বর্তমান সংসদ ন্যায়সঙ্গতভাবে জনগণের ভোটে গঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘যারা বর্তমান সংসদকে ইম-ম্যাচিউরড বলেন, তারাই ইম-ম্যাচিউরড। যারা বর্তমানে বিচারকের আসনে বসেছেন, তারা ইম-ম্যাচিউরড। নির্বাচনের পর সারা বিশ্ব আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। সারা বিশ্বের সংসদ এই সংসদকে বৈধতা দিয়েছে। এই সংসদ নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার তাদের নেই।’ বুধবার বিকেলে রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, কারও একক নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন হয়নি। আমি প্রশ্ন করতে চাই, এ দেশের স্বাধীনতার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য আর কে ছিলেন?’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আজ যারা বিচারকের আসনে আছেন, তারা একসময় আমাদের সঙ্গে কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। আজ তারা সবাই ম্যাচিউড আর আমরা হলাম ইম-ম্যাচিউড! পৃথিবীর কোন আইনে এসব আছে? আমার কাছে পৃথিবীর সব আইনের বই আছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করে এসেছি। আমরা সংবিধান প্রণয়নে কাজ করেছি। অসংখ্য আইন প্রণয়ন করেছি। বর্তমান সংসদের অধীনেই বিচারকদের বেতন বৃদ্ধি হয়েছে, শতাধিক আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমান সংসদ সম্পূর্ণ সাংবিধানিক। ইন্টারপার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আর একজন বিচারপতি বলেন, এই সংসদ ইম-ম্যাচিউরড!’
যারা অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষতায় আনতে চায় তারাই রাজনীতিবিদদের ছোট করা চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের ছোট করতে চান কারা? যারা সামরিক শাসন চান তারা। রাজনীতিবিদদের ছোট করতে চায় কারা? যারা অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনতে চান, তারা।’
আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশে যখন সংবিধান প্রণয়ন হয় তাখন আমি সেই কমিটিতে ছিলাম। সংবিধানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বচানের বৈধতা দেওয়া আছে। একটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন বৈধ হলে একাধিক আসনেও বৈধ।’
বিচারপতিদের ইমপিচমেন্ট প্রসেঙ্গ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশে বিচারকদের ইমপিচ করে সংসদ। ব্রিটেনের অ্যাক্ট অব সেটেলমেন্ট-১৯০১’ অনুসারে সংসদের হাতে এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের সব দেশেই এই আইন কার্যকর। ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও বিচারকদের ইমপিচ করে সংসদ।’
বিচারপতিদের সমালোচনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের ছোট করতেই ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য সংযুক্ত করা হয়েছে। একটি গোষ্ঠী সামরিক শাসনের পক্ষে এসব করছে। তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুর রক্তের ওপর দিয়ে বিচারপতি সায়েম রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরশাদ ক্ষমতা নেওয়ার আগেও আরেকজন বিচারপতি ক্ষমতায় আসেন। আজ যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কথা বলা হচ্ছে, তাও সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সৃষ্টি।’
আলোচনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘জাতির কয়েকজন বেঈমান যখন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে, চার জাতীয় নেতাকে হত্য করেছে, তখন একটি কালো আইন করে হত্যাকারীদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে, তখন কোথায় ছিলেন আদালত? কোথায় ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট, কোথায় ছিলেন বিচারপতিরা।’
জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার রাজ্জাক আলীর উদ্ধৃতি দিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘বিচারপতিদের হাত এত লম্বা নয় যে, তারা সংসদে হাত দিতে পারেন। এই সংসদ থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বচিত করা হয় আর রাষ্ট্রপতি বিচারপতি নির্বাচন করে থাকেন। তাই সংসদ নিয়ে ধৃষ্টতা দেখানোর অধিকার কারও নেই।’
সংগঠনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, বিএসএমএমইউ এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম খান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, বিএমএ এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post