অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর গণহত্যা-নির্যাতন ও তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়ার প্রতিবাদে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান। ইতিমধ্যে তার স্ত্রী এমিনি এরদোগান বাংলাদেশে এসে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিজের চোখে দেখে গেছেন। নির্যাতিত অসহায় নারী-পুরুষ ও শিশুদের মাঝে তিনি ত্রাণও বিতরণ করেছেন।
অপরদিকে, রাখাইনে অবস্থানরত নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য ১ হাজার টন খাদ্য সামগ্রী নিয়ে তুরস্কের একটি ত্রাণবাহী জাহাজ বৃহস্পতিবার সকালে মিয়ানমার পৌঁছেছে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সাধারণ মানুষ মনে করছেন, সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর মিয়ানমার বাহিনীর পৈশাচিক হত্যা-নির্যাতনের পরও যখন আরব সাম্রাজ্যের রাজা-বাদশারা নাকে তেল ঢেলে ঘুমাচ্ছেন, তখন রোহিঙ্গা মুসলিমদের এ সংকট মুহূর্তে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান মানবিকতার এক পরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এরদোগানের উদ্যোগ ও তার স্ত্রীর চলে আসা সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝেই প্রশংসিত হয়েছে।
কিন্তু, রোহিঙ্গা ইস্যুতে এরদোগানের এসব তৎপরতা ও তার স্ত্রী বাংলাদেশে এসে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোকে কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছে না বামপন্থি কিছু পাতি সাংবাদিক। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সাংবাদিক প্রবাস আমিন ও আব্দুন নুর তুষার। তারা নিজেদের ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এরদোগানের তৎপরতা নিয়ে চরম বিষোদগার করছেন। যদিও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার সফরে গিয়ে সুচির এই গণহত্যাকে সমর্থন জানালেও এনিয়ে তারা কিছুই বলছে না।
সাংবাদিক প্রভাস আমিন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘মানবিকতা, মানবাধিকার বিষয়গুলো আসলে আপেক্ষিক। তুরস্কের ফার্স্ট লেডি টেকনাফে গিয়ে রোহিঙ্গাদের দুঃখে চোখের জল ফেলেন। আর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট যুদ্ধাপরাধীদের জন্য কাঁদেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে ফোন করেন। লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বছরের পর বছর আশ্রয় দেন শেখ হাসিনা, আর টেলিফোন কূটনীতি করে মুসলিম বিশ্বের নেতা হতে চান এরদোগান!
আব্দুন নুর তুষার তার ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গ্যাদের দেখতে এরদোগান এর বৌ এসেছেন ! তিনি তাদের দেখে কেঁদেছেন ! এগুলা কোনো সংবাদ ? তুরস্ক জঙ্গিবাদের অন্যতম ব্রিডিং গ্রাউন্ড ! দুনিয়া জুড়ে তরুণরা তুরস্ক হয়ে আই এস এ যেত ! যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে তুরস্কের আহাজারির কথা মনে আছে ? এখানে কান্নাকাটি না করে এরদোগান কে বলেন জাহাজে করে কিছু মানুষকে তুরস্কে নিয়ে যেতে, তখনি কান্না থেমে যাবে ! বাংলাদেশ অনেক মানবিক , ত্রিশ বছর ধরে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি, দুনিয়া চুপ করে আছে !
তাদের এই স্ট্যাটাস নিয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বমহলে চলছে কঠোর সমালোচনা। কেউ কেউ তাদেরকে মিয়ানমার বাহিনীর দোসর বলেও আখ্যা দিচ্ছেন। আবার অনেকে বলছে ভারতের দালাল। মিয়ানমারের গণহত্যায় তাদের মদদ আছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট রাজনীতিক বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুল কারো নাম উল্লেখ না করে শুক্রবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ‘তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের স্ত্রী এবং দেশটির কয়েকজন মন্ত্রী বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। এটাই মানবতা, এটাই উদারতা। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের গনহত্যাকারী শাসকদের পাশে দাড়িয়েছেন। এটা অমানবিকতা, এটাই সংখ্যালঘুদের প্রতি বিদ্বেষ! ‘এই নির্জলা সত্যি কথাটা যাদের বুঝতে অসুবিধা হয়-তাদের হৃদয়, মস্তিস্ক, অনুভূতি সবকিছু বিষাক্ত হয়ে গেছে সম্ভবত।’
এদিকে ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশনের সাংবাদিক কামরুজ্জামান বাবলু শুক্রবার রাত ৮ টার দিকে ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এরদোগানের সমালোচনাকারীদের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘যেসব কুলাঙ্গারের আন্ডা বাচ্চারা এরদোয়ানের স্ত্রীর সমালোচনা করছে, তারা আসলে কোনো মায়ের কোলে পয়দা হয়ছে কিনা এ প্রশ্ন করাই যায়। আরে জানোরের বাচ্চারা, ওই মহিলাতো শত মাইল দূর থেকে এসে অভিনয় (তোদের ভাষায়) হলেও করে দেখিয়েছে, কিন্তু তোরা হাইওয়ানের বাচ্চারা কি করছিস এত কাছে থেকে? কবে তোরা মানুষ হবি?
Discussion about this post