অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশে ব্যাপক সমালোচিত ও বিতর্কিত একটি বিষয় হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রসফায়ার বা কথিত বন্দুকযুদ্ধ। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা ও আইন বিশেষজ্ঞরা যেটাকে বিচারবহির্ভূত হত্যা বলে আখ্যায়িত করছেন।
বাংলাদেশে ক্রসফায়ারের ইতিহাস অনেক পুরনো হলেও সন্ত্রাস দমনের নামে বিরোধী নেতাকর্মী হত্যার এজেন্ডা আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সাল থেকে চালু করেছে দেশে। বিএনপি-জামায়াত শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছে যে, সরকার ক্রসফায়ারের নামে বিরোধীদলের জনপ্রিয় নেতাকর্মীদের হত্যা করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, র্যাব-পুলিশের ক্রসফায়ারে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। বিগত কয়েক বছরে জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেই ক্রসফায়ারের ঘটনা বেশি ঘটেছে। উল্লেখযোগ্য এলাকাগুলোর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, যশোর, বগুড়া, নীলফামারী, গাইবন্ধা ও জয়পুরহাট। বিশেষ করে জামায়াত-শিবিরের ঘাটি হিসেবে পরিচিত গাইবান্ধা, নীলফামারী, চাপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহে জামায়াতের অনেক জনপ্রিয় নেতা ও শিবিরের অনেক নেতাদের ক্রসফায়ারের নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গুলি করে হত্যা করেছে। এছাড়া বিএনপি ও ছাত্রদলেরও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীও ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন।
র্যাব-পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ক্ষেত্রে র্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হতো যে, তাদের নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের সময় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যেতো নিহতদেরকে ১/২ দিন আগে গ্রেফতার করা হতো। হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে তাদের নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে বের হতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশের ভাষ্যমতে তখন ওঁত পেতে থাকা তার সঙ্গীদের সাথে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ হয় এবং পালাতে গিয়ে আটককৃত ব্যাক্তি গুলিতে মারা যায়। সবগুলো ক্রসফায়ারের ক্ষেত্রেই পুলিশের এই একটিই কাহিনী। সবক্ষেত্রে একই ধরণের কাহিনীর কারণে মানবাধিকার সংস্থাসহ রাজনীতিবিদদের মনে এ নিয়ে অসংখ্য প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তাদের প্রশ্ন সবগুলো ক্রসফায়ারের কাহিনী এক হয় কি করে?
এভাবেই কয়েক বছর যাবত ক্রস ফায়ার নিয়ে সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে তর্কবিতর্ক চলে আসছে। বিষয়টি নিয়ে এত সমালোচনা হলেও সরকার এটি বন্ধ করেনি।
তবে সম্প্রতি ক্রসফায়ার নিয়ে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমানের এক বক্তব্যে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। উঠেছে সমালোচনার ঝড়। ডা. এনামুর রহমান মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এ পর্যন্ত ৫ জনকে তিনি ক্রসফায়ারে দিয়েছেন আরো ১৪ জনের লিস্ট করেছেন ক্রসফায়ার দেয়ার জন্য। সাংসদ এনামের এই বক্তব্যে ক্রসফায়ারের পেছনের সত্য বেরিয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সবাই। এই ব্ক্তব্যের মাধ্যমে সরকারের গোপন মিশন ফাঁস হয়েছে বলেও মনে করছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা।
তারা মনে করছেন, বিগত কয়েক বছরে সারাদেশে ক্রসফায়ারের নামে র্যাব-পুলিশ বিএনপি-জামায়াতের যেসব নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে সরকারের ইশারাতেই এসব হয়েছে। বিশেষ করে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের দেয়া তালিকা অনুযায়ীই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদেরকে বাসা-বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ক্রস ফায়ারের নামে হত্যা করেছে।
Discussion about this post