আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “বিচার বিভাগের স্বাধীনতা… আমি জানি না আমাদের চিফ জাস্টিস কীভাবে বললেন- আইনের শাসন নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নাই।”
প্রধান বিচারপতির সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে সোমবার সংসদে পঞ্চদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে একথা বলেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।
নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরিবিধির গেজেট প্রকাশ নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে পাশ কাটানোর অভিযোগ তোলার পর থেকে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছে।
এর মধ্যেই গত ৩০ এপ্রিল এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায়’ বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিচার বিভাগ স্বাধীন। মাননীয় স্পিকার, আমি একটু আগে বললাম একজন নেত্রীর বিরুদ্ধে মামলায় ১৪০ দিন সময় চায়, আর সেটা দেওয়া হয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আছে বলেই তো এই সময়টা দিতে পারছে। নাহলে তো দিতে পারত না।
“আমাদের যদি কোনো মানসিকতা থাকত, তাহলে নিশ্চয় দিতে পারত না। আমরা তো সেটা করিনি। ইচ্ছামতো সময় দিয়ে গেছে, দিয়ে গেছে, দিয়েই যাচ্ছেন।”
এর আগে প্রধানমন্ত্রী জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাত নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলার বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “কথায় কথায় রিট। একই মামলায় যদি ৪০-৫০ বার রিট হয় আর যদি সেই রিট নিষ্পন্ন হয় তাহলে স্বাধীনতা নাই কীভাবে? এই একটা দৃষ্টান্তই যথেষ্ট। যারা এর সুযোগ নিচ্ছেন তারাও একসাথে তাল মিলাচ্ছেন আইনের শাসন নেই।”
প্রধান বিচারপতির বক্তব্য ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার এক সভায় বলেন, দেশে এখন আইনের শাসন নেই, বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করছে শাসন বিভাগ।
শেখ হাসিনা বলেন, আইনের শাসন আছে বলেই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে সরকার।
“আইনের শাসন আছে বলেই সেটা সম্ভব, নইলে সম্ভব নয়।”
অভিযানে জঙ্গিদের মৃত্যু নিয়ে সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “এখন যদি জঙ্গিদের ধরা হয়, সেখানে কেউ মারা যায় সেটা মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়। এই একটা মানুষের জন্য হয়ত শত শত মানুষকে মৃত্যুবরণ করতে হত কিংবা পঙ্গুত্ব বরণ করতে হত।
“তাদেরকে ধরলেই বা তারা নিজেরাই সুইসাইড করে বোমা ফেললেই… মরলেই আমাদের বিএনপির নেত্রীরও প্রাণ কাঁদে অন্যদেরও প্রাণ কাঁদে। কেন? যোগসূত্রটা কী? গোপন যোগাযোগ আছে কি না…”
বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতা নেই বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সরকার প্রধান।
“দেখলাম অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে দেশে বাকস্বাধীনতা নেই। যারা এই রিপোর্টটা করছে তাদের বলব, টেলিভিশনগুলিতে বসে বসে দিনরাত আমাদের বিরুদ্ধে সমানে কথা বলা হচ্ছে। টক-শো, আলোচনা… একবারে স্বাধীনভাবে। সরাসরি কথা বলা হচ্ছে।”
“কই কেউ কি গিয়ে গলা টিপে ধরে? কেউ তো তা করে না। সংবাদপত্র লিখেই যাচ্ছে। হ্যাঁ, কেউ যদি হলুদ সাংবাদিকতা করে, মিথ্যা-অসত্য তথ্য দেয়, কারও যদি চরিত্র হনন করে তারও অধিকার আছে যে, এখান থেকে কীভাবে সে প্রটেকশন পাবে। কারও বিরুদ্ধে যদি অসত্য তথ্য দেয়, সে যদি মানহানির মামলা করে, এটার জন্য দোষ কীভাবে দেব?”
সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “স্বাধীনতা নাই এটা যারা বলে, এই লোকগুলি একসময় মনে করত একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হলে তাদের মূল্য বাড়ে।
“গণতান্ত্রিক পরিবেশে সেই সুযোগ কম থাকে। তাদের সাধ আছে ক্ষমতায় আসার। জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার সাধ্য নেই। অনেকে চেষ্টাও করেছে। মানুষের কাছ থেকে সাড়া পাননি। এরাই নানা কথা বলে বেড়ায়।”
“যারা বাকস্বাধীনতার কথা বলে..ইমার্জেন্সি থাকলে কি থাকে? যারা আমাদের বিরুদ্ধে বদনাম করেন, ইমার্জেন্সি সরকারের সময় বাকবাকুম বাকবাকুম করতে থাকে। কে তাদের ছিটায়ে দেবে, ওটা খাবে সেই আশায়। এটা তাদের চরিত্র।”
“আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের বদনাম করা, এটাই তাদের চরিত্র। মনে হচ্ছে বদনাম করতে পারলেই কেউ নাগরদোলায় করে বসিয়ে দেবে ক্ষমতায়। সেই আশা তারা থাকুক, সে আশার গুঁড়ে বালি।”
স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্বশীলতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “অধিকার ক্ষুণ্ণ করা স্বাধীনতা না। স্বাধীনতা ভোগ করতে চাইলে তাকে দায়িত্ববোধ নিয়েই ভোগ করতে হবে। এটা হলো বাস্তবতা। আশা করি এটা সকলে মনে রাখবে।”
সূত্র: বিডিনিউজ
Discussion about this post