অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রাজনীতিতে শেষ কথা নেই বলে একটি প্রবাদ আছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের কর্মকাণ্ডে তা বার বার প্রমাণিত হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী প্রমাণ করে দিলেন যে রাজনীতিবিদদের চরিত্র পরিবর্তনশীল।
২০০০ সালের প্রথম দিকেই তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় ঐক্যজোট। এ জোটের একটি দল ছিল সাইখুল আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট। এ জোটের একটি পুরনো দল হল নেজামে ইসলাম পার্টি। দীর্ঘ দিন যাবত এ দলটির মহাসচিব ছিলেন মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী। একটি সময়ে তিনি ইসলামী ঐক্যজোটেরও মূল নেতৃত্বে চলে আসেন।
দেখা গেছে, বিগত দিনগুলোতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী। বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে তিনি পল্টন এলাকায় একাধিকবার পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। এসব কারণে পুরানা পল্টনে নেজামীর দলীয় অফিসে ডিবি পুলিশ গিয়ে ভাঙচুরও করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আব্দুল লতিফ নেজামী ইসলামী ঐক্যজোট ও তার দল নেজামী ইসলাম পার্টি চালানোর জন্য যত অর্থের প্রয়োজন হতো সবই নিয়েছেন বিএনপি-জামায়াত থেকে। আর নেজামে ইসলাম পার্টির সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতেন সহযোগিতা এনে। পল্টনের অফিস ভাড়া থেকে শুরু করে পোস্টার, ব্যানার, লিফলেটসহ যত খরচ হতো সবই বিএনপি-জামায়াতের কাছ থেকে আনতেন।
২০১৬ সালের প্রথম দিকে সরকারের লোভনীয় অফারে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট ছেড়ে মফুতি ফয়জুল্লাহকে নিয়ে আরেকটি ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করেন। এরপর থেকে ব্যাপক পরিবর্তন চলে আসে মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামীর বক্তব্য বিবৃতিতে।
বিশেষ করে বৃহস্পতিবার একটি সংবাদ সম্মেলনে দেয়া আব্দুল লতিফ নেজামীর বক্তৃতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আবদুল লতিফ নেজামী বলেছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নিবাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওয়াজ উঠিয়ে বিএনপি জ্বালাও-পোড়াও ও সন্ত্রাস চালিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে। ওই সময় নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির পাঁচ জন প্রতিনিধিকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়, কিন্তু এতে বিএনপি রাজি হয়নি। সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে বিএনপি দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে এবং বর্তমানে তারা সহায়ক সরকারের নামে পুনরায় নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।
তিনি আরও বলেন, সংবিধানে সহায়ক সরকার বলে কিছু নেই। দেশের গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে একগুঁয়েমি মনোভাব ও রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টির অপপ্রয়াস ত্যাগ করার জন্য বিএনপিকে আহ্বান জানাচ্ছি।
তার এমন বক্তব্যে অবাক করেছে সবাইকে। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের লক্ষে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল, জোটের অন্তর্ভূক্ত থাকায় তখন সবগুলোতেই আব্দুল লতিফ নেজামীর পূর্ণ সমর্থন ছিল এবং এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিনি এবং তার দল মাঠে ময়দানে ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু, তিনিই আজ বলছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে বিএনপি নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন যদি নৈরাজ্য হয়ে থাকে, তাহলে সেই নৈরাজ্যকারীদের মূলহোতাদের মধ্যে আব্দুল লতিফ নেজামীও একজন ছিলেন। কারণ, তাদের পরামর্শ নিয়েইতো খালেদা জিয়া কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
কেউ কেউ বলছেন, একটি ইসলামী নামধারী দলের নেতার মুখে এমন দ্বিমুখী কথা সত্যি অবাক করেছে। ৫ জানুয়ারির মত কলঙ্কিত নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশ বিদেশের কেউই স্বীকৃতি দেয়নি। অথচ সরকারের লোভনীয় অফারে সেই কলঙ্কিত নির্বাচনের পক্ষে লতিফ নেজামীর এমন বক্তব্য মানুষকে হতাশ করেছে।
Discussion about this post