অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
অনিচ্ছা সত্ত্বেও সরকারের প্রচণ্ড চাপের মুখে গণভবনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফী ও তিন শতাধিক কওমী আলেম। এমনই তথ্য জানা গেছে সংগঠনটির একজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে।
গত ১১ এপ্রিল গণভবনে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফীসহ তিন শতাধিক কওমী আলেমের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্ট সমালোচনার ঝড় এখনো থামেনি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার হেফাজতের সঙ্গে গোপনে আতাঁত করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কওমী মাদরাসার স্বীকৃতির ঘোষণা ও সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গন থেকে ভাস্কর্য সরানোর দাবির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সহমত পোষণের ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে এখন প্রতিদিনই নতুন নতুন ব্যখ্যা দেয়া হচ্ছে।
সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও সরকারদলীয় নেতারা এনিয়ে জনগণকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন যে, হেফাজত কিংবা কওমী আলেমদের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক বা জোট হয়নি।
এদিকে, হেফাজতে ইসলাম কওমী মাদরাসা ভিত্তিক সংগঠন হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দাবি করেছেন, হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে কওমী মাদরাসার কোনো মিল নেই। এ বক্তব্যের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হেফাজতকে জামায়াতের সংগঠন বানানোর চেষ্টা করছেন বলেও মনে করছেন অনেকে। আর নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমানতো বলেই দিয়েছেন যে, ৫ মে হেফাজত কোনো গণ্ডগোল করেনি। সর্বশেষ গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কওমি মাদ্রাসার ১৪ লাখ শিক্ষার্থীকে অন্ধকারে রেখে সরকার উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে না। তাদের জীবনটা কি আমরা ভাসিয়ে দেব?
প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীরা হেফাজতের সঙ্গে বৈঠক ও কওমী মাদরাসার স্বীকৃতি নিয়ে সবাই এক সুরে কথা বললেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ভিন্ন তথ্য। সরকারের প্রচণ্ড চাপের মুখে হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফী ও কওমী মাদরাসার তিন শতাধিক আলেম সেদিন গণভবনে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। পরিস্থিতির কারণে তারা এবিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারছেন না।
হেফাজতের একজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে এবিষয়ে কথা বললে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকার যেভাবে কওমী মাদরাসার স্বীকৃতি দিয়েছে কওমী আলেমরা আসলে এভাবে স্বীকৃতি চায়নি। ফরিদ উদ্দিন মাসুদকে দিয়ে একটি গ্রুপ সৃষ্টি করে সরকার এ মান নিতে কওমী মাদরাসাগুলোকে বাধ্য করেছে।
বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে যারা আন্দোলন করে তারাতো রাজপথ থেকে দাবি আদায় করে। দাবি আদায়ে আপনারা গণভবনে গেলেন, এতে কি সরকারের সঙ্গে আপনারা আপস করেছেন এমনটা বুঝায় না? এমন প্রশ্নের জবাবে হেফাজতের ওই নেতা বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে’র পর থেকেই সরকার আমাদের ওপর বিভিন্নভাবে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে আসছে। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনের সময় যাতে শাপলা চত্বরের ঘটনাটা আমরা জনগণের সামনে না আনি সেজন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকজন নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চাপ দিয়ে আসছে।
এই হেফাযত নেতার মতে, কওমী মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি মাত্র একটা ইস্যু। সরকার এ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে আল্লামা আহমদ শফীকে গণভবনে যেতে বাধ্য করেছে। সরকার বলেছে গণভবনে না গেলে সবগুলো মামলা আবার সক্রিয় করা হবে। সরকারের হয়রানি ও নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে একটু কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে চুল পরিমাণও সরে যাইনি। শাপলা চত্বরকে কোনোভাবেই ভুলা সম্ভব হবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেশবাসী সবই তখন জানতে পারেবে।
Discussion about this post