অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের মধ্যে ভাঙ্গন তৈরি করতে হেফাযতেরই কিছু নেতাকে দিয়ে গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে সরকার। হেফাযতের এক নেতা মারপত এমন তথ্যই জানা গেছে। ‘নিবন্ধন নিতে চায় হেফাজত’ শিরোনামে সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। হেফাজতের কয়েকজন নেতা এবিষয়ে নির্বাচন কমিশনে যোগাযোগ করছে বলেও সংবাদগুলোতে উল্লেখ করা হয়। এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরই হেফাজতকে নিয়ে আবার নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তবে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ীই সব কিছু হচ্ছে।
রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন নেয়ার জন্য কয়েকজন নেতা নির্বাচন কমিশনে যোগাযোগ করছেন এমন সংবাদের সত্যতা জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হেফাজতে ইসলামের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, এগুলো সরকারের ভেতর থেকে করানো হচ্ছে। লালবাগের গ্রুপটিকে দিয়েই সরকার এসব করছে। সরকারের টার্গেট লালবাগের গ্রুপটিকে দিয়ে হেফাজতের একটি নিবন্ধন দিতে পারলে তখন এটা ঢাকা কেন্দ্রীক রাজনৈতিক দল হয়ে যাবে। আল্লামা আহমদ শফী তখন আর এটা নিয়ে মাঠে নামতে পারবে না। হেফাজতে ইসলামকে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করাই সরকারের মূল উদ্দেশ্য।
গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হেফাজত নেতাদের বৈঠক নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে আরও নতুন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত যাতে হেফাজতকে কোনোভাবেই কাজে লাগাতে না পারে সেজন্য ২০১৩ সালের ৫ মে’র পর থেকেই হেফাজতকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার গোপন এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নামে সরকার। এ গোপন এজেন্ডার আলোকেই সরকার হেফাজতকে দুইভাগে বিভক্ত করে ফেলে। একটি হল লালবাগ মাদরাসা কেন্দ্রিক যার নেতৃত্বে আছেন মুফতী ফয়জুল্লাহ, আর বারিধারার মাদানীনগর মাদরাসা কেন্দ্রিক আরেক গ্রুপ যার নেতৃত্বে আছেন নূর হোসাইন কাসেমী। দুই গ্রুপই হেফাজত ঘোষিত কর্মসূচি পৃথক পৃথকভাবে পালন করে থাকে। আর মুফতী ফয়জুল্লাহ গ্রুপটি সব সময়ই সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করছে।
এদিকে মুফতী ফয়জুল্লাহ হলেন আব্দুল লতিফ নেজামী নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব। ইসলামী ঐক্যজোট দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত ছিল। একটি পর্যায়ে আব্দুল লতিফ নেজামী মুফতী ফয়জুল্লাহর ফাঁদে পা দিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে একটি গ্রুপ নিয়ে বেরিয়ে আসে। পরে জানা গেছে, সরকারের পরিকল্পনার আলোকেই মুফতী ফয়জুল্লাহ বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বেরিয়ে আসে। আর এক্ষেত্রে সরকারের সহায়ক হয়ে কাজ করেছেন মুফতী আমিনীর ছেলে হাসনাত আমিনী। এরপর থেকে মুফতী ফয়জুল্লাহ সরকারের পরিকল্পনার আলোকেই সব কিছু করে যাচ্ছেন।
সরকারের একটি সূত্রে জানা গেছে, সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে গ্রীকদেবীর মূর্তি সরকারের পরিকল্পনার আলোকে বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে হেফাজতকে মাঠে নামিয়ে দাবি মানার নামে নিজেদের বশে আনাই ছিল সরকারের টার্গেট। এক্ষেত্রেও সরকার সফল হয়েছে।
সূত্রটি থেকে আরও জানা গেছে, এত কিছুর পরও সরকার হেফাজতকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এখন সরকারের টার্গেট হল হেফাজতকে খন্ড খন্ড করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। এ লক্ষ্যেই সরকার মুফতী ফয়জুল্লাহ গ্রুপকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। সরকার মনে করছে, নিবন্ধন হয়ে গেলে তখন এটাকে আর অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করে আহমদ শফী মাঠে নামতে পারবে না। তখন এমনিতেই সংগঠনটি আহমদ শফীর হাত ছাড়া হয়ে যাবে।
Discussion about this post