সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশের কাতার ভিত্তিক বিশ্বখ্যাত আল জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দেয়ার দাবি অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ।
শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার জায়েদ রাদ আল হোসেন বলেছেন, সৌদি আরব ও অন্য তিনটি আরব রাষ্ট্রের দাবি আল জাজিরা টেলিভিশন বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের এ দাবি অগ্রহণযোগ্য। এটা মুক্ত মত ও সংবাদ প্রকাশের অধিকারের ওপর আক্রমণ।
জায়েদ রাদ আল হোসেনের মুখপাত্র রুপার্ট কোলভিলে এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আল জাজিরা টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়ার যে দাবি করা হয়েছে কাতারের কাছে তাতে জায়েদ রাদ আল হোসেন ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন। আপনি তাদের সম্পাদকীয় অবস্থান পছন্দ করেন বা না করেন, একমত হন বা না হন, আল জাজিরার আরবি ও ইংরেজি চ্যানেলের বৈধতা আছে। বহু লক্ষ দর্শক আছেন এর।
ওদিকে কাতারের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখিয়ে উপসাগরীয় অঞ্চলের সঙ্কটের ইতি টানার আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক। অন্যদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগানের সঙ্গে কাতার সঙ্কট নিয়ে আলোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ছাড়া সমস্যা নিয়ে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বৈঠক করেছেন কাতারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালিদ বিন মোহাম্মদ আল আত্তিয়াহ ও তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিকরি আইসিক। বৃটেনের বেশ কিছু ব্যাংক কাতারি রিয়াল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।
লন্ডন ভিত্তিক পত্রিকা আল আরাবিয়া জাদিদকে কাতারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আত্তিয়াহ বলেছেন, কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ দেয়া হলো যুদ্ধ ঘোষণা। সৌদি আরব ও তার উপসাগরীয় মিত্ররা এ অবরোধ আরোপ করেছে।
গত ৫ই জুন থেকে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিশর সহ বেশ কিছু দেশ। কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ দেয়া হয়েছে আকাশ, জল ও স্থলপথে। এ অবস্থায় সেখানে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন।
অনলাইন আল জাজিরায় প্রকাশিত রিপোর্টে এ সব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, শুক্রবার তুরস্কের ও কাতারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, বর্তমানে উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে যে অবস্থা চলছে তা অবিলম্বে আন্তরিক আলোচনা ও কাতারের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। কারণ, এ দেশগুলো একে অন্যের ভাই। তবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা’কে (ডব্লিউটিও) বাহরাইন বলেছে, কাতারের বিরুদ্ধে যে বাণিজ্যিক অবরোধ দেয়া হয়েছে তা যথার্থ।
বৃটেনে লয়েডস ব্যাংকিং গ্রুপ বলেছে, কাতারের রিয়াল আর বিক্রি করা হচ্ছে না। এমন পদক্ষেপ নিয়েছে লয়েডস ব্যাংক, ব্যাংক অব স্কটল্যান্ড ও হ্যালিফ্যাক্স। টেসকো ব্যাংক বলেছে তারা রিয়ালের ব্যবসা আপাতত স্থগিত করেছে। বারক্লেসও রিয়ালের ব্যবসা বন্ধ করেছে। তবে ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে এইচএসবিসি।
ওদিকে কাতারে নতুন করে সেনা মোতায়েন করেছে তুরস্ক। তারা বলেছে, কাতারে অবস্থিত তুরস্কের সেনা ঘাঁটিতে প্রশিক্ষণ নিতে এসব সেনাকে পাঠানো হয়েছে।
কাতারে মিডিয়া বন্ধ করে দেয়ার যে দাবি করেছে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট তা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস ( সিপিজে)। এমন দাবিতে তারা সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশরের নেতাদের কাছে চিঠি লিখেছে। তাতে বলা হয়েছে, এর অর্থ এই নয় যে তারা উপসাগরীয় এই সঙ্কটের সময় কোনো পক্ষ অবলম্বন করছে।
সূত্র: মানবজমিন
Discussion about this post