অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে পার্বত্য অঞ্চলের চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারে এ পর্যন্ত ৫ জন সেনা সদস্যসহ কমপক্ষে ১৫৩ জন নিহত হয়েছে। এঘটনায় সেনা সদস্যসহ আরও বেশ কিছু মানুষ আহত হয়েছে। অনেক নারী পুরুষ মাটিচাপা পড়ে এখনও নিখোঁজ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সর্বশেষ নিহতের সংখ্যা দুই শতে পৌঁছতে পারে। এছাড়া বাড়িঘর বিধ্বস্তসহ সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড় ধসে এত প্রাণহানির ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। আর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যে কয়টি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলে সম্প্রতি প্রবল বর্ষণে পার্বত্য অঞ্চলে জানমালের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এটা একটা।
পাহাড়ে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় শোকে স্তব্ধ দেশবাসী। শোকাহত আন্তর্জাতিক মহলও। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ভারত, ইরান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছে। উদ্ধার তৎপরতাসহ পাহাড়িদের পুনর্বাসনে সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছে তারা।
গত সোমবার বিকেল থেকেই শুরু হয় প্রবল বর্ষণ। সারা রাতের বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পুরো পার্বত্য অঞ্চল। মঙ্গলবার সকাল থেকে পাহাড় ধসে নিহতের খবর আসতে থাকে গণমাধ্যমে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে নিহত নারী-পুরুষ ও শিশুদের সংখ্যা। বিপর্যস্ত পাহাড়িদের কান্নায় যখন বাতাস ভারি হয়ে উঠছিল ঠিক তখনই সুইডেনের উদ্দেশে বিমানে উঠে দেশ ছেড়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সফরটি পূর্ব নির্ধারিত থাকলেও এটি খুব বেশি একটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। সুইডেনে রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে এমন কোনো আন্তর্জাতিক সেমিনার ও সম্মেলন হচ্ছে না যে, এখানে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত না থাকেলে রাষ্ট্রের খুব একটা ক্ষতি হবে। সফরের মূল এজেন্ডা হল সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক একটি বৈঠক।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছে করলেই সফরটি স্থগিত করতে পারতেন। এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সফর স্থগিত করলেও সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী কোনো আপত্তি করতেন না। পরবর্তীতে সময় করেও প্রধানমন্ত্রী সুইডেন সফর করতে পারতেন।
তাদের মতে, এমন কঠিন বিপদের সময় রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দেশে থাকাই উচিত ছিল। পাহাড়িদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যে একটা খারাপ দৃষ্টি ভঙ্গি আছে এটা আবারও প্রমাণ হলো। আর হাওরের দুর্যোগের সময় হাওর পরিদপ্তরের ডিজিসহ ৯ কর্মকর্তা ছিলেন কানাডা সফরে। উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় মোরা’র সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ছিলেন বেলজিয়ামে। আর এবার খোদ প্রধানমন্ত্রীই চলে গেলেন দেশের বাইরে। এসব ঘটনা দায়িত্বহীন সরকারের পরিচয়।
এমন দুর্যোগ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী সুইডেন যাওয়ায় এনিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বস্তরে বইছে সমালোচনার ঝড়। ইতিমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে আনন্দ ভ্রমণ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
কেউ কেউ বলছেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় জনগণের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কোনো ভালবাসা ও দরদ নেই। অনেকে প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্বহীন ও কাণ্ডজ্ঞানহীন বলেও মন্তব্য করছেন।
উল্লেখ্য, কিছু দিন আগেও অকাল বন্যায় যখন হাওরের সব ধান তলিয়ে নিয়ে গেছে, তখন হাওর পরিদপ্তরের মহাপরিচালক ৯ জনকে নিয়ে কানাডায় চলে গেলেন হাওরের ওপর দক্ষতা অর্জনের জন্য। সেটা নিয়েও তখন রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এরপর আবার ঘূর্ণিঝড়ের দুর্যোগের সময় দুর্যোগ মন্ত্রী ও সচিব বিদেশে থাকায় এনিয়ে সাধারণ মানুষও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলো।
Discussion about this post