অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিরোধীপক্ষের উপর বাংলাদেশ সরকারের চলমান নির্যাতন নিপীড়ন ও পুলিশ বাহিনীর বর্বরতা, গুম-খুন নিয়ে তুরস্কের জাতীয় টেলিভিশন ও নিউজ এজেন্সী টিআরটি ওয়ার্ল্ড গত ১ মে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে তারা বাংলাদেশকে একটি দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করে। বাংলাদেশের বিরোধীদলের শীর্ষ দুইজন নেতার পুত্র ও কণ্যার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনটিতে দশটি পয়েন্টে বাংলাদেশের মানবাধিকারের চরম অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনটি সংক্ষিপ্তরুপে ভাষান্তর করে অ্যানালাইসিস বিডির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রগুলো ক্রমবর্ধমান অপরাধ, পুলিশি বর্বরতা, নির্বিচারে গ্রেফতার এবং গুমের অভিযোগে অভিযুক্ত।
বাংলাদেশের সরকার বলছে তারা তাদের অতীতের রাজনৈতিক বিরোধীদের পাঁচ দশক পূর্বে পাকিস্তানের কাছ থেকে দেশভাগের সময় তাদের ভূমিকা নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করছে।
আসুন দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ১০টি বিষয় জানি-
১. পুলিশ প্রায়শই ব্যাপকভিত্তিক বলপ্রয়োগ করে
বাংলাদেশের বিরোধীদলের অন্যতম নেতা মীর কাশেম আলীর মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে বলেন, বাংলাদেশে এমন অহরহ ঘটনা আছে যে পুলিশ হাতকড়া পরানো অবস্থায় খুব কাছ থেকেই বিরোধী নেতাকর্মীদের পায়ে গুলি করেছে। সরকার প্রধান শেখ হাসিনা পুলিশকে যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে প্রতিবাদি বিরোধী নেতাকর্মীদের উপর বলপ্রয়োগ বা গ্রেপ্তারের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা দিয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম, যিনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে আটক অবস্থায় হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁর ছেলে সালমান আল আজমী বলেছেন, কোনো কারন ছাড়াই পুলিশ যেকোনো সময় অবৈধ বলপ্রয়োগ করে থাকে। তিনি আরো বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ মানুষকে অযথা হয়রানি করে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে, এবং এটা সারাদেশব্যাপীই ঘটছে।
২. নির্বিচারে গ্রেফতার রাষ্ট্রটির নীতিতে পরিণত হয়েছে
পুলিশ প্রায়শই কোন ধরনের অভিযোগ ছাড়াই মানুষদের গ্রেফতার করে। যখন কোন ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম না হয় তখন তারা পরিবারের সদস্যদের তুলে নিয়ে যায়, যেখানে বেশিরভাগ সময়ে দেখা গেছে তাদেরকে টাকার বিনিময়ে ছাড়িয়ে আনতে হয়েছে।
৩. গুম হলো মোক্ষম অস্ত্র
এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে বলপূর্বক তুলে নিয়ে গুম করে ফেলার হার আশঙ্কাজনকহারে বেড়েই চলছে। গুম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মত বিরোধীদলের সমর্থকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে।
পরিবারগুলোর গুমের বিরুদ্ধে মুখ খুলে কথা বলারও সাহস নেই রাষ্ট্রীয় প্রতিহিংসার সম্মুখীন হওয়ার ভয়ে। যদিও রাষ্ট্রীয়ভাবে এইসব অভিযোগগুলোকে অস্বীকার করা হয়।
৪. সরকার বিরোধীদের কন্ঠ পুরোপুরিভাবে রোধ করা হয়েছে
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে বিরোধীদের বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপি’র কন্ঠরোধ করার জন্য সমালোচিত হয়েছে।
২০১৩ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের সরকারের সাথে যোগসাজগ রয়েছে এবং তারাই জামায়াতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
৫. বিরোধীদলগুলো ঐতিহাসিকভাবে সরকারের নিশানায় পরিণত হয়েছে
দীর্ঘদিন থেকেই হাসিনা সরকার জামায়াতকে টার্গেটে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে মিলে ভারতের সহায়তাপ্রাপ্ত গেরিলাদের বিরোধীতা করার অভিযোগে তাদের অনেক নেতাকেই বিতর্কিত ট্রাইবুনালের মাধ্যমে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ট্রাইবুনালের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৬ জন শীর্ষপর্যায়ের বয়স্ক বিরোধী নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
৬. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কার্যত ‘আন্তর্জাতিক’ নয়
নামের সাথে ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দ যুক্ত থাকলেও বাংলাদেশের ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত’ মূলত একটি স্থানীয় আদালত। এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ মানবাধিকার সংগঠনসমূহ বরাবরই এই আদালতের আন্তর্জাতিক মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
৭. শেখ হাসিনা এই ট্রাইবুনালকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করছেন
এই আদালতে রাজনৈতিক লোকদেখানো বিচার হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনের জন্য এই আদালত ব্যবহার করেছে এবং এখন পর্যন্ত যাদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে সকলেই বিরোধীদলের নেতা ছিলেন।
৮. মানুষ কি এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ করেছে?
বিক্ষোভ, সভা-সেমিনার, সাংবাদিক সম্মেলন নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সেগুলোকে পড়তে হয় প্রশাসনের দমন নিপীড়নের মুখে। বেশিরভাগ মানুষই এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে। কিন্তু সরকারের দমন পীড়নের মুখে প্রতিবাদ করা কঠিন।
৯. কেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই সমস্যাগুলো গুরুত্ব পায়নি?
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এই সমস্যার গুরুত্ব দিয়েছে, বিশেষ করে তুরস্কও এই বিষয়ে সরব হয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সমস্যার কারণে এইগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ততটা গুরুত্ব পায়নি।
ভারত বাংলাদেশের এই নিপীড়নে ভূমিকা রাখছে। বর্তমান সরকারের মিত্র হিসেবে পরিচিত ভারত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের এই সমস্যার ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় করায় যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে।
১০. সমস্যার কি কোন উত্তরণ আছে?
একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই পারে বাংলাদেশকে এই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ খুলে দিতে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি পক্ষে দাঁড়ায় তাহলে একটি সুন্দর পরিবর্তন সম্ভব।
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনের লিংক: Bangladesh’s rogue state: 10 things to know
ভাষান্তর: অ্যানালাইসিস বিডি
Discussion about this post