‘পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। এখনও অপেক্ষায় আছি, তিনি ফিরবেন। সব সময় একটি ব্রেকিং নিউজের অপেক্ষায় থাকি। কখনও হয়তো টেলিভিশন স্ক্রলে দেখা যাবে ইলিয়াস আলীর খোঁজ মিলেছে।’ রোববার যুগান্তরের কাছে এভাবেই স্বামীকে ফিরে পাওয়ার অপেক্ষার কথা জানান ৫ বছর ধরে নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি এম. ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে ইলিয়াস আলীর ব্যবহৃত গাড়িটি রাজধানীর মহাখালী এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছিল পুলিশ। সেই থেকে ইলিয়াস আলীর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার সঙ্গে নিখোঁজ হন ব্যক্তিগত গাড়িচালক আনসার আলী। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে স্বামীকে খুঁজে পাওয়ার আশায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার কাছে গিয়েছেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী লুনা। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও গিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মতিন যুগান্তরকে বলেন, ইলিয়াস আলী নিখোঁজের বিষয়ে এখনও অনুসন্ধান চলছে। নিখোঁজের পর থেকেই আদালতে প্রতিমাসে অগ্রগতি প্রতিবেদন দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ মার্চ মাসেও প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অগ্রগতি নেই। তবে তদন্ত অব্যাহত আছে।
পুলিশ জানায়, ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ব্যাপারে বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল। ওই সময় হাইকোর্টে একটি রিটও হয়েছিল। সেই রিট অনুযায়ী হাইকোর্ট পুলিশকে প্রতিমাসে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলেছিল। ইলিয়াস আলীর সন্ধান না মিললেও প্রতিবেদন নিয়মিত দেয়া হচ্ছে।
ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা বলেন, অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চায় না। পাঁচ বছরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। পরিবারের সবাই প্রতিটি মুহূর্ত তার ফেরার অপেক্ষায় থাকে। আমরা এখনও বিশ্বাস করি তিনি বেঁচে আছেন এবং আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। এদিকে ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেয়া এবং গুম-হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে আজ সকালে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছে বিএনপি।
সিলেটে বিক্ষোভ সমাবেশ : সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি : সিলেট ব্যুরো জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ৫ বছর অতিবাহিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু করেছে ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ। রোববার প্রথম দিনে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইলিয়াস আলী গুমের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে নেতাকর্মীরা ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেয়ার আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার শপথ গ্রহণ করেন। এ সময় বক্তারা বলেন, সরকার জনগণের প্রতিবাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতেই পরিকল্পিতভাবে ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। জনগণকে ভয় পায় বলেই ইলিয়াস আলী গুমের প্রতিবাদ করার সুযোগও সরকার দিতে চায় না। ভোটারবিহীন সরকার আজ সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন। এজন্য রাস্তায় জনগণ দেখলেই সরকার ভয় পায়। সরকারের পতন ঘটিয়ে ইলিয়াস আলী গুমের বিচার করা হবে। এই গুমের বিচার হবে মানবতাবিরোধী অপরাধের আইনে। এ সময় ছাত্রনেতা ইফতেখার আহমদ দিনার, জুনেদ আহমদ, আনসার আলীসহ দেশের গুম হওয়া সব নেতাকে ফিরিয়ে দেয়ার জোর দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া ইলিয়াস আলী গুমের প্রতিবাদে আন্দোলনের রূপকার অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ কারাবন্দি সব বিএনপি নেতার মুক্তির দাবি জানান বক্তারা।
ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক শেখ মখন মিয়া চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে ও সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট এটিএম ফয়েজ এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক আজমল হোসেন রায়হানের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন, প্রবাসী বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান মুজিব, সুদীপ কুমার সেন বাপ্পু, শাহাজামাল নুরুল হুদা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নাজিম উদ্দিন লস্কর, সিটি কাউন্সিলর দিনার খান হাসু, জেলা জাসাস’র আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, নুরুল কবির খোকন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমদ, মহানগর মহিলা দলের সভাপতি অধ্যাপক সামিয়া জামান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সিসিকের প্যানেল মেয়র রুকশানা বেগম শাহনাজ, জেলা মহিলা দলের সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জহুরা জেসমিন, সহসভাপতি আসমাউল হাসনা খান, সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর সালেহা কবির শেপী, বিএনপি নেতা মতিউল বারী চৌধুরী খুর্শেদ, জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর আমিনা বেগম রুমি, জেলা জাসাস যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আহমদ রানু প্রমুখ।
সূত্র: যুগান্তর
Discussion about this post