অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাবিত আবগারী শুল্ক নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বমহলে বইছে সমালোচনার ঝড়। বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের প্রস্তাবিত আবগারী শুল্কের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। এখন পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী মুহিত ছাড়া এর পক্ষে কাউকে কথা বলতে শোনা যায়নি।
এমনকি এই আবগারী শুল্ক নিয়ে প্রতিদিনই উত্তপ্ত হচ্ছে সংসদ। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা এনিয়ে সংসদে প্রতিদিনই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা অর্থমন্ত্রী মুহিতের কঠোর সমালোচনা করছেন। জানা গেছে, আবগারী শুল্ক নিয়ে এখন সরকারের ভেতর চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিশেষ করে আবগারী শুল্ক নিয়ে অর্থমন্ত্রী বিশিষ্ট ব্যক্তি, মন্ত্রী ও নিম্ন আয়ের মানুষদেরকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেয়ার পর পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হচ্ছে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পরই আবগারী শুল্ক নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আসতে থাকলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেন, বাজেটে কোনো সমস্যা থাকলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। এ থেকে সকলেই মনে করছিলেন যে, আবগারী শুল্ক হয়তো প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু, এরপর অর্থমন্ত্রী বললেন, ১ লাখ টাকা যাদের আছে তারা সম্পদশালী। সিলেটে এক অনুষ্ঠানে জানালেন এটা বাদ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটার বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে সিপিডি এবং অর্থপ্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নানকেও একহাত নিলেন অর্থমন্ত্রী।
এদিকে, প্রতিদিন বাজেট অধিবেশনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা আবগারী শুল্কের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
অর্থপ্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান প্রথম থেকেই আবগারী শুল্কের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছেন। তিনি সংসদে ও বাইরে একাধিকবার আবগারী শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন। সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, আবগারী শুল্ক কমানোর বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। তিনি দেশবাসীকে আশ্বস্তও করেন। এ বক্তব্যের পরই তার ওপর ক্ষেপে উঠেন অর্থমন্ত্রী মুহিত। অর্থপ্রতিমন্ত্রী কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্ত নন বলেও মন্তব্য করেন মুহিত। জানা গেছে, এনিয়ে অর্থপ্রতিমন্ত্রী মুখ না খুললেও তিনি চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাকে অপমান করার জন্য আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও অর্থমন্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
এরপর আওয়ামী লীগ এমপি এ কে এম আওয়াল ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদে বলেছেন, এই আবগারী শুল্কের জন্য ভবিষ্যতে সারাদেশের মানুষের মধ্যে একটা খারাপ প্রভাব পড়বে। আগামী নির্বাচনে এর খেসারত দিতে হবে আমাদেরকে। এটা বাতিল করতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদে বলেছেন, এই আবগারী শুল্ক নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। ঋণ খেলাফিদের দায় নিতে পারলে নিম্ন আয়ের মানুষের দায় সরকার নিতে পারবে না কেন? ব্যাংকের আমানত থেকে টাকা কেটে রেখে অর্থমন্ত্রী কি আমাদেরকে যক্ষের ধনের পাহারাদার বানাচ্ছেন?
তারপর আজ সোমবার জাতীয় সংসদে আবগারী শুল্ক নিয়ে অর্থমন্ত্রী মুহিতের কঠোর সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। এনিয়ে তারা অর্থমন্ত্রীকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েন নি।
শেখ সেলিম অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশে করে বলেছেন, আপনার দায়িত্ব হল বাজেট পেশ করা। সংসদ সদস্যরা আলোচনা করে ঠিক করবেন। আপনার বয়স হয়েছে, হুঁশ-জ্ঞান কমে গেছে। আপনি কথা কম বলুন। আপনার কথায় সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। আর মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, অর্থমন্ত্রী কী কারণে, কার পরামর্শে এ আবগারী শুল্ক প্রস্তাব করেছেন তা আমরা জানি না। হলমার্কের ৪ হাজার কোটি টাকা যদি কোনো টাকা না হয়, তাহলে সামান্য টাকার জন্য অর্থমন্ত্রী সারাদেশের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছেন কেন?
জানা গেছে, বাজেটে আবগারী শুল্ক প্রস্তাব করে এখন চরম বেকায়দায় পড়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। শেখ সেলিম ও হানিফের বক্তব্যে তিনি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলেও জানা গেছে।
Discussion about this post