ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী
প্রধানমন্ত্রী গত ৭-১০ এপ্রিল ২২টি চুক্তি ও সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষর করে ঢাকায় ফিরে আমাদেরকে সে চুক্তি ভুলিয়ে দেয়ার জন্য নানা ধরনের কোশেশ ও কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ভারতের সাথে যেসব চুক্তি ও সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষর করেছেন, তার কোনোটাই বাংলাদেশের স্বার্থের অনকূল নয়, বরং এসবের মাধ্যমে তিনি দেশের চরম সর্বনাশ ডেকে এনেছেন। অনেক চুক্তির শিরোনাম দেখে মনে হতে পারে যে, এটি বাংলাদেশের অনুকূলে যাচ্ছে। কিন্তু ভুল। এসব চুক্তির মধ্যে ভারত কৌশলে এমন বিষয় ঢুকিয়ে দিয়েছে, যাতে বাংলাদেশকে ভারতের অধীনস্থ করা যায়। বাংলাদেশের আমলারা যদি ইংরেজি বুঝে থাকেন, তাহলে তারা সেটা সম্যক উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আর সব চেয়ে বড় কথা, কী সব চুক্তি করে এলেন, আমরা তার সবগুলোর শিরোনামও জানতে পারলাম না। বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা তো বলেই দিলেন যে, কতগুলো চুক্তি ও সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষর হয়েছে, তা তিনি তখনো গুনে দেখতে পারেননি। অর্থাৎ ঝোপা ঝোপা চুক্তি ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষর করে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বিরোধী দলের পক্ষ থেকে আগেই দাবি করা হয়েছিল যে, কী কী চুক্তি করছেন, তা জনগণের কাছে আগাম প্রকাশ করুন। তখন বাকপটু আওয়ামী মন্ত্রীরা বলছিলেন, সব চুক্তি প্রকাশ করা হবে। তারা জানতেনই না যে, কোনো চুক্তির বিবরণই জাতির সামনে তো দূরের কথা, সংসদেও প্রকাশ করা হবে না। প্রকাশ করা হয়নি। এখন ওই মন্ত্রীরা একেবারে চুপ মেরে গেছেন। একটি চুক্তির বিবরণও প্রকাশ করা হয়নি। আওয়ামী এমপিদের কি লজ্জা আছে? তারা আইন প্রণেতা! চুক্তিগুলোর বিস্তারিত বিবরণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান। কিন্তু সবাই জানেন, সে সাহস কারো নেই। এ রকম দু-একটা সাহসী কথা বলে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন, এমপিগিরি হারিয়েছেন। সেটা তিনি হজের বিরোধিতা করার জন্য হারাননি। ধারণা করা হয়, তিনি প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে বেফাঁস মন্তব্য করেছিলেন বলে হারিয়েছেন। যাক, মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে শুভবুদ্ধি দিয়েছেন। তিনি এবার হজে যাচ্ছেন। আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর গুনাহখাতা মাফ করে দেন। সুতরাং আর কেউ সংসদে দাঁড়িয়ে যে ভারতের সাথে সম্পাদিত চুক্তি বিষয়ে প্রশ্ন করার গুর্দা রাখেন না, সেটা আর বলে দিতে হয় না।
কিন্তু দিল্লির সাথে সম্পাদিত প্রতিরক্ষাবিষয়ক সমঝোতা চুক্তি আমাদের জন্য বিশাল উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চুক্তির বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশিত হয়নি। হয়ত কোনো গণতান্ত্রিক সরকার আসার আগে তা প্রকাশিত হবেও না। এখন প্রকাশিত হয়েছে, ভাসা ভাসা দু-চার লাইন। তা থেকেই বোঝা গিয়েছে যে, আমরা এক ভয়ানক বিপদের মধ্যে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি। ভারতের সাথে শেখ হাসিনার সম্পাদিত এই প্রতিরক্ষা কাঠামো সমঝোতাস্মারক হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য অটেকসই, অবাস্তব ও অপ্রয়োজনীয়। তাদের একটি ‘অত্যন্ত গোপনীয়’ সামরিক নীতি রয়েছে নিজস্ব প্রয়োজন মেটানোর জন্য। কিন্তু এই সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে গেছে। ভারতের কাছে তা