অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত ও বিতর্কিত বিষয় হলো আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা। অনলাইনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আপত্তিকর বা মানহানিকর কোনো বক্তব্য বা লেখা প্রকাশিত হলে ভুক্তভোগী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই ৫৭ ধারার আশ্রয় গ্রহণ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা ব্যাপক হারে মামলা করার কারণে এটা এখন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিছু লিখলেই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা করা হচ্ছে।
সাংবাদিক সমাজ এটাকে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নিপীড়নমূলক ও গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার আখ্যায়িত করে অবিলম্বে বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন। রাজনীতিক বিশ্লেষকরাও এটাকে সরকার গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করছেন।
তবে, সরকারপন্থী বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরা এ বিষয়ে নিরব ভুমিকা পালন করছেন। আর বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন বামপন্থী বা সরকারপন্থী অংশের নেতারা ইনিয়ে বিনিয়ে এটার পক্ষেই যুক্তি দেখাচ্ছেন। বিশেষ করে সাংবাদিক নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর ভুমিকা খুবই রহস্যজনক বলে মনে করছেন ডানপন্থী সাংবাদিক নেতারা।
অভিযোগ রয়েছে, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকা- ছিল সরকারের পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে সরকারের বড় ধরণের একটি দুর্নীতির প্রমাণ ছিল তাদের কাছে। এজন্যই পরিকল্পিতভাবে সাগর-রুনিকে হত্যার মাধ্যমে দুর্নীতিকে চাপা দেয়া হয়েছে।
এদিকে, সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে যখন সাংবাদিক সমাজ রাজপথে আন্দোলন করছে, ঠিক তখনই সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরীকে প্রধানমন্ত্রী তার তথ্য উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর থেকেই সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলন নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ইকবাল সোবহানও সরকারের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হওয়ার পর ইকবাল সোবহান চৌধুরী অবজারভার পত্রিকার পরিচালক হয়েছেন, সানমুন গ্রুপের মালিক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানকে অস্ত্র মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে তার সম্পাদিত পত্রিকা দৈনিক বর্তমান দখল করেছেন। এছাড়া কয়েকশ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ডিবিসি নামে একটি টিভি চ্যানেলও চালু করেছেন। সাংবাদিক পাড়ায় গুঞ্জন আছে, ইকবাল সোবহান চৌধুরী এখন হাজার কোটি টাকার মালিক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশন এবং আমার দেশ পত্রিকা বন্ধের পেছনে ইকবাল সোবহান চৌধুরীর হাত রয়েছে। তার পরামর্শেই সরকার এখনো এগুলো বন্ধ করে রেখেছে। এমনকি ভিন্ন মতের সাংবাদিকদেরকে সরকার যে হয়রানি করছে এগুলোও ইকবাল চৌধুরীই করাচ্ছেন।
তাই, হঠাৎ করে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার বিপক্ষে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বক্তব্য সাংবাদিক মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারণ, সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি নামে যে আইনটি করতে যাচ্ছে সেটাতেও সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ন ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকছে। ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও তার সহযোগিদের পরামর্শেই সরকার ৫৭ ধারার আদলে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন প্রণয়ন করছে বলে মনে করছেন সাংবাদিকরা। তাই, ৫৭ ধারা বাতিলে ইকবাল সোবহান চৌধুরী যে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা আইওয়াশ হিসেবে দেখছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা মনে করছেন, ইকবাল সোবহান প্রকৃত অর্থে ৫৭ ধারা বাতিল চান না। তিনিও চান ভিন্ন মতের সাংবাদিকদেরকে কোনঠাসা করে রাখতে।
Discussion about this post