অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
স্পেনের আল হামরা প্রাসাদে এক সিরিয়ান অরিজিনের যুবক আজান দিতে শুরু করে। আযান দেয়ার ভিডিওটি অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যায়। আলহামরা প্রাসাদ গ্রেনাডার মুসলমান শাসকদের তৈরি ছিল।
যুবকটি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেছে, এই প্রস্তরের প্রাসাদ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আল্লাহর ডাক শোনেনি। তাই সে আজান দিতে থাকে।
স্পেন প্রায় আটশো বছর মুসলিম শাসনে ছিলো। ১৪৯২ সালে খ্রিস্টানরা স্পেন আবার দখল করে। মুসলমানদের বলপূর্বক উচ্ছেদ করে অথবা ধর্মান্তকরনে বাধ্য করে। মাত্র আট বছরে স্পেনের সব মুসলমানকে বিতাড়ণ করে স্পেনের খ্রিস্টানেরা।
মুসলমানেদের উপরে চালানো একটি এথিনিক ক্লিন্সিং এর ইতিহাস আবার স্মরণ করিয়ে দেয় এই আজান। ইউরোপ শুধু ইহুদীদের উপরেই নিষ্ঠুর আচরণ করেছে তাই নয়, মুসলমানেরাও একই নির্মম অত্যাচারে স্পেন থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। যদিও সেই ইতিহাস ইউরোপ কখনো বলেনা।
মধ্যযুগের সভ্যতা ও জ্ঞানের এক মহান অধ্যায় রচিত হয়েছিল আন্দালুসিয়া নামে খ্যাত স্পেন নগরীতে। জ্ঞান, ঐশ্বর্য, শিল্প ও বিত্ত-বৈভবের কোনো অভাব ছিলো না সেখানে। সেই বিত্ত-বৈভব, ঐশ্বর্য ও শিল্প-জ্ঞান দিয়েই নির্মিত হয়েছিলো ইসলামের স্থাপত্ব গৌরব আল-হামরা।
হাজার বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা জমকালো সেই প্রাসাদ তারই সাক্ষ্য বহন করছে। হিজরি চতুর্থ শতাব্দি মোতাবিক খ্রিস্টীয় ১০ শতকে প্রথম আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ওরফে মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন নসর ইবনুল আহমার [১২৩৮-১২৭৩ খ্রিস্টাব্দ] তার বসবাস ও রাষ্ট্রীয় কার্য পরিচালনার জন্য নির্মাণ করেন এটি। মাদ্রিদের ২৬৭ মাইল [৪৩০ কি. মি.] দক্ষিণে দারু নদীর তীরে ছায়াঘেরা সবুজে ঢাকা এক পাহাড়ে অবস্থিত এটি। পরবর্তীতে তার যোগ্য উত্তরসূরীগণ ৩০০ বছর ধরে তা সম্প্রসারণ ও সংস্কার করে এর সৌন্দর্য ও শৌর্য-বীর্য আরও মোহময় করে তোলেন। অল্প দিনেই প্রাসাদের দ্যুতি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে।
মধ্যযুগীয় আরব সংস্কৃতি ও শাসনব্যবস্থার সুদৃঢ় ভিত এবং সুন্দরের প্রতীক ছিলো আল হামরা। এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য মন্ত্রমুগ্ধ ও মায়াগ্রস্থ করে যে কাউকেই কাছে টেনে নিবে। এমনটাই স্বীকৃতি দিয়েছেন স্পেনিশ পণ্ডিতগণ। পশ্চিমের কলা ও স্থাপত্ববিদদের ভাষায়- ‘এটি স্থাপত্বকলার বিস্ময়কর প্রায়গিক জ্ঞান।’
স্পেনের কলাবিদগণ একে ১৯৫২ সাল থেকে আল-হামরা মিনিফেস্ট্রু নামে আখ্যায়িত করে আসছেন এবং তাদের পাঠ্যপুস্তকে বাধ্যতামূলক পাঠ্য গণ্য করেছেন। ইউনেস্ক ১৯৯৪ সালে বিশ^ ঐতিহ্য ঘোষণা দিয়েছেএকে। আল হামরার চারপাশের দেয়ালের পরিধি দুই কিলোমিটার । এর অবকাঠামো ও নির্মাণ শৈলী স্বর্ণ-রৌপ্য খচিত এবং মূল্যবান কংক্রিট-কঙ্কর সমৃদ্ধ। প্রাসাদের প্রতিটি ভবন ও প্রতিটি কক্ষে স্বর্ণ ও পাথরে খোদাই করা আরবি ক্যালিওগ্রাফির অদ্বিতীয় সব শিল্পকর্মের ছাপ।
কুরআন, হাদিস, আরবি কবিতা ও উপদেশ সুশোভিত হয়ে আছে এখানকার প্রতিটি খুঁটি, দেয়াল, কক্ষ ও ভবনে। ঐশ্বরিক হাত যেনো তার সকল সৌন্দর্য এখানেই ঢেলে দিয়েছেন। জগতবাসীর কাছে এটি ছিলো শিল্প ও সৌন্দর্যের আধার। কেবল প্রাসাদের দেয়াল আর মসজিদের গম্বুজ চিত্রিত করে রাখলেই যে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায় না তারও ঐতিহাসিক প্রমাণ স্পেনের শাসকগণ।
Discussion about this post