চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো সম্মানজনক টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠেছে মাশরাফি-সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা।
গত শুক্রবার কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষের ম্যাচে ধ্বংস স্তুপের মধ্য থেকে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়েছেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ জুটি। রেকর্ড পার্টনারশীপ আর বুক চিতিয়ে লড়াই করে আনা জয়ে নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিষয়েই জানান দিয়েছেন এই দুই ব্যাটসম্যান।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের গড়া এই কীর্তি নিয়ে বিশ্বের সেরা ক্রিকেটাররা প্রশংসায় হয়েছেন পঞ্চমুখ। সবাই বলেছেন, বড় দলের মতোই এখন ঘুরে দাঁড়াতে পারে বাংলাদেশ। এখন আর তাদের ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। যোগ্য দল হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টিকে রয়েছে টাইগাররা।
তবে যোগ্য দল হিসেবে সেমিফাইনালে গেলেও ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশকে নিয়ে চলছে একের পর এক নেতিবাচক উপস্থাপনা। নেতিবাচক আচরণে ভারতীয় প্রধান সারির মিডিয়াগুলো নেমে এসেছে সাধারণ সমর্থকদের কাতারে!
দেশটির বাংলা ভাষার নিউজ পোর্টাল এবেলাডটইন তাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে উঠা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছে।
‘ভারত না বাংলাদেশ, সেমিতে ফেভারিট কে’ এমন শিরোনামের এক নিউজে তারা উল্লেখ করেছে, ‘তবে একথা মানতেই হবে যে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বৃষ্টির আনুকূল্য না পেলে হয়তো শেষ চারের মুখ দেখা হত না বাংলাদেশের।’
যোগ্যতা দিয়ে নয়, যেন বৃষ্টির আনুকুল্যেই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলছে!
একই নিউজে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পাকিস্তানকে দুরমুশ করে হারানোর স্মৃতি এখনও টাটকা। সেই স্মৃতি টাটকা থাকতে থাকতেই এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে লড়াই দুই প্রতিবেশী দেশের— ভারত বনাম বাংলাদেশ। এমনিতে শক্তির বিচারে ভারতের ধারে কাছে আসে না বাংলাদেশ। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং— সবেতেই ভারত এগিয়ে।’ রিপোর্টটিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে এরকম আরোও আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়।
ভারতীয় মেইনস্ট্রীম মিডিয়াগুলোতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের হালকা ট্রলগুলোকে পুঁজি করেই হচ্ছে তাচ্ছিল্যপূর্ণ নিউজ আর টকশো। টকশোতে বাংলাদেশের মানুষের শিক্ষা নিয়ে পর্যন্ত প্রশ্ন তোলা হচ্ছে! এর মাধ্যমে মূলত ভারতীয়রা ভদ্র মানুষের খেলা ক্রিকেটকে নোংরামিতে পূর্ণ করছেন!
এদিকে বাংলাদেশকে তো গোনাতেই ধরতে নারাজ সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার শেওয়াগ! তিনি টুইটারে ভারতকে আগেভাগেই ফাইনালের শুভেচ্ছা জানিয়ে রেখেছেন। অথচ এখনো বাংলাদেশের সাথে ভারতের সেমিফাইনালের খেলা বাকি!
এদিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগেই ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি জানালেন, ‘সেমিফাইনালে আমরা কার সঙ্গে খেলছি এটা মাথা ব্যথার কারণই নয়। আমাদের কাছে এখন দরজা খোলা। সবাই চায় ভারত-ইংল্যান্ড ফাইনাল হোক।’
ভারতীয় মিডিয়াগুলোকে ইন্ধন যোগাচ্ছে শেওয়াগ আর বিরাটদের এমন তাচ্ছিল্যপূর্ণ উক্তি। তাচ্ছিল্যের মাত্রা এমন পর্যায়ে গেছে যে সে দেশের মিডিয়াগুলোতে এখণ সেমিফাইনাল বাদ দিয়ে পাক-ভারত ফাইনাল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভারতীয়রা বাংলাদেশকে নিয়ে একের পর এক আক্রমণাত্মক ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য পোষ্ট করে যাচ্ছেন। যদিও বাংলাদেশিরা আগ বাড়িয়ে কোনো আক্রমণাত্মক পোষ্ট দিচ্ছেন না।
ক্রিকেট বোদ্ধাদের মতে, ভারতীয়দের এমন নোংরামিপূর্ণ আচরণ ভদ্রদের খেলা ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করছে। সাধারণ একটি খেলাকে নিয়ে ভারতীয় প্রধান সারির মিডিয়ার এমন সাধারণ সমর্থকদের সারিতে নেমে আসা সত্যি দুঃখজনক।
Discussion about this post