
সরকার এতটাই অস্থির হয়ে গেছে যে, শুধু নিম্ন আদালতকে নিয়ন্ত্রণে রেখেই সন্তুষ্ট থাকতে পারছে না। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নিয়ন্ত্রণও যেন তাদের কব্জায় চাই। আর সে কারণেই তারা অনির্বাচিত এক সংসদে আইন পাস করেছিলেন, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা থাকবে সংসদের হাতে। এই আইন সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী বলে তা বাতিল করতে রিট আবেদন করা হয়েছিল। দীর্ঘ যুক্তিতর্ক শেষে হাইকোর্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছেন। সরকার হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করে। তার ওপরও দীর্ঘ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিচারপতিরা ছাড়াও আপিল বিভাগ তাদের সহায়তার জন্য ১০ জন অ্যামিকাস কিউরি বা ‘আদালতের বন্ধু’ নিয়োগ করেছিলেন। এরা সবাই দেশের বরেণ্য সিনিয়র আইনজীবী। আপিল বিভাগের সাতজন বিচারপতি ও অ্যামিকাস কিউরিদের ৯ জন একযোগে রায় দেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় যথার্থ।
এ কথা ঠিক, ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতেই ছিল। তখন এমন আইন ছিল না যে, কোনো সংসদ সদস্য তার বিবেকবুদ্ধিমতো স্বাধীনভাবে কোনো বিলের ওপর ভোট দিতে পারবেন না। সরকারি দলের সদস্য হয়েও সরকার আনীত কোনো বিলের বিপক্ষে তিনি ভোট দিতে পারতেন। বিরোধী দলের সদস্য হয়েও কোনো সংসদ সদস্য স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারতেন। পৃথিবীব্যাপী সংসদীয় গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে এটাই নিয়ম, কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি বা বিরোধী দল এক সময় তাদের সংসদ সদস্যদের ওপর আর আস্থা রাখতে পারছিলেন না। তাই আইন করা হয়, কোনো সংসদ সদস্য যদি নিজের দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তবে তার সংসদ সদস্যপদ আপনাআপনি বাতিল হয়ে যাবে। ফলে সংসদ সদস্যরা তাদের দলের নেতানেত্রীর হাতে ক্রীড়নক হয়ে পড়েন এবং সংসদ নেতা বা বিরোধীদলীয় নেতার একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। অর্থাৎ ধরে নেয়া যায়, কোনো বিচারপতিকে যদি সংসদ নেতা অপছন্দ করেন, তবে অন্যদের মনে যাই থাকুক না কেন, সেই বিচারপতি অপসারিত হয়ে যাবেন। এটা তো গণতান্ত্রিক বিধিবিধান হতে পারে না। ১৯৭২ সালের সংবিধানে এই বিধান ছিল না।
কিন্তু ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রদ করে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান একদলীয় বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) শাসনব্যবস্থা কায়েম করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দল তিনি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। ভিন্ন মত প্রকাশ করার সব পথ রুদ্ধ করে দেন। সব ক্ষমতা তার হাতে কেন্দ্রীভূত করা হয়। সংসদের বদলে বিচারপতিদের নিয়োগ ও অভিশংসনের ক্ষমতাও তিনি নিজ হাতে নিয়ে নেন। ১৯৭২ সালের সংবিধানের কবর তখনই রচিত হয়ে যায়। আর সেটা করেছিলেন মুজিব নিজেই। তিনি রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন বিনা নির্বাচনে। চতুর্থ সংশোধনীতে বলা হয়েছিল, ‘আইন প্রণয়নের অব্যবহিত পূর্বে যিনি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, তিনি রাষ্ট্রপতি থাকবেন না এবং রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হবে। শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হবেন এবং রাষ্ট্রপতির কার্যভার গ্রহণ করবেন এবং ওই আইন প্রবর্তন হলে, তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থাকবেন। যেন তিনি এই আইনের দ্বারা সংশোধিত সংবিধানের অধীনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন।’ অর্থাৎ সংসদের হাত থেকে বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির (শেখ মুজিবুর রহমান) হাতে চলে গিয়েছিল। তখন দেশে সামরিক শাসন ছিল না এবং কোনো সামরিক সরকার তা করেনি। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে সে ক্ষমতা প্রত্যর্পণ করেন। এ ব্যবস্থা করে তিনি বরং শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের ধারাবাহিকতাই রক্ষা করেছিলেন। অর্থাৎ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সুপারিশ করবেন আর চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেবেন রাষ্ট্রপতি।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। তাতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তথা আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষক্ষণও প্রকাশিত হয়েছে। আর সেটা প্রকাশের সাথে সাথে আওয়ামী লীগ উচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে একেবারে যেন যুদ্ধ ঘোষণা করে বসেছে। সর্বশেষ সংসদ অধিবেশনের আগের অধিবেশনে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যা বলা হয়েছে, তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অশ্রাব্য। তিনি রাজাকার এবং তার পাকিস্তানে চলে যাওয়া উচিত- এমন অনেক কথাই বলা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগের জবাবে উচ্চ আদালত তেমন কিছুই বলেননি। সরকারের দাবি, উচ্চ আদালত যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তা আমূল সংশোধন করতে হবে। উচ্চ আদালত সে সম্পর্কেও কিছু বলেননি। ইতোমধ্যে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তার পূর্বনির্ধারিত সফরে কানাডা গেছেন। যাওয়ার আগে বলেছেন যে, ‘বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছিলেন বলেই আমি প্রধান বিচারপতি হয়েছি।’
