অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে স্থাপিত ভাস্কর্য বা গ্রিক দেবীর মূর্তি সরানোর বিষয়ে ওলামায়ে কেরামকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে আশ্বস্ত করা হলেও এখন সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছে সরকার। সরকারের এই পিছুটানে আবার ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে হেফাযতে ইসলামসহ দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামগণ। গণভবনে ডেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আলেমদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন বলেও কেউ কেউ বলাবলি করছে। কওমী মাদরাসাকে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা থেকেও সরকার সরে আসতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
গত ১১ এপ্রিল রাতে গণভবনে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীসহ তিন শতাধিক কওমী আলেমদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় ভাস্কর্যটির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি নিজেও এটা পছন্দ করিনি। বলা হচ্ছে এটা নাকি গ্রিক মূর্তি…আমাদের এখানে গ্রিক মূর্তি আসবে কেন? আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা এখানে থাকা উচিৎ না। এটা কেন করা হল? কারা করল? কীভাবে, জানি না। গ্রিকদের পোশাক ছিল এক রকম। এখানে আবার দেখি শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। এটাও হাস্যকর হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে খুব শিগগিরই বসব। আপনারা ধৈর্য ধরেন, এটা নিয়ে হৈ চৈ করা নয়। আমার উপর আপনারা এটুকু ভরসা রাখবেন। এটায় যা যা করা দরকার আমরা তা তা করব।
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই এনিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। আর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ বক্তব্যের জন্য একদিকে আলেম সমাজের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানানো হচ্ছে আর অপরদিকে, ভাস্কর্যের পক্ষের লোকজন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানাচ্ছে। হেফাজতের দাবি মেনে নিয়ে সরকার মৌলবাদীদের সঙ্গে নতুন করে আতাঁত করছে বলেও কেউ কেউ অভিযোগ করছে।
এদিকে, ভাস্কর্য সরানোর দাবির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একাত্মতা ঘোষণা নিয়ে যখন চলছে পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক, তখন হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আসে আরেক নাটকীয় ঘোষণা। শনিবার দলটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, ভাস্কর্য সরানো না সরানোর এখতিয়ার একমাত্র সুপ্রিমকোর্টের।
ভাস্কর্য সরানো নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান পরিবর্তন করায় এনিয়ে আবার নতুন করে শুরু হয় বিতর্ক। হেফাজতে ইসলামসহ আলেম সমাজ আবার ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে আওয়ামী লীগের দ্বিমুখি অবস্থান নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ধর্মীয় সংগঠনগুলোর নেতারা মনে করছেন সরকার বামপন্থীদের কাছে নতিস্বীকার করেছে।
এদিকে আজ হেফাযতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা বাবুনগরী সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে গ্রিক দেবি অপসারণের দাবিতে জনমত ঐক্যবদ্ধ। ঈমান-আক্বীদা, জাতীয় মর্যাদা ও ঐতিহ্য বিরোধী এই মূর্তি অপসারণে কোন ধরণের তালবাহানা ও অজুহাত তৈরির চেষ্টা দেশবাসী কখনোই মেনে নেবে না। দেশবাসীকে সাথে নিয়েই হেফাজত ন্যায্য দাবী আদায়ে প্রয়োজনে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
অপরদিকে, ভাস্কর্য সরানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসায় কওমী মাদারাসার মান প্রদান নিয়েও ওলামায়ে কেরামের মধ্যে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করছেন, ভাস্কর্য সরানোর মতো কওমী মাদরাসাকে সমমানের স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা থেকেও সরকার সরে আসতে পারে। তাই, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতির ওপর তারা এখন আর আস্থা রাখতে পারছেন না। দাবি মেনে নেয়ার নামে সরকার রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায় বলেও অভিযোগ করছেন তারা।
Discussion about this post