অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে এবার সরকারের পক্ষে মাঠে নেমেছেন বিতর্কিত সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। বুধবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বিচার বিভাগকে কটাক্ষ করে বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন।
খায়রুল হক বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় পূর্বপরিকল্পিত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অপরিপক্ক। রায়ের পর্যবেক্ষণে অতিমাত্রায় রাজনৈতিক মন্তব্য করা হয়েছে। এ রায়ের ফলে আমরা গণপ্রজাতন্ত্রের বদলে বিচারকদের প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়েছি। এছাড়াও তিনি আরও বেশ কিছু সমালোচনা করেছেন।
খায়রুল হক একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি হওয়া সত্ত্বেও বর্তমান বিচারপতিদের রায় নিয়ে কটাক্ষ করায় এনিয়ে সমালোচনায় পড়েছেন তিনি। রাজনীতি বিশ্লেষক ও আইন বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ তার এমন বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে সমালোচনা করায় এখন কেয়ারটেকার সরকার বাতিল করে খায়রুল হকের দেয়া সেই রায়ের বিষয়টিও আবার আলোচনায় এসেছে। একটি সিনেমা হলের রায়কে কেন্দ্র করে খায়রুল হক সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেছিলেন। তখন কেয়ারটেকার সরকার নিয়ে আপিল শুনানিতে যে কয়জন আইন বিশেষজ্ঞের মতামত নেয়া হয়েছিল, তাদের অধিকাংশই তখন নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার থাকার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়া জনগণও ছিল কেয়ারটেকার সরকার রাখার পক্ষে। কিন্তু, বিচারপতি খায়রুল হক আইন বিশেষজ্ঞ ও জনমতকে উপেক্ষা করে কেয়ারটেকার সরকার বাতিল করেছিলেন।
২০ লাখ টাকার বিনিময়ে খায়রুল হক কেয়ারটেকার সরকার বাতিলের রায় দিয়েছিলেন বলেও তখন অভিযোগ উঠেছিল। বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে খায়রুল হক জনপ্রিয় কেয়ারটেকার সরকার বাতিল করেছেন।
এছাড়া অবসরে যাওয়ার পর সরকার তাকে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। জানা গেছে, কেয়ারটেকার সরকার বাতিল করায় সরকার তাকে পুরস্কার হিসেবে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. আসিফ নজরুল তার ব্যাক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে খায়রুল হককে উদ্দেশ্যে করে বলেছেন, ‘একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি হয়ে তিনি বর্তমান প্রধান বিচারপতিকে কটাক্ষ করেছেন, তার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তার অভিযোগ বর্তমান প্রধান বিচারপতি ষষ্ঠদশ সংশোধনী মামলায় অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য দিয়েছেন। অথচ তিনি নিজে তার বিভিন্ন রায়ে বহু অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করেছেন, বহু রাজনৈতিক বিষয়ে অযাচিত বক্তব্য দিয়েছেন। ষষ্ঠদশ সংশোধনী মামলায় আপীলেট ডিভিশনের সাতজন বিচারপতি সর্বসম্মতিতে রায় দিয়েছেন। এ রায়কে বিচারপতি খায়রুল হক পূর্বপরিকল্পিত ও অগনতান্ত্রিক বলেছেন। এত বড় আদালত অবমাননামূলক বক্তব্য একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি কিভাবে দিলেন?’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে খায়রুল হক কেয়ারটেকার সরকার বাতিল করেছিলেন। এবার কত টাকা পেয়ে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন?
কেউ কেউ বলছেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের সমালোচনার আগে খায়রুল হক তার অতীত কৃতকর্মের কথা একবার স্মরণ করা দরকার ছিল। তিনি এত সহজেই অতীতকে ভুলে গেছেন? তিনিতো প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের কথামত কাজ করেছেন, ন্যয় বিচার করেননি। নইলে জনগনের কাঙ্খিত ও জনপ্রিয় কেয়াটেকার সরকার কেবল একটিমাত্র দলের বিরোধীতায় বাতিল করতেন না। এখনো সেই দালেরই পক্ষপাতিত্ব করে যাচ্ছেন তিনি। রায় নিয়ে কথা বলা খায়রুল হকের জন্য অনৈতিক। বিচার বিভাগকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়ে তিনি আজ চরমভাবে আদালত অবমাননা করেছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আদালতের এই ঐতিহাসিক রায় যখন সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছিলো, দেশের অবিচার, একনায়কতন্ত্র, একদলীয় শাসনের অন্ধকার রুপ যখন আদালতের পর্যালোচনায় উঠে এসেছিলো, মানুষ যখন আদালতের প্রতি আস্থা অর্জন করতে শুরু করেছিলো, ঠিক তখনই সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে একজন বিতর্কিত খায়রুল হক আদালতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আদালতকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন।
Discussion about this post