অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মিয়ানমার সরকার ও জান্তাদের পৈশাচিক নির্যাতন ও বর্বরতার শিকার হয়ে প্রতিদিনই বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ঢল নামছে। জাতিসংঘের হিসেবমতে গত কয়েকদিনে বাংলাদেশে প্রায় ২ লক্ষ ৭৯ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম শরনার্থী আশ্রয় নিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ব্যক্তিগতভাবে এবং বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে মিয়ানমার থেকে আসা এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে আর্থিক সহায়তা ও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।
কিন্তু হঠাৎ করেই সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণের কথা বলে সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান-সংগঠনকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে খোলা ‘Humanitarian Assistance to the Myanmar Citizen Illegally Migrated (Rohinga) নামের সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে সেই অর্থ জমা দিতে হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের ‘দুর্যোগ ও ত্রাণ শাখায়’ আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ত্রাণসামগ্রী জমা দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, এই নিয়মের মূলে রয়েছে ত্রাণ সহায়তার আড়ালে কেউ যেন কোন রাজনৈতিক বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করতে না পারে সেই পরিস্থিতি তৈরি করা। পাশাপাশি বলা হচ্ছে- ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য এর বদলে সরকার একটি সমন্বিত ও নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে ত্রাণ বিতরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কিন্তু সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা দানকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলোর মধ্যে ত্রাণ সুষ্ঠুভাবে বিতরণ হবে কিনা সেটা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করতে গেলে দলীয় নেতাকর্মীদের এতে প্রভাব খাটানোর ব্যপক সুযোগ রয়েছে। এতে করে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা দেশি বিদেশি ত্রাণসমূহ আত্মসাতের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদেরকে ত্রাণ আত্মসাতের সুযোগ তৈরি করে দিতেই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত অনুসারে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান-সংগঠনের দেওয়া ত্রাণসামগ্রী ও আর্থিক সহায়তা কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বাধীন জেলা কমিটি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (উখিয়া ও টেকনাফ) নেতৃত্বাধীন উপজেলা কমিটি রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণ করবে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের জন্য মালয়েশিয়ার দাতা সংস্থা থেকে ত্রাণ এনে আওয়ামী লীগ দলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী নিজের নির্বাচনী এলাকা সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় বিতরণ করেছেন বলে পত্রিকায় খবর এসেছে।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ার দাতা সংস্থা ‘কেলাপুত্রা-১’ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য আনা ৭০ কোটি টাকার ত্রাণসামগ্রীর মধ্য থেকে ২০ কোটি টাকার ত্রাণসামগ্রী সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার দরিদ্র জনগণের মধ্যে সংসদ সদস্য নদভীর প্রতিষ্ঠিত আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের ব্যানারে বিতরণ করেন সংসদ সদস্য নিজেই। ত্রাণ বিতরণের সময় দাতা সংস্থার পক্ষের একটি ব্যানারও টাঙানো হয় অনুষ্ঠানস্থলে।
গত মাসের শেষ সপ্তাহে এই ত্রাণসামগ্রী বিতরণের সময় অনুষ্ঠানস্থলে টাঙানো মালয়েশিয়ান দাতা সংস্থার ব্যানারে ইংরেজিতে লেখা রোহিঙ্গা ও মালয়েশিয়া শব্দগুলো দেখে স্থানীয়রা বিস্মিত হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে।
আওয়ামী লীগ এমপির এমন কর্মকাণ্ড ও ছাত্রলীগ যুবলীগ কর্তৃক বন্যার্তদের ত্রাণ লুটপাটের দৃষ্টান্ত সামনে রেখে রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে ত্রাণ দাতারা সরকারি ত্রাণ বিতরণ নিয়ে ব্যপক শঙ্কায় আছেন। তারা আশঙ্কা করছেন ব্যক্তি ও সংগঠনের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ নিষিদ্ধ করায় রোহিঙ্গাদের উপর আরো দুর্দশা নেমে আসবে। কারন দেশ বিদেশ ও বিভিন্ন সংগঠন থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ আসা সত্ত্বেও তারা ঠিকমত ত্রাণ পাবে না। সরকার দলীয় লোকজন এসব ত্রাণ আত্মসাত করবে। যা এমপি নদভী আগেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
অপরদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও ইসলামি দলগুলো রোহিঙ্গাদের সহায়তায় এগিয়ে যাওয়াটা আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে ভালো না লাগাটাও ব্যক্তি-সংগঠনের ব্যানারে ত্রাণ বিতরণ নিষিদ্ধের একটি কারণ বলে মনে করেণ অনেকেই। রাজনৈতিক ভাবমূর্তির জন্য অন্য ব্যক্তি আর সংগঠনকে নিজস্ব ব্যনারে ত্রাণ বিতরণ নিষিদ্ধ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এই সিদ্ধান্ত দলীয় নেতাকর্মীদের ত্রাণ লুটপাটের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। যা নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত অসহায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের দুর্দশা আরো বাড়বে বলেই মনে করছেন সচেতন মানুষজন।
Discussion about this post