আভ্যান্তরীণ কারণে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেবেন না মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও নেত্রী অং সান সুচি। তার পরিবর্তে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরি ভ্যান থিও। তিনিই জাতিসংঘের কাছে মিয়ানমার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করবেন।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইউ কাইওয়া জেয়া অনলাইন দ্য ইরাবতীকে এসব কথা বলেছেন বলে জানানো হয়েছে। তবে এ খবরটি নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এতে বলা হয়েছে, বুধবার অং সান সুচির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেটির (এনএলডি) একজন মুখপাত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ সম্মেলনে যোগ দেবেন না সুচি। এক্ষেত্রে রাখাইন সহিংসতাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু এটা পরিস্কার বোঝা যায়, সুচির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিলে তাকে এর মুখোমুখি হতে হবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ, তুরস্ক রোহিঙ্গা ইস্যুটি ওই অধিবেশনে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। ফলে সুচি সহজেই আঁচ করতে পারছেন ওই সম্মেলনে যাওয়া মানে আগুনের মুখে পড়া। সেখানে তাকে তীব্রভাবে আক্রমণ করা হতে পারে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাকে দেয়া শান্তিতে নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেয়ার জোর দাবি উঠেছে, যদিও তা কেড়ে নেয়ার কোনো রীতি নেই। গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে মিয়ানমারের নেত্রী হিসেবে প্রথম বক্তব্য রেখেছিলেন সুচি। তিনি তখন মুসলিম সংখ্যালঘুদের নিয়ে যে সঙ্কট চলছে তা সমাধানে তার সরকারের প্রচেষ্টার পক্ষে কথা বলেছিলেন। এ সমস্যা তিনি সমাধান করতে তো পারেনই নি, উল্টো তাকে যেকোনো সময়ের চেয়ে বাড়িয়ে দিয়েছেন বহুগুন। এর ফলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন তিন লাখ ৭০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। এসব নিয়ে তিনি প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে পারেন, বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন। এ জন্যই কি তিনি এবার যোগ দিচ্ছেন না!
এমনটা উড়িয়ে দিয়েছেন তার দলীয় মুখপাত্র অং শিন। তিনি বলেছেন, অং সান সুচি সমালোচনা বা সমস্যা মোকাবিলা করতে কখনো ভয় পান না। সম্ভবত তিনি দেশে সমস্যা নিয়ে বেশি চাপে আছেন। এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, সুচির যোগ দেয়া নিশ্চিত নয়। দ্য ইরাবতীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয় ইউ কাইওয়া জেয়া বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্টেট কাউন্সেলর (অং সান সুচি)-এর সামনে রয়েছে অভ্যন্তরীণ ইস্যু। এগুলোতে মনোযোগ দেয়া জরুরি। তার পরিবর্তে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। তার সঙ্গে থাকবেন মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইউ থাউং তুন।
ওদিকে ১২ই সেপ্টেম্বর মিয়ানমার সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালকে উদ্ধৃত করে মিয়ানমার টাইমস লিখেছিল, জাতিসংঘের বৈঠকে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচির যোগ দেয়া নিশ্চিত নয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের মুখপাত্র সোমবার বলেছেন, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে সাম্প্রতিক সংঘাতের পর দেশে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে অং সান সুচির যুক্তরাষ্ট্র যাওয়া অনিশ্চিত।
রোববার দ্য মিয়ানমার টাইমসকে পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইউ কাইও জায়ার বলেছেন, (সুচির) ওই সফরের সম্ভাবনা ৫০-৫০। এতে বলা হয়, গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়, এই সহিংসতা ছড়িয়ে দিতে পারে জাতিগত রাখাইন অথবা মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ। এতে দাবি করা হয়, রোববার ৫০ জনের মতো যুবক মুখোশ পরে মাগওয়ে রিজিওনে তাউং ডউন গাই এলাকায় বেশ কিছু মুসলিমের বাড়ি ধ্বংস করে দিয়েছে। এ অভিযোগে পুলিশ ৫ জনকে আটক করেছে।
সরকারের ইনফরমেশন কমিটি অনুযায়ী, সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জনগণকে অতিরিক্ত নজরদারি করতে অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ইনফরমেশন কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় সম্প্রদায়ই মানুষের মাঝে পীড়া বাড়ানোর জন্য সহিংসতা ঘটাতে পারে।
ইউ কাইও জায়ার বলেছেন, স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচির নিউ ইয়র্কে যাওয়ার শিডিউল ছিল পূর্ব নির্ধারিত। কিন্তু তার সেই সফর বিঘ্নিত হয়েছে বর্তমান পরিস্থিতিতে। ওদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মহাপরিচালক ইউ কাইও মোয়ে তুন বলেছেন, জাতিসংঘের সফর নিয়ে তারা বিস্তারত জানাবেন না। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ ওঠে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তখন রাখাইন পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে আমরা প্রস্তুত।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের শিডিউল অনুয়ায়ী, জেনেভাতেও অনুষ্ঠিত হবে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের বৈঠক। সেখানে রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে মৌখিক রিপোর্ট জমা দেয়ার কথা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের।
সূত্র: মানবজমিন
Discussion about this post