উন্মোচিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ ধরনের একটি নীতি তৈরি হয় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিবর্তনশীল সম্ভাব্য হুমকির পরিস্থিতি সামনে রেখে। এ ছাড়া প্রতিরক্ষা নীতিতে থাকে কোনো দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা, বহিঃশত্রুর আক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ নাশকতা মোকাবেলা করার কৌশল। আবার সময়ের পরিবর্তনের সাথে এতে চাহিদার সমন্বয় ঘটানো হয়। সেটিও রাষ্ট্রের একান্ত গোপনীয় বিষয়। কিন্তু ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা কাঠামো চুক্তির মতো আগ্রাসী চুক্তি সেই গোপনীয়তা নষ্ট করে দিলো। তা ছাড়া বাংলাদেশ কিভাবে দেশের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করবে, তা আত্মরক্ষামূলক হবে নাকি আক্রমণাত্মক হবে, সেটিও নির্ভর করে শত্রুর মনোভাবের ওপর। এখন প্রতিরক্ষা নিয়ে যারা ভাবছেন, তাদের কাছে এটাই মূল আলোচ্য বিষয়। যদিও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখান থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য সরকার হেফাজতে ইসলামের সাথে সমঝোতা করে বসেছে। তার ওপর জঙ্গি নাটক তো আছেই। কিন্তু তাতে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা নীতির আলোচনা হারিয়ে যাবে না। ভারতের সাথে এই প্রতিরক্ষা সমঝোতাস্বাক্ষরের ফলে ভারত আমাদের প্রতিরক্ষা কৌশলের অনেক গোপন বিষয়ই অবগত হবে, সেটি কারো কাছে কাম্য নয়। নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশের যদি কোনো বিপদ আসে, সেটি আসবে প্রতিবেশী দেশ থেকেই। দূরবর্তী দেশ থেকেও নিরাপত্তা হুমকি আসতে পারে, তবে তা দূরবর্তীই। সে দিক থেকে আমাদের প্রতিরক্ষাবাহিনীকে আশির দশক থেকে জনসম্পৃক্ত করে গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও জনগণ একাকার হয়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে।
১৯৭১ সালেও স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় একই ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। ২৮ হাজার বাঙালি সৈন্য ইপিআর (বর্তমানে বিজিবি) মুক্তিবাহিনীর সাথে একাকার হয়ে এক লাখ ৪৭ হাজার লোকের ব্যূহ গড়ে তুলেছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে সেনাবাহিনীকে সুসংহত করার কাজ শুরু হয়। ১৯৭৬-১৯৮১ সালে ব্রিগেডগুলোকে ডিভিশনে রূপান্তর করা হয়। সশস্ত্রবাহিনীতে যোগ করা হয় আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র। আশির দশকের এই ধারা অব্যাহত রেখে আমাদের প্রতিরক্ষা নীতি আরো জোরদার করে তোলা হয়। তা ছাড়া বাংলাদেশের ভূগোল, ভূসংস্থান, অভ্যন্তরীণ সংযোগ ও ভূ-কৌশলগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের কারো সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তিতে যাওয়া সঙ্গত নয়। এটা শুধু ভারত বলে কথা নয়, চীন, রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও নয়। বাংলাদেশীরা এটা ভাবতেও পারেন না যে, ভারত-চীন যুদ্ধ লাগলে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও ট্যাঙ্কের সাঁজোয়া বহর বাংলাদেশের ওপর দিয়েই তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে যাবে। এ ক্ষেত্রে বিপদ যেটা হবে, তা হলো ওই সব রাজ্যের স্বাধীনতাকামীরা ভারতীয় সামরিক সরঞ্জামবাহী যানবাহনের বহরের ওপর হামলা চালাবে। তাতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সঙ্কট আরো বড় হয়ে দেখা দেবে। আসলে ভারতের সঙ্গে এই প্রতিরক্ষা সমঝোতা বাংলাদেশকে ভারতের গ্রাসের ভেতর নিয়ে যেতে পারে। ফলে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণবিনিময় এবং দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় মহড়াও অনুষ্ঠিত হতে পারে। এখন ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য কয়েকটি দেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ শুরু করেছে। অপর দিকে আবার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর একটি বড় অংশীদার। সে ক্ষেত্রে ভারতের সাথে এ রকম একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি বাংলাদেশের সুন্দর অবস্থানকে নড়বড়ে করে তুলবে। আর সে কারণেই বাংলাদেশের সেনাবাহিনী নিজস্ব শক্তি সঞ্চয়ে অপর কোনো দেশের সহায়তার প্রয়োজন নেই। আর তাই সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষর ভুল হয়েছে। ঢাকা বা দিল্লি সরকারের আর এক পা’ও অগ্রসর হওয়া উচিত নয়।
এই প্রতিরক্ষা সমঝোতাস্মারকে ভারত একটি আপাতত আকর্ষণীয় প্রস্তাব দিয়েছে। তারা বলেছে, ভারতীয় অস্ত্রশস্ত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যুক্ত করার জন্য দিল্লির সরকার ঢাকাকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে। যদিও ভারত বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদন করে এবং সবচেয়ে বড় যেটা করে তা হলো যুদ্ধবিমান সংযোজন। তা সত্ত্বেও প্রতিবেশী দেশগুলোয় ভারতের অস্ত্রের বাজার নেই। আর ভারত এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। আর ভারত এখন এসব অস্ত্র আমদানি করে প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল থেকে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব দিয়ে ভারত আমাদেরকে কার্যত গিনিপিগ করার চেষ্টা করছে। এখানে আরো বিপজ্জনক বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যদি ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’ অস্ত্রশস্ত্র¿ ব্যবহার শুরু করে তাহলে নতুন সঙ্কট শুরু হবে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যের স্বাধীনতাকামীরা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রধানত ভারতে তৈরি অস্ত্রশস্ত্রই ব্যবহার করে। তা ছাড়া ইসলামপন্থী জঙ্গিদের হাতেও রয়েছে ভারতীয় অস্ত্রশস্ত্র। বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের হাতেও রয়েছে ভারতীয় অস্ত্র। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভারতীয় অস্ত্র ব্যবহার শুরু করলে ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলার সুযোগ পাবেন যে, এসব অস্ত্র সরকারিভাবেই তাদের কাছে দেয়া হচ্ছে। এই অবিশ্বাস তৈরিও অপ্রয়োজনীয়।
কার্যত এই চুক্তির মাধ্যমে ভারতের সমর কৌশলবিদেরা বাংলাদেশের ঘাড়ে এক বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন। ভারতের প্রধান শত্রু চীন এবং পাকিস্তান। এই দুই শক্তির সাথে কোনো সঙ্ঘাত বাধলে সম্প্রতি সম্পাদিত সমঝোতার বলে বাংলাদেশকে তাতে অংশ নিতে হবে। এটা ভারতের বড় আকারের প্রতিরক্ষা নীতির অংশ। ফলে বাংলাদেশকে কখনো ভারতের সাথে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের সময় চীন আসামের তেজপুর পর্যন্ত চলে এসেছিল, সেটা ছিল তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের অত্যন্ত কাছে। এখন দিল্লি অভিযোগ করছে, ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে চীন। এ ছাড়া চীন ও ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের যে ভারসাম্যগত অবস্থান রয়েছে, সম্প্রতি সম্পাদিত চুক্তিতে তা উপেক্ষা করা হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে, বাংলাদেশের মানুষ আক্রান্ত হলে গণযুদ্ধেই বেশি আগ্রহী হয়। যদি সে রকম যুদ্ধ বাধেই, তাহলে আমরা নিশ্চিত যে সেনাবাহিনী ও জনগণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেই গণযুদ্ধে শরিক হবে এবং শত্রুকে প্রতিহত করে দেবে। তা ছাড়া ভারত বাংলাদেশে যেসব অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব করেছে সেখানে সামরিক বিমান ছাড়া বাকি সব কিছুই বাংলাদেশ চীনের সহযোগিতায় তৈরি করে।
