জুনায়েদ আব্বাসী
যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে যাদেরকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে সেই জামায়াত নেতাদের প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকের টাকাই অবশেষে নিজের ফান্ডে নিচ্ছেন শেখ হাসিনা।
১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়েই তৎকালীন বিএনপি সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করেছিল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার জন্য তখন শেখ হাসিনা জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বসে বৈঠক করতেও কোনো আপত্তি করেনি। ওই সময় শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা একদিনও বলেননি যে, জামায়াত নেতারা ৭১ সালে ২ লাখ নারীকে ধর্ষণ করেছে, তাদের সঙ্গে বসে বৈঠক করবো না। তাদেরকে নিয়ে একসঙ্গে আন্দোলন করবো না। অধ্যাপক গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, মোজাহিদ, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান ও মীর কাসেম আলীই সেদিন শেখ হাসিনার আপনজন ছিলেন।
এরপর ২০০০ সালে যখন বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী জোট করে শেখ হাসিনার দু:শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলে তখনই জামায়াত নেতারা কথিত যুদ্ধাপরাধী বনে যায়। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে জামায়াতের ৫ জন শীর্ষ নেতাকে হত্যা করেছে। হস্তক্ষেপ করেছে জামায়াত নেতাদের প্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকটিকে তারা টার্গেট করেছে।
রাষ্ট্রের সব সেক্টর লুটেপুটে খাওয়ার পর শেখ হাসিনার চোখ পড়ে ইসলামী ব্যাংকের ওপর। এ লক্ষ্যে চলতি বছরের শুরুতে পরিচালনা পর্ষদে নিজেদের লোক বসিয়ে দখল করে নেয় ইসলামী ব্যাংক। জানা গেছে, ইতিমধ্যেই সরকার ইসলামী ব্যাংক থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে গেছে।
সর্বশেষ ইসলামী ব্যাংকের যাকাত ফান্ডের টাকাও সরকার নিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এটাও যাবে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ফান্ডে। প্রতিবছর এ টাকা দিয়ে আর্ত-মানবতার সেবাসহ শত শত বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে আসছে ব্যাংকটি। আর প্রতিবছর রমজানে মসজিদ, মাদরাসা, ইয়াতিম খানাসহ পথচারীদের মধ্যে ইফতার বিতরণ করে থাকে ইসলামী ব্যাংক। ইফতারের সেই ১৩ কোটি টাকাও এ বছর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পরই এনিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যাদেরকে ফাঁসি দিয়েছেন তাদের প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকের টাকাই প্রধানমন্ত্রী অবেশে খাবেন বলে অনেকে মন্তব্য করছেন। কেউ বলছেন এ টাকা নিয়ে তারা দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিতরণ করবে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার জামায়াতকে পছন্দ না করলেও জামায়াতের টাকা খেতে পছন্দ করে। কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে ফাঁসি দিয়েছে। অথচ আজ মীর কাসেম আলীর প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকের টাকাই প্রধানমন্ত্রী নিচ্ছে।
Discussion about this post