অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই ধর্মের দিকে ঝুঁকছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলীয়, রাজনীতি কিংবা ক্ষমতায় যেতে আওয়ামী লীগ ধর্মকে ব্যবহার করে না বলে সব সময়ই দাবি করে আসছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাসহ দলটির অন্যান্য নেতারা।
কিন্তু দেখা গেছে, নির্বাচন আসলে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ধর্মকেই তারা প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে প্রতিবারই ইসলামি আদর্শ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, শিক্ষানীতিসহ ইসলামের মৌলিক হুকুম আহকামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। নির্বাচন আসলেই সব ভুলে গিয়ে গায়ে ইসলামি লেবাস লাগায়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর থেকে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের আগ পর্যন্ত ক্ষমতার বাইরে ছিল আওয়ামী লীগ। ৯১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর রাজনীতির মাঠে খুব কৌশল অবলম্বন করেন শেখ হাসিনা। ধর্মনিরপেক্ষ দাবিদার দলটি কৌশলে এদেশের আলেম ওলামা ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেছে। এমনকি দেশের প্রধান ধর্মীয় রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনও করেছে।
এরপর ৯৬ সালের ১২ জুনের সংসদ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা ওমরা হজ করে মাথায় পট্টি লাগিয়ে হাজির হয়েছিলেন এদেশের মানুষের সামনে। মাথায় পট্টি আর হাতে তাসবিহ নিয়ে নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত হতেন। অতীতের ভুলের জন্য প্রতিটি নির্বাচনী জনসভায় গিয়ে কান্নাকাটি করে শেখ হাসিনা মানুষের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। বিএনপিকে ইসলাম বিরোধী হিসেবে উল্লেখ করে ক্ষমতায় এসে ইসলামের বিরুদ্ধে তার দল কোনো অবস্থান নেবে না বলেও দেশবাসীর কাছে প্রতিশ্রুত দিয়েছিলেন। এদেশের সরল সহজ ধর্মপ্রাণ মানুষ তার কথায় বিশ্বাস রেখে ১২ জুনের নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে।
এরপর সরকার গঠন করার পরই আওয়ামী লীগ উল্টোপথে হাটা শুরু করে। একের পর এক আঘাত হানতে থাকে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর ওপর। আদালতের মাধ্যমে ফতোয়াকে নিষিদ্ধ করে। তারপর শুরু করে আলেম ওলামা ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোর ওপর দমন-পীড়ন। শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের মতো লোককেও তারা গ্রেপ্তার করে জেলে ভরে। সংকোচন করার চেষ্টা করে ইসলামি শিক্ষাকে।
কিন্তু, ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে আবার সবই ভুলে যায় তারা। ৫ বছর ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনের আগে গায়ে আবার ইসলামি লেবাস লাগায়। ৯৬ সালের মতো ২০০১ সালেও শেখ হাসিনা ওমরা হজ করে মাথায় পট্টি বেধে আবার হাজির হয় দেশবাসীর সামনে। ইসলামের মহান খাদেম সেজে আবারো সেই পুরনো প্রতিশ্রুতি। তবে, সেইবার আর জনগণ শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করেনি। নির্বাচনে দেশবাসী শেখ হাসিনার নৌকাকে প্রত্যাখ্যান করে।
এরপর ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বরে ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সহযোগিতায় ক্ষমতায় এসে আগের চেয়েও আরও শক্তভাবে ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বিগত সাড়ে আট বছরের শাসনামলে শেখ হাসিনা সকল সেক্টর থেকে ইসলামকে ঝেটিয়ে বিদায় করেছে।
জানা গেছে, স্বাধীনতার পর ইসলামি আদর্শ, ঐতিহ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ওপর এত আঘাত আর কেউ করার সাহস পায়নি। সরকারের এসব পদক্ষেপের কারণে এদেশের সকল ধর্মীয় সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, আলেম ওলামাসহ ধর্মপ্রাণ মানুষ যখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, ঠিক তখনই গায়ে আবার ইসলামি লেবাস লাগানোর চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিশেষ করে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খ্যাতিমান আলেম ওলামাদের সমন্বয়ে নতুন করে একটি ইসলামি সংগঠন ও ফোরাম গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর ওলামা লীগ নামে তাদের যে একটি সংগঠন ছিল সেটার কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছে দলটি।
জানা গেছে, যদি নির্বাচন হয় তাহলে আগামী নির্বাচনে ধর্মপ্রাণ মানুষকে নিজেদের পক্ষে আনার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে কওমী মাদরাসাকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। হেফাজতে ইসলামের সঙ্গেও সম্পর্ক করেছে। এখন টার্গেট গৃহপালিত কিছু আলেম ওলামা দিয়ে বড় করে একটি ইসলামিক ফোরাম গঠনের মাধ্যমে জনগণের কাছে যাওয়া।
তবে, রাজনীতি বিশ্লেষক ও সচেতন নাগরিকরা মনে করছেন, এবছর আওয়ামী লীগের কোনো কৌশলই কাজে আসবে না। যদি নির্বাচন না হয় তাহলে সেটা ভিন্ন কথা।
Discussion about this post