তবে এখন পর্যন্ত ভালো ব্যাপার হলো, এই চুক্তি এখনো বাধ্যতামূলক হয়নি। এই চুক্তি তখনই বাধ্যতামূলক হবে, যখন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ তা অনুমোদন করবে। তবে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের কাছে এই চুক্তিটি নানা কারণে আমাদের জন্য ক্ষতিকর।
ভারতের নিরাপত্তা হুমকি প্রধানত চীন-পাকিস্তানকেন্দ্রিক। ভারত ভয় পাচ্ছে যে, চীনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে চীন বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যকার শিলিগুড়ি করিডোর বন্ধ করে দেবে। এতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে কেন্দ্রের নিজস্ব পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এই প্রচেষ্টায় কে সফল হবে, তা নির্ভর করবে বাংলাদেশ কাকে সমর্থন দেয় তার ওপর। আর সে কারণেই চীন বা ভারতের সাথে বাংলাদেশের এই ধরনের চুক্তি হবে আত্মঘাতী।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। ফলে বাংলাদেশের ওআইসি দেশগুলোর সাথে সংযুক্ত থাকাই অধিকতর শ্রেয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মুসলমানদের পবিত্র স্থান মক্কা ও মদিনা এবং সৌদি আরবে কেউ হামলা চালালে ঢাকা সেখানে সৈন্য পাঠাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ দিকে আবার ভারত কিছুতেই মুসলিমপ্রধান কাশ্মির সমস্যার সমাধান করতে রাজি নয় এবং রাজি নয় এই সমস্যার সমাধানে জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাব মেনে নিতে।
বাংলাদেশ কাউকে শত্রু না বানিয়ে জাতিসঙ্ঘের শান্তি রক্ষা বাহিনীতে বিশেষ ভূমিকা রেখে মর্যাদার আসন লাভ করেছে। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ভারত ও অন্যান্য পরাশক্তি থেকে সমদূরত্ব বজায় রেখেছে। এ অবস্থা বহাল থাকলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হবে।
বাংলাদেশের অবকাঠামো নির্মাণে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সেনাবাহিনী পরিচালিত মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী প্রধান প্রধান সড়ক ও সেতু নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধান করছে। তা ছাড়া বাংলাদেশের পারমাণবিক প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট দেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশকে সংযুক্ত করা যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই, যেটা ভারত চাইছে।
দিল্লি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সাবমেরিনে জ্বালানি সরবরাহ ও মেরামতির যে কৌশলগত চুক্তি করেছে, চীন-রাশিয়া তার বিরুদ্ধে। রাশিয়া বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সরবরাহকারী। ভারতের সাথে একই প্রকল্পে পরমাণু সহযোগিতার চুক্তি করলে মস্কোর ক্ষুব্ধ হওয়া খুব স্বাভাবিক। সুতরাং, ঢাকা-দিল্লি প্রতিরক্ষার সহযোগিতার বিষয়টি যেখানে আছে সেখানে থাকাটাই সঙ্গত। তা না হলে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন মেরুকরণের সৃষ্টি হবে। ঢাকাকে দেখা হবে চীনবিরোধী এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সহযোগী হিসেবে। সেখানে সমূহ বিপদের আশঙ্কা।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
[email protected]
সূত্র: নয়াদিগন্ত
Discussion about this post