‘চুতুর পাশে বানের পানি, এর মধ্যে মোর পোয়াতি ছাওয়া কোনার প্যাটের বিষ ওঠে। মাথায় আকাশ ভাঙ্গি পইল। এ্যালা কী করি। চারদিকে অন্ধকার। ছাওয়াকোনার কান্নাকাটি দেখি সোয়ামী (স্বামী) নাওয়োত করি নাইকাটা মলিহা (ধাত্রী) আনে বাড়িত। পরে নাওয়োত মোর নাতির জন্ম হয়।’
এসব কথা জানান কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার ব্রক্ষপুত্র নদের দক্ষিণ বালাডোবা চরের নব্য প্রসূতি মনোয়ারা বেগমের মা আকলিমা বেগম।
গ্রামের চারদিকে বন্যার থৈ থৈ পানি। এর মাঝে বৃহস্পতিবার আবু চান মিয়ার বড় মেয়ে আনোয়ারা বেগমের কোল আলো করে আসে শিশু। নাম রাখা হয় আলআমিন।
আবু চান মিয়া জানান, এর আগের দিন বুধবার ঘরে পানি ঢুকে। পানি বাড়তে বাড়তে হয় বুক সমান। প্রসব বেদনা সন্ধ্যায় ওঠে। নিরুপায় হয়ে রাতেই অনেক অনুরোধ করে স্থানীয় এক ধাত্রীর সহায়তায় নৌকার মধ্যে এ শিশুর জন্ম হয়। ঘরে খাবার নেই। চেয়ারম্যান মেম্বার কেউ খোঁজ নেয় না।
তিনি জানান, ২ বছর আগে রংপুরের পারবতীপুরে মাহবুবার রহমানের সঙ্গে আনোয়ারা বেগমের বিয়ে হয়। দিনমজুর জামাই ৮ মাস পোয়াতি মেয়েটাকে আমাদের বাড়িতে রেখে চলে যায়। আরও ২ মেয়ে মনোয়ারা ও সামিনা এবং ছেলে আলাউদ্দিনকে নিয়ে মাছ ধরে কোনো রকমে সংসার চলে। এর মাঝে বড় মেয়ের সন্তান হওয়ায় বিপাকে পড়েছি।
আবু চান মিয়া জানান, বুকের দুধ না পেয়ে কষ্টে পরেছে শিশুটি। প্রতিবেশীর ছাগলের দুধ দুদিন আনি। বন্যা ভয়াবহ হওয়ায় এখন তারা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছে। আমরা পড়ে আছি বাড়ির মায়ায়। খুব কষ্ট। দেখার কেউ নেই।
আনোয়ারা বেগমের বয়স আঠার ছুঁই ছুঁই। এর মাঝে মা হয়েছে সে। সন্তানের নাম রেখেছে আল আমিন। শুক্রবার শিশুটির বয়স হয়েছে ৯ দিন।
লজ্জায় মাথানত করে কথা বলে আনোয়ারা। জানায়, ছেলে খেতে পারছে না এটাই তার বড় কষ্ট। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে স্বামীকে এখনও খবর দিতে পারেনি সে।
সূত্র: যুগান্তর
Discussion about this post