অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশের অভ্যন্তরে সংঘটিত খুন-হত্যা, গুম, অপহরণ, শেয়ারবাজার ও ব্যাংক লুটসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডগুলোকে সরকার ছলচাতুরি ও প্রতাতরণার মাধ্যমে ধামাচাপা দিয়ে যাচ্ছে। দেশের গণমাধ্যমগুলোকেও এসব ঘটনার কোনো সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে দিচ্ছে না। দুয়েকটি গণমাধ্যম সাহস করে এসব ঘটনার অন্তরালের রহস্য উম্মোচন করার চেষ্টা করলেই তাদের ওপর নেমে আসছে মামলা-হামলার খড়গ।
দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের নেতিবাচক দিক নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন বা তথ্যও ধামাচাপা দিয়ে জনগণের কাছে উল্টোটা প্রচার করছে সরকার। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে ভুল তথ্য প্রচারের মাধ্যমে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছে। এসব নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শুধু প্রতিবাদই করছে না, আসল ঘটনাও তারা বাংলাদেশের জনগণকে জানিয়ে দিয়েছে।
সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির সভা থেকে দেশে ফিরে সরকারের লোকজন দাবি করেছে যে, ইউনেস্কো রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে তাদের আপত্তি তুলে নিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেও দেশবাসীকে জানিয়েছে যে ইউনেস্কো তাদের আপত্তি তুলে নিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে যে, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১ তম অধিবেশন শেষে ইউনেস্কো জানিয়েছে তাদের আপত্তি বহাল আছে। এনিয়ে এখন সারাদেশে তুলকালাম কাণ্ড চলছে।
সর্বশেষ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে সরকারের আরেক ভয়াবহ প্রতারণার তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। এ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকেই এর মান নিয়ে দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও আইন বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সরকার তার নিজস্ব কিছু লোক দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই এ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এটাকে কাচের গ্লাসের মতো স্বচ্চ দাবি করে জামায়াতের ৫ জন ও বিএনপির ১ জন শীর্ষ নেতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে।
জানা গেছে, নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত(আইসিসি) এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের গঠিত এই ট্রাইব্যুনালকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালের ওপর সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
গত জুন মাসে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে (আইসিসি) গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি দেশে ফেরার পর সুপ্রিম কোর্ট একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে বলা হয়, নেদারল্যান্ডস এর হেগ এ অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট রোম সনদ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অঙ্গীকার এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ এর বিচারহীনতার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের প্রশংসা করেছে। আইসিসির প্রেসিডেন্ট সিলভিয়া ফার্নান্দেজ ডিগার্মেন্ডি এবং ডেপুটি প্রসিকিউটর জেমস স্টুয়ার্ট সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির সাথে হেগ এ এক আলোচনায় এ প্রশংসা করে।
এ সংবাদ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। তাদের ভাষ্য, ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট (আইসিসি প্রেসিডেন্ট) ও ডেপুটি প্রসিকিউটরের বৈঠকের ওপর বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এমন বিভ্রান্ত রিপোর্টের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করছে আইসিসি। এতে আরও বলা হয়, এই রিপোর্টগুলোতে বিভ্রান্তিকরভাবে আইসিসির প্রেসিডেন্ট এবং ডেপুটি প্রসিকিউটরকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তাদের উদ্ধৃত করে বাংলাদেশে চলমান বা আগে হওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশংসা করেছে বা সন্তুষ্টি প্রকাশের খবর ছাপা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও এঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, ‘দি কোর্ট (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট) একটি নোট ভারবাল (আনুষ্ঠানিক পত্র) দিয়েছে, অত্যন্ত অপমানজনক আমাদের জন্য। আইসিসি বাংলাদেশের জড়িত কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে, এ বিষয়ের ওপর প্রেস রিলিজটি যাচাই করে দেখার জন্য। এটা নিশ্চয়ই বিব্রতকর।
সর্বশেষ জানা গেছে, প্রশংসা কুড়ানোর জন্য সুপ্রিমকোর্ট যে ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল, সেটি এখন সরিয়ে ফেলেছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এই প্রতিবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এনিয়ে আবার বইছে সারাদেশে সমালোচনার ঝড়। কেউ কেউ বলছেন, এতদিন ধরে সরকার যেসব রাসায়নিক দ্রব্য চাপা দিয়ে রেখেছিল তা এখন বিস্ফোরিত হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, একে একে থলের বিড়াল সব বেরিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ইস্যুতে দেশবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। ভুল তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে আসছে। শেষ সময়ে এসে এসব এখন আস্তে আস্তে ফাঁস হচ্ছে। বেরিয়ে আসছে আসল ঘটনা।
Discussion about this post