অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মালিবাগ-মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের পর এবার রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ লুটপাট করতে সরকার অধিক ব্যয়ে শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ। ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজটি সরকার পরিকল্পিতভাবেই নির্ধারিত সময়ে শেষ করেনি। লুটপাট করতেই সময়ের সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে পাঁচ দফা নির্মাণ ব্যয়। এ প্রকল্প থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এখন আবার উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় নির্মাণ ব্যয়ও ধরা হয়েছে অনেক বেশি। ২০১৯ সালের মধ্যে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ফ্লাইওভারের মতোই এটা শেষ হবে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জানা গেছে, প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন শহরে মেট্রোরেল নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয় চার থেকে ছয় কোটি ডলার। আর বাংলাদেশে মেট্রোরেলের জন্য কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ হিসাবে ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় হবে ২৭০ কোটি ডলার বা ২২ হাজার কোটি টাকা।
ভারতে কয়েকটি মেট্রোরেল নির্মাণ হিসাবে দেখা গেছে, বেঙ্গালুরুতে মেট্রোরেল (দ্বিতীয় পর্ব) নির্মাণ প্রকল্পটি ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ। এ মেট্রোরেলের ১৩ দশমিক ৭৯ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড। আর ৬১টি স্টেশনের মধ্যে ১২টি মাটির নিচে। এরপরও মেট্রোরেলটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪৭০ কোটি ডলার। এতে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়ছে ছয় কোটি ৫৩ লাখ ডলার। জয়পুরে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলের দুই দশমিক ৭৮ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড। আর ১১টি স্টেশনের তিনটি মাটির নিচে। মাত্র ৫০ কোটি ডলারে নির্মাণ শেষ হয়। এতে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়ে চার কোটি ১৭ লাখ ডলার। এর দ্বিতীয় পর্বের ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলের প্রায় ছয় কিলোমিটার মাটির নিচে। আর ২০টি স্টেশনের পাঁচটি ভূগর্ভস্থ। ১০২ কোটি ডলার ব্যয়ে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হচ্ছে চার কোটি ২৫ লাখ ডলার। চেন্নাই ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোর ২৪ কিলোমিটারই আন্ডারগ্রাউন্ড। আর ৩৪টি স্টেশনের ২০টি মাটির নিচে। বড় অংশই আন্ডারগ্রাউন্ড হলেও এটি নির্মাণে ব্যয় হয় ২৪৫ কোটি ডলার। কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ে পাঁচ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। হায়দরাবাদ ৭২ কিলোমিটার মেট্রোর ব্যয় হয়েছে ২৭৫ কোটি ডলার। কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে তিন দশমিক ৮১ কোটি ডলার। আর নাভি মুম্বাই ২৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রো নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে মাত্র ৬৪ কোটি ডলার। কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হচ্ছে দুই কোটি ৭৪ লাখ ডলার। এটি ভারতের সবচেয়ে কম ব্যয়ের মেট্রো। ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ লক্ষণৌ মেট্রো এর প্রায় ১০ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড। আর ৩৪ স্টেশনের ১০টি মাটির নিচে। মেট্রোটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২০৫ কোটি ডলার। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে পাঁচ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। আহমেদাবাদ ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোর ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ আন্ডারগ্রাউন্ড। এতে ব্যয় হচ্ছে ১৮২ কোটি ডলার। ফলে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হবে পাঁচ কোটি ছয় লাখ ডলার।
হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ভারতে কিলোমিটার প্রতি সর্বোচ্চ ব্যয় হচ্ছে ৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। আর বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটার ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৫০ ডলার। যা ভারতের ব্যয় থেকে দ্বিগুণেরও বেশি। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে ৭ কোটি ডলার বেশি ধরা হয়েছে। এ হিসাবে ২০ কিলোমিটারে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১৪০ কোটি ডলার। প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শেষ পর্যায়ে এসে এ ব্যয় আরও বাড়তে পারে। ফ্লাইওভারের মতো মেট্রোরেল নির্মাণের কাজও সরকার পরিকল্পিতভাবেই শেষ করবে না। তখন লুটপাট করতে সময়ের সঙ্গে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বাড়ানো হবে নির্মাণ ব্যয়ও।
ফ্লাইওভারের মতো এই মেট্রোরেলও পরে একটি লুটপাট প্রকল্পে পরিণত হবে।
Discussion about this post