অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ঘোষণার আগেই ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটকে জীবনের ‘বেস্ট’ বাজেট হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। দেখা যাচ্ছে, ঘোষণার পর অর্থমন্ত্রীর এ ‘বেস্ট’ বাজেট কারো কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার এ বিশাল বাজেটকে বিশিষ্টজনেরা রূপ দেখানো বাজেট বলে আখ্যায়িত করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে যত বাজেট পেশ হয়েছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের মতো অতীতে আর কোনো বাজেট সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে এত অগ্রহণযোগ্য হয়নি। অতীতের বাজেটগুলোতে নেতিবাচক দিক থাকলেও সঙ্গে ইতিবাচক দিকও ছিল। কিন্তু, এবারের বাজেটে কোনো ইতিবাচক দিক মানুষ খুঁজে পাচ্ছে না।
অর্থমন্ত্রী ঘোষিত ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেটের ঘাটতি হচ্ছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। এ ঘাটতি মিটাতে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করবে ২৮ হাজার ২৩ কোটি টাকা। জানা গেছে, বর্তমানে রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংকগুলোর সরকারকে ঋণ দেয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। বিগত সাড়ে ৮ বছরে সরকারের লোকজন ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটেপুটে নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার খালি হয়ে যাওয়ায় ঘাটতি পূরণ করতে সরকার কিছু দিন পর পরই বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে টাকা তুলে নিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উচ্চাভিলাসী বাজেটের এ বিশাল ঘাটতি পূরণ করতে ঋণের জন্য সরকার বেসকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে। সরকারের শেষ সময়ে এসে দেখা যাবে রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংকগুলোর মতো বেসরকারি ব্যাংকগুলোও ফুঁতুর হয়ে গেছে। এছাড়া অন্যান্য খাত থেকেও সরকার আরও ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করবে। সরকারকে এ বিশাল অংকের ঋণ দিতে গিয়ে রাষ্ট্রের কোনো সেক্টরই অর্থনীতির শক্ত মেরুদন্ডের ওপর দাঁড়াতে পারবে না। কারণ, বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার যে ঋণ গ্রহণ করবে সেসব ঋণ পরবর্তিতে পরিশোধের সম্ভাবনা খুবই কম। সরকারি দলের নেতাকর্মীদের লুটপাটের জন্যই এত প্রকল্প বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
তারপর রূপদেখানো এই বাজেটের ঘাটতি মিটাতে সরকার বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করবে ৫১ হাজার ৮‘শ কোটি টাকা। এখন অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশ যদি বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে থাকে, তাহলে বিশাল অংকের টাকা বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করা হবে কেন? তাহলে সরকার এতদিন উন্নয়নের নামে যা বলে আসছে সবই কি ফাঁকা বুলি। বৈদেশিক ঋণনির্ভর দেশ কখনো উন্নয়নের রোল মডেল হতে পারে না। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ঋণগ্রস্ত দেশে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এরপর বাজেটে সরকার ৫৪৯টি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করেছে। ভ্যাটের এ ১৫% টাকা যাবে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে। অধিক পরিমাণ ভ্যাটের কারণে ইতিমধ্যেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। আর নিম্ন আয়ের মানুষ যা বেশি ব্যবহার করে যেমন, শিশু খাদ্য, গুঁড়া দুধ, মাখন, তাজা ফল, মসলা, ভোজ্য তেল, গ্যাস, জ্বালানী তেল, ভার্নিস, প্রসাধনী; সুগন্ধী দ্রব্য, টয়লেট সামগ্রী, সাবান, মশার কয়েল, মশা মারার সামগ্রী, সিলিং ফ্যান, মোবাইল ফোনের সিম কার্ড, রঙিন টিভি ইত্যাদি পণ্যের দাম বাড়বে। সরকারের এই উচ্চাভিলাসী ও রূপদেখানো বিশাল বাজেটের চাপ গিয়ে পড়বে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের ওপর।
দেখা যাচ্ছে, এসব কারণে বিশিষ্টজন থেকে শুরু করে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষই বাজেট নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন।
অর্থনীতিবিদরা সরকারের এ বাজেটকে জনগণের পকেট কাটার বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাড়া দেশের সকল রাজনৈতিক দলই সরকারের বাজেটকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি সরকারের শরিক দলগুলোও উচ্চাভিলাসী এ বাজেটের কঠোর সমালোচনা করছে। এ বাজেটকে তারা জনগণের ওপর শোষণের হাতিয়ার বলে উল্লেখ করেছে।
এদিকে, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারাও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলছেন, বাজেট ব্যবসাবন্ধব নয়। বাজেটের সমালোচনা করছে সিপিডিও।
অন্যদিকে বাজেট নিয়ে সকল দলমত ও বিশিষ্টজনদের বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রীও বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, বাজেটের সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত উচ্চাভিলাসী এ বাজেটকে তার জীবনের বেস্ট বাজেট বলে দাবি করলেও কার্যত এটা কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। বাজেটের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রীর ব্যর্থতা প্রমাণিত হয়েছে বলেও মনে করছেন তারা।
Discussion about this post