অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বহুল আলোচিত পুরান ঢাকার দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপির ডাকা হরতালের দিন পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে বিশ্বজিৎকে এমন নির্মম, নিষ্ঠুর, নির্দয় ও নৃসংশভাবে হত্যা করেছিল, যার ভিডিও ফুটেজ দেখে মানুষ হয়েছিলো বাকরুদ্ধ। ভিডিও দেখেই ভয়ে চিৎকার করে উঠেছিলো মানুষ।
সেদিন ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী চাপাতি, হকিস্টিক, লোহার রড দিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরার সামনে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে বিশ্বজিৎকে। সে নিজেকে একজন হিন্দু বলে দাবি করার পরও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সেদিন দমেনি। এঘটনার পর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ সরকার।
পরে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে মামলা হলে ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক নিজামুল হক আটজনকে ফাঁসি ও ১৩ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
নিম্ন আদালতের ওই রায়ে নিহত বিশ্বজিতের পরিবারের সদস্যসহ দেশের জনগণও সন্তোষ প্রকাশ করেছিল। এ রায়ের ফলে দেশের মানুষ সরকার এবং আদালতেরও বেশ প্রশংসা করেছে। দেশবাসী ও বিশ্বজিতের পরিবারের সদস্যদের প্রত্যাশা ছিল উচ্চ আদালতেও খুনিদের এ সাজা বহাল থাকবে।
কিন্তু, রোববার উচ্চ আদালতের দেয়া রায়ে দেখা গেছে নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ৮ জনের মধ্যে ৪ জনের যাবজ্জীবন, ২ জনকে খালাস আর বাকী ২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে।
এ রায় ঘোষণার পর এখন সারাদেশে আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বইছে সমালোচনার ঝড়ও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে ব্যাপক সমালোচনা।
অনেকেই বলছেন, শুধু দুই জনেই কি বিশ্বজিৎকে হত্যা করেছিল? লাইভ টিভিতে কি সেদিন সবাই ভুল দেখেছিলো? ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী হওয়ায় তারা মাফ পেয়ে গেল?
আবার কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, যে ২ জনের দণ্ড বহাল রাখা হয়েছে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা পেয়ে যাবেন। সর্বশেষ দণ্ডপ্রাপ্তের কোটা শূন্যেতেও নেমে আসতে পারে।
এদিকে বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বিশ্বজিতের বাবা বলেছেন, প্রকাশ্যে দিবালোকে আমার ছেলেকে হত্যা করা হল। এটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ। আমরা উচ্চ আদালতের এই রায়ে আশাহত। বিচার পাওয়া নিয়েও শঙ্কায় আছি।
Discussion about this post