জুনায়েদ আব্বাসী
অভিযুক্তরা স্বীকারোক্তি দিলেও বনানীর হোটেল রেইনট্রিতে সোনা ব্যবসায়ী দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাতের জন্মদিনের পার্টিতে সংঘটিত আলোচিত ধর্ষণের ঘটনার কোনো প্রমাণ পায়নি বলে জানিয়েছে ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগ। ধর্ষণের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ধর্ষণের ঘটনায় গঠিত ৫ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড বৃহস্পতিবার এমন তথ্যই জানিয়েছে। ওই দুই ছাত্রী দেরিতে পরীক্ষা করতে আসাকে তারা আলামত না পাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে, মেডিকেল বোর্ডের এই রিপোর্ট কারো কাছেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। অভিযুক্তদের রক্ষায় সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকজনের চাপের মুখে ফরেনসিক বিভাগ এ রিপোর্ট দিয়েছে বলেও মনে করছেন বিশিষ্টজনসহ সচেতন মানুষ।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা প্রথম থেকেই সন্দেহ করেছিলেন যে, মেডিকেল রিপোর্ট সঠিক নাও আসতে পারে। আর সাধারণ মানুষেরও ধারণা ছিল, আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের সোনার পাহাড়ের নিচে আলোচিত এই ধর্ষণের ঘটনা চাপা পড়ে যেতে পারে। অবশেষে ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষের ধারনাই প্রমাণিত হতে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানোর পরই এনিয়ে সারাদেশে হৈচৈ পড়ে যায়। রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে সাধারণ মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করছে। আলোচিত এই ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে আবার শুরু হয়েছে আলোচনা সমালোচনা।
কারণ, আলোচিত এই ধর্ষণের ঘটনা চাপা দিতে প্রথম থেকেই পুলিশসহ বিভিন্ন মহল জোরপ্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বনানী থানা পুলিশ মামলা নিলেও প্রথমে তারা মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিল। ২ মে ধর্ষণের শিকার দুই তরুণী বনানী থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে মামলা নিতে টালবাহান করে। এমনকি ভুক্তভোগীদেরকে থানায় বসিয়ে রেখে হয়রানি করার অভিযোগও উঠে পুলিশের বিরুদ্ধে।
এরপর এনিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও। তখন এনিয়ে মুখ খুলে বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার লোকজনও। পরে চাপে পড়ে ৬ মে বনানী থানা পুলিশ মামলার রেকর্ড করতে বাধ্য হয়।
পরে দেখা গেছে, পুলিশ আলোচিত এই ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নিলেও অজানা কারণে অভিযুক্ত শাফাতকে গ্রেফতার করেনি। সাফাত বাসায় থাকলেও পুলিশ বলছে তাকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এনিয়ে তখন আবারো শুরু হয় সমালোচনা। এমনকি, সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকদের ইশারাতেই পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করেনি বলে অভিযোগ উঠে।
জানা গেছে, সমালোচনা সামাল দিতেই পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে ধর্ষক শাফাতকে পুলিশ সিলেট থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর সে শুধু ওই ধর্ষণের ঘটনার স্বীকারোক্তিই দেয়নি, বেরিয়ে আসতে থাকে তার অন্ধকার জীবনের নানা অপকর্ম। এমনকি তার এসব অপকর্মের সঙ্গে হোটেল রেইনট্রির মালিক ও সরকারদলীয় সংসদ সদস্য বিএইচ হারুনের ছেলে জড়িত বলেও জানা যায়। গ্রেফতার শাফাতের বন্ধু প্রতারক নাইম আশরাফও সেদিনের ঘটনার সবিস্তারে বর্ণনা দিয়েছে।
এখন ফরেনসিক বিভাগের এ রিপোর্ট নিয়ে জনমনে নানা সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সোনা ব্যবসায়ী দিলদার আহমেদের ছেলেকে বাঁচাতেই এ রিপোর্ট দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। কেউ কেউ বলছেন, দিলদার আহমেদের সোনার পাহাড়ে চাপা পড়েছে ধর্ষণের আলামত। আর বিশিষ্টজনরা মনে করছেন, আলোচিত এই ঘটনার যদি সঠিক বিচার না হয় তাহলে, সমাজে এসব ঘটনা ঘটতেই থাকবে। এক পর্যায়ে এসে এসব অপরাধ সরকারের নিয়ন্ত্রেণের বাইরে চলে যেতে পারে। নারীরাও নিরাপত্তাহীনতার কারণে চলাফেরা করতে সাহস পাবে না।
Discussion about this post