অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পরিবারের একজন সদস্য। শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ঘটনায় তার পিতা নিহত হয়। তিনি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব। ১৫৪ জনের মধ্যে তিনিও একজন বিনাভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। রাজনৈতিক কর্মকা-ে প্রকাশ্যে তার তৎপরতা লক্ষ্য করা না গেলেও তিনি অনেক কাজেরই নাটেরগুরু বলে জানা গেছে।
তাপসের বিরুদ্ধে অনেক গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। বিশেষ করে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে তাপসের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
জানা গেছে, তাপস ঢাকা-১২ আসনে নির্বাচন করতে গিয়ে বিডিআর এলাকায় ৫ হাজার ভোট প্রাপ্তির লক্ষে তৎকালীন ৪৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি তোরাব আলী’র মাধ্যমে বিডিআরের সাথে যোগাযোগ করে। তাপসকে নিশ্চয়তা দেয়া হয় যে, বিডিআরের সকল সদস্য নৌকায় ভোট দিবে। তার বদলে তাপস সম্মতি দিয়েছিল বিডিআরের দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার ব্যবস্থা করবে। তাপসের বাসা স্কাই ষ্টারে বিডিআরের প্রতিনিধিরা এ নিয়ে একাধিক বৈঠক করে। এমনকি দাবি দাওয়া পূরণ না হওয়ায় পিলখানা বিদ্রোহের আগেরদিন তাপসকে বিদ্রোহের কথা জানানো হয়েছিল। তাপস তাতে সম্মতি দেয় এবং তাদের সার্বিক সহায়তা দেয়ার কথা বলে। পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তাপসও এই ষড়যন্ত্রকে কার্যকর হিসাবে মনে করে। ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ফজলে নুর তাপসের ধানমন্ডিস্থ বাসায় প্রায় ২৪ জন বিডিআর হত্যাকারী চূড়ান্ত শপথ নেয়। তোরাব আলী ও তার ছেলে লেদার লিটন পরিকল্পনাকারীদেরকে গোপন আস্তানা ও যাবতীয় সহায়তা প্রদান করে। বিডিআর বিদ্রোহের দিন বিকালে তাপসের ঘোষণা প্রচার করা হয়, যাতে করে পিলখানার ৩ মাইল এলাকার অধিবাসীরা দূরে সরে যান। আসলে এর মাধ্যমে খুনীদের নিরাপদে পার করার জন্য সেফ প্যাসেজ তৈরি করা হয়েছিল। এরপর বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে সেনা তদন্ত এড়াতে তাপস কিছুদিন গা ঢাকাও দেয় বিদেশে।
সম্প্রতি বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগ ও রায় পরিবর্তনের যে আন্দোলন চলচে এতে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের ব্যানারে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস। তিনি প্রধান বিচারপতিকে ২৪ আগস্টের মধ্যে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যথায় তার অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের কারণে প্রধান বিচারপতির ওপর ফজলে নুর তাপস এত ক্ষুব্ধ হননি। তার ক্ষোভের পেছনে ব্যক্তিগত স্বার্থসংশ্লিষ্টতার বিষয় রয়েছে।
কিছু দিন আগে উচ্চ আদালতে কয়েকজন বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ওই সময় তাপস তার পরিচিত কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন তাদেরকে বিচারপতি করার শর্তে। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার কাছে এসব নামের প্রস্তাবও করেছিলেন তাপস। কিন্তু বেঁকে বসেন প্রধান বিচারপতি। একটি পর্যায়ে এসে বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে যায়। এরপর থেকেই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে ফজলে নুর তাপসের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভ থেকেই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে পুঁজি করে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামছেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস।
Discussion about this post