জুনায়েদ আব্বাসী
বাংলাদেশের বাজেটের ইতিহাসে এবারই প্রথম ব্যাংকে সঞ্চিত টাকার ওপর আবগারী শুল্ক আরোপ করেছে সরকার। যেকোনো ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাৎসরিক একটা চার্জ কেটে রাখে। এখন থেকে সরকারও ব্যাংকে জমা রাখা গ্রাহকদের প্রতি ১ লাখ টাকায় ৮০০ টাকা করে কেটে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকে জমা রাখা টাকার ওপর আবগারী শুল্ক তথা ১ লাখ টাকায় ৮০০ টাকা কেটে নেয়ার প্রস্তাব করার পরই এনিয়ে সারাদেশে ক্ষোভে ফুঁসছে সাধারণ মানুষ। সরকারের এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদও জানিয়েছে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। বিশিষ্টজনসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষই সরকারের এই আবগারী শুল্কের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
জনগণের মনোভাব বুঝতে পেরে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরাও সংসদে আবগারী শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছেন। আজ বৃহস্পতিবারও এনিয়ে সংসদে অর্থমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেছেন সংসদ সদস্যরা। কক্সবাজারের নারী সংসদ খোরশেদ আরা হক বলেছেন, গরিবরা ব্যাংকে সামান্য কিছু টাকা জমা রাখে। তাদের টাকা থেকে কেটে নেয়া হবে। অর্থমন্ত্রীর এ বিশাল বাজেট গরিবের কোনো উপকারে আসবে না।
কিন্তু, নাছোড়বান্দা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তিনি তার সিদ্ধন্তে অনঢ়। আজকেও বলেছেন, আবগারী শুল্ক প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামতকে উপেক্ষা করে সরকার কেন এই আবগারী শুল্ক কার্যকর করতে চাচ্ছে? এনিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাংকে সঞ্চিত টাকার ওপর আবগারী শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত এটা শুধু অর্থমন্ত্রীর নয়। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এ সিদ্ধান্তের পক্ষে বলেও জানা গেছে।
কারণ হিসেবে জানা গেছে, দাতা সংস্থাগুলোকে বাদ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের কাজ শুরুর পরই সরকার অর্থ সংকটে পড়ে যায়। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের কথা প্রকাশ্যে বললেও আসলে সরকারের ফান্ডে সেই পরিমাণ টাকা নেই। ঘোষণা দেয়ার পর যদি নির্মাণ কাজ শেষ করতে না পারে তাহলে সরকার চরমভাবে ইমেজ সংকটে পড়বে। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোও তখন এনিয়ে হাসাহাসি করবে। এজন্য সরকার সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন খাত থেকে পদ্মসেতু নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য গোপনে টাকা নিচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারি ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো থেকে সরকার প্রচুর পরিমাণে টাকা নিয়েছে। পদ্মাসেতু বাবদ সরকারকে টাকা দেয়া থেকে ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ পদের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে একজন পিয়ন থেকেও সরকার একদিনের বেতনের টাকা নিয়েছে।
বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পদ্মাসেতু নির্মাণের জন্য আমাদের সকলের কাছ থেকে বেতনের একদিনের টাকা সরকার কেটে নিয়েছে। এসব বিষয় বাইরে প্রকাশ না করার জন্যও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ওপর চাপ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, বিভিন্ন সেক্টর থেকে টাকা নিয়ে সরকার পদ্মাসেতু নির্মাণের কাজ শেষ করতে বেগ পাচ্ছে। সামনে নির্বাচন । এর আগে যদি পদ্মাসেতুর কাজ শেষ করতে না পেরে তাহলে ভোটের জন্য জনগণের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারবে না। আর নির্মাণ কাজ শেষ করতেও সরকারকে এখাতে আরও মোটা অঙ্কের টাকা যোগান দিতে হবে। মূলত: ওই টাকা সংগ্রহ করতেই সরকার ব্যাংকে জমা রাখা টাকা থেকে আবগারী শুল্ক আরোপ করে কেটে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
Discussion about this post