অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান সব সময়ই নেতিবাচক। আওয়ামী লীগের বর্তমান শাসনামলে কয়েকবার রাখাইনে মিয়ানমার বাহিনী হত্যা-নির্যাতন চালালে রোহিঙ্গারা প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছে। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসেও সুচির বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা নৌকায় উঠে সাগরে ভেসেছে। চেষ্টা করেও বাংলাদেশে সীমান্তে তাদের নৌকা ভিড়াতে পারেনি।
মিয়ানমার বাহিনী নদীতে এসেও গুলি করে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদেরকে হত্যা করেছে। নাফ নদীতে নৌকা ডুবিয়ে দিয়েছে। কত রোঙ্গিার লাশ যে সাগরে ভেসে গেছে তার হিসাব নেই। এমন কঠিন সময়েও বাংলাদেশ সরকার অর্থাৎ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদেরকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়নি।
আর রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের আরেকটি অভিযোগ হলো জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছিল। পার্বত্য অঞ্চল দখলের জন্য মীর কাসেম আলী রোহিঙ্গাদের দিয়ে একটি ঘাটি তৈরির চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের বুদ্ধিজীবীদের সেই অভিযোগ এখনও অব্যাহত আছে।
সেদিন শাহরিয়ার কবির বলেছেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদেরকে জামায়াত-শিবির জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তাদেরকে দলে ঢুকানোর চেষ্টা করছে।
বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননও বলেছেন, পাকিস্তানের আইএসআই রোহিঙ্গাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। সরকারের মন্ত্রীরাও প্রতিদিন বলছেন, রোহিঙ্গাদেরকে জায়গা দেয়া সম্ভব না। সরকারের কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদেরকে সীমান্ত থেকে কঠিন বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে বিজিবি। মিয়ানমারের নরপুশুদের হাত থেকে বাঁচতে এসে যারা আশ্রয় না পেয়ে আবার চলে গেছেন, হয়তো তাদের অনেকে এখন বেঁচে নেই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। এজন্য তাদেরকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব না। সীমান্ত খুলে দেয়ার জন্য দেশি-বিদেশিদের পক্ষ থেকে দাবি জানালেও সরকার এসবকে পাত্তাই দেয়নি।
কিন্তু, হঠাৎ করেই রোববার প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন যে তিনি মঙ্গলবার কক্সবাজার যাবেন রোহিঙ্গাদের খবর নিতে। আর তার এই ঘোষণা দেয়ার পরই পরিস্থিতি পুরোই পাল্টে গেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও প্রধানমন্ত্রীর মানবিকতার স্লোগান প্রচারে নেমে গেছেন। ইতিমধ্যে সোমবার ওবায়দুল কাদেরসহ দলের কয়েকজন নেতা উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প পরিদর্শন করে তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে আসছেন।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, অক্সফোর্ড ও কলম্বিয়া থেকে একটি সিগন্যাল আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তার ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। আর সেটা হলো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে একটি নোবেল পাওয়ার চেষ্টা। যার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় ও তার কয়েকজন উপদেষ্টা দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক কয়েকটি মহলে ধরণা দিয়ে আসছিল। এবার তারা রোহিঙ্গা ইস্যুটাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে চাচ্ছে।
জানা গেছে, শেখ হাসিনাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করার প্রস্তাব করেছেন অক্সপিসের দুজন শিক্ষাবিদ ড. লিজ কারমাইকেল, ড. অ্যান্ড্রু গোসলার, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপক ড. অলডো সিভিকো, ড. দীপালী মুখোপাধ্যায়, ড. জুডিথ ম্যাটলফ, হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হাভার্ড ডিভাইনিটি স্কুলের ডিন ডেভিড এন হেম্পটন ও অষ্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ইন ক্যানবেরার ড. হেনরিক উরডাল।
তারা মনে করেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, তা সারা বিশ্বের জন্য এক অনুকরণীয় বার্তা। তাঁদের মতে, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো যখন শরণার্থী নিয়ে নানা সমস্যায় জর্জরিত, তখন বাংলাদেশ দেখাল কীভাবে এই সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। তারা শেখ হাসিনাকে ‘মানবিক বিশ্বের প্রধান নেতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। নোবেল শান্তি জয়ী অং সান সুচি আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যক্রম পাশপাশি মূল্যায়ন করলেই বোঝা যায় বিশ্ব শান্তির নেতা কে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই পার্বত্য অঞ্চলটাকে অশান্ত করে বাংলাদেশ শান্তি প্রতিষ্ঠার নাম করে বাংলাদেশে ঢুকার চেষ্টা করছে। আমেরিকার ইন্ধনেই সুচি কিছু দিন পর পর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা-নির্যাতন শুরু করে। তাদের টার্গেট এসব করে রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশের পাবর্ত্য এলাকায় নিয়ে আসা। ড. ইউনূছকে তারা নোবেল দিয়েছিল বড় আশা করে। কিন্তু তা আর হয়নি। এবার তারা বেছে নিয়েছে শেখ হাসিনাকে। নোবেল পুরস্কার নরওয়ের প্রতিষ্ঠান দিলেও আমেরিকার অপছন্দের কাউকে তারা কখনো নোবেল দেয়নি।
আওয়ামী লীগ নেতারাও বেশ কয়েক বছর ধরে শেখ হাসিনার নোবেলের জন্য লবিং করে আসছে। রোহিঙ্গা ইস্যুটাকে কেন্দ্র করে তারা সর্বশেষ ও সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো শুরু করেছে।
জানা গেছে, শেখ হাসিনাকে যদি নোবেল দেয়া হয় তাহলে, রোহিঙ্গাদেরকে স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থাও তিনি করে দেবেন। সেটা নির্ভর করবে তার নোবেল পাওয়ার উপর। এছাড়া, আওয়ামী লীগ ড. ইউনূছকে দেখিয়ে দিতে চান যে শেখ হাসিনাও তার মতো জনপ্রিয় একজন নেতা।
মূলত মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদেরকে সরকার আশ্রয় দিচ্ছে না। শেখ হাসিনা তার নিজের স্বার্থে তাদেরকে আশ্রয় দিচ্ছে। তার দরকার এখন একটি নোবেল। তার টার্গেট, তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান। তাই, মঙ্গলবার কক্সবাজার গিয়ে তিনি পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা দিতে পারেন।
Discussion about this post