এতে তুষ্ট হয়নি আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা। অনেকেই মনে করেছিলেন, বিষয়টির হয়তো একটা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। কিন্তু এবার সংসদ অধিবেশনে দেখা গেল, কোনো নিষ্পত্তি হয়নি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আবারো প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে একেবারে হামলে পড়েন। সেখানে এই রায় বাতিলের জন্য আইনি পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। একই প্রস্তাবে ওই রায়ে জাতীয় সংসদ সম্পর্কে ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির ‘অসাংবিধানিক, আপত্তিকর, অপ্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ’ বাতিলের জন্যও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব পাস হয়েছে। পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী এই আলোচনায় প্রধান বিচারপতির কড়া সমালোচনা করে বলা হয়, তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। প্রধান বিচারপতির ‘অসাংবিধানিক, আপত্তিকর, অপ্রাসঙ্গিক’ বিষয়গুলো কী ছিল, তা নিয়ে খুব একটা কথা কেউ বলেননি। আসলে প্রধান বিচারপতি তার পর্যবেক্ষণে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে স্বাধীনতা অর্জনের কৃতিত্ব দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের মূল আপত্তির জায়গা সেটিই। তাদের মতে, পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী শেখ মুজিবুর রহমানের একক নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ রায় কোথা থেকে, কারা যেন তৈরি করে দিয়েছে, সেটা একটা প্রশ্ন।’ তবে এ কথাও নতুন নয়। এর আগে আওয়ামী লীগের প্রশ্নবিদ্ধ এমপি এবং প্রধানমন্ত্রীর একজন আত্মীয় বলেছিলেন, এ রায় প্রধান বিচারপতিকে লিখে দিয়েছেন একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক। এ দিকে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী হঠাৎ ‘গর্ত থেকে বের হয়ে’ বললেন, ‘আমি জানি এই রায় প্রধান বিচারপতিকে কে লিখে দিয়েছে। তবে বলব না।’ এ কথা বলে তিনি আবার চুপ হয়ে গেছেন। প্রধান বিচারপতি সারা জীবন নিজেই রায় লিখে এসেছেন। আর আজ এসে তাকে রায় লিখে দিতে হবে অন্য কাউকে- এটাও কি বিশ্বাস করতে হবে? প্রধানমন্ত্রী যেহেতু মুখ খুলেছেন, তাই সেই ঢালের নিচে দাঁড়িয়ে যার যা খুশি বলে যাচ্ছেন। তবে নির্বাহী প্রধানও যে আইনের ঊর্ধ্বে নন, এ কথা কেউ মনে রাখতে চাইছেন না। যা হোক, জাতীয় সংসদের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখনই গণতান্ত্রিক ধারা এগোতে থাকে, তখনই একটি বাধা এসে দাঁড়ায়। গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে হবে। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।’
অন্য সব অনুল্লেখযোগ্য ব্যক্তির কথা বাদ দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের কথায় আসা যায়। ষোড়শ সংশোধনী মামলার অ্যামিকাস কিউরিদের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, তারা কারা? ড. কামাল আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীবিরোধী। ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত নন। রোকনউদ্দিন মাহমুদ হাইকোর্টে এক কথা বলেছেন, আপিল বিভাগে আরেক কথা বলেছেন। মোহাম্মদ আলী, যিনি দৌড় আলী নামে পরিচিত; হাসান আরিফ, বিএনপি নিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল। ফিদা কামাল, সেনাসমর্থিত সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল। আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া বিএনপি আমলের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল। টি এইচ খান বিএনপির মন্ত্রী। তিনি প্রশ্ন রাখেন, নিরপেক্ষ বা আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কোনো আদালতের বন্ধু পাওয়া গেল না? বয়স হওয়ায় এই প্রভাবশালী মন্ত্রী অনেক কিছু ভুলতে বসেছেন বলেই মনে হয়। ড. কামাল হোসেন শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। পাকিস্তানের কারাগারেও মুক্তিযুদ্ধকালে আটক ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমান ড. কামালকে সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত করেছিলেন। আজ তিনি আদালতের বন্ধু হিসেবে এত অযোগ্য হয়ে গেলেন কেন?
ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ছিলেন শেখ মুজিবের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ১৯৭১ সালের মার্চের কঠিন সময়ে তিনিই শেখ মুজিবের দূত হিসেবে ইন্টার-কন্টিনেন্টাল হোটেল আর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবিরাম যোগাযোগ করেছেন। আজ তিনি কেন এতটা অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেলেন? এদের অস্বীকার করা শেখ মুজিবুর রহমানকেই অস্বীকার করার শামিল নয়?
সমস্যা অন্যত্রও আছে। সরকার নিজেই যদি আদালতের রায় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়, তবে কোনো অপরাধী আদালতের রায় মেনে না-ও নিতে পারে। হরিয়ানার ভণ্ড গুরু রাম রহিম সিংয়ের আছে পাঁচ কোটি সমর্থক আর বিপুল অর্থসম্পদ। ধর্ষণের দায়ে তার কারাদণ্ড হওয়ার ঘটনায় হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে দাঙ্গা বেধে যায়। তাতে প্রাণ হারান ৩৮ জন। এতেও আদালতের রায়ে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। রাম রহিম সিং ২০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে শুরু করেছেন। আমাদের বিবেচনায় যেকোনো মূল্যে আদালতের মর্যাদা সমুন্নত রাখা জরুরি।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
Discussion about this post