• যোগাযোগ
সোমবার, মে ২৬, ২০২৫
Analysis BD
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে
No Result
View All Result
Analysis BD
No Result
View All Result
Home কলাম

এখন আর বললে কী হবে!

এপ্রিল ১৫, ২০১৭
in কলাম, মতামত
Share on FacebookShare on Twitter

ফরহাদ মজহার

বেশ কিছু ঘটনা দ্রুত ঘটে গিয়েছে। পাঠ্যবই সম্পর্কে হেফাজতে ইসলামের আপত্তি সরকার মেনে নিয়েছে। বলা বাহুল্য যারা জাতিবাদী এবং নিজেদের বাম, প্রগতিশীল মনে করেন তারা মহা খ্যাপা খেপেছে। সে এক দেখার মতো ব্যাপার! সেটা মিটতে-না-মিটতেই দেখা গেল খোদ শেখ হাসিনার সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সভা এবং শেখ হাসিনার কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি ঘোষণা। তদুপরি শেখ হাসিনা বলছেন, আদালত প্রাঙ্গণে থেমিসের মূর্তি তার নিজেরও পছন্দ নয়। তাহলে থেমিসের মূর্তিও তাহলে সরছে। কওমি সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি (accreditation) মানে কওমি মাদ্রাসাকে রাষ্ট্রের অধীন করা নয়। যে কারণে শেখ হাসিনা নিজেও বলেছেন- এই ক্ষেত্রে ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার নীতিই প্রযোজ্য হবে। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে কওমি আলেম-ওলেমাদের আন্দোলন বিজয়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় গিয়ে পৌঁছেছে। এটা বিশেষভাবে বলছি এ কারণে যে হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল নয়, ফলে তারা যা অর্জন করেছে তার অধিক কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তাদের থাকার কথা নয়। তাদের কাজ ইমান-আকিদা রক্ষা। যদি তা-ই হয় তাহলে কওমি মাদ্রাসার সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হেফাজতের সম্ভাব্য রাজনৈতিক ভূমিকার পরিসমাপ্তিও বটে। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা এখনই কিছু বলতে পারি না। আরো পর্যবেক্ষণ দরকার। আধুনিক ও অনৈসলামিক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ইমান-আকিদা সংরক্ষণের জন্য কতটা মর্যাদার সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ তর্ক হতে পারে। তবে এটা স্পষ্ট, কওমি মাদ্রাসার অভ্যন্তরে যারা সরকারি স্বীকৃতি পেতে কাতর এবং আধুনিক রাষ্ট্র ও সমাজে চাকরিবাকরি পাবার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছিলেন, তারাই শেষাবধি জিতলেন। রাষ্ট্রের এখতিয়ারের বাইরে ইমান-আকিদা রক্ষার যে লড়াই এতকাল দেওবন্দ করে এসেছে তার ওপর আধুনিক রাষ্ট্রের ছায়া পড়া শুরু হোলো। আসলে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরাই কিন্তু জয়ী হয়েছেন।

আসলে হেফাজত ও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের এই অভূতপূর্ব সন্ধি বিচার বা পর্যালোচনা করা অত সরল ও সহজ কাজ নয়। ইতিহাস সরল রেখায় হাঁটে না, এমনকি সরিসৃপের মতোও নয়। তার নৈর্ব্যক্তিক চলন আরো মজাদার। পর্যালোচনার কাজ আমরা অবশ্যই করব। কারণ হেফাজতকে সমাজ ও রাজনীতির মূল ধারায় আনা এবং তাদের সমাজের প্রান্তে অদৃশ্য করে রাখা বা অস্বীকার করার আমরা সব সময়ই বিরোধী ছিলাম। বিশেষত জাতিবাদী ও তথাকথিত বামপন্থী ফ্যাসিস্টদের প্রতিরোধ করবার জন্য ‘রাজনৈতিক পরিসর’ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা আমরা বারবারই বলেছি। আমরা অনেকেই বারবার তাদের কথা বলতে দেওয়া ও তাদের দাবিনামা হাজির করতে দেবার পক্ষে বলেছি। সে কারণে কওমি মাদ্রাসার সরকারি স্বীকৃতিকে আমরা ইতিবাচক হিসাবেই দেখি। এর রাজনৈতিক তাৎপর্য বিচার ভিন্ন বিষয়। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বড় ধরনের গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। সেই পরিবর্তন গভীরভাবে পর্যালোচনা ও বোঝার জন্য সময় ও স্থিরতা দরকার। আগামিতে আমরা সে কাজে মনোযোগ দেবো নিশ্চয়ই।

এখানে এই নতুন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে অনেকে ফেসবুকে অনেক প্রশ্ন করেন। সেই সকল প্রশ্নের উত্তর আমার কোনো-না-কোনো লেখায় আসলে আগেই আমি দিয়েছি। হেফাজতের এই রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধিতে অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। তারা হেফাজতের বিরোধী নন, তারা ইসলামি আতঙ্কে ভোগেন না এবং ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাদের স্পষ্ট অবস্থান আছে। তাদের উদ্বেগের জায়গা আমি স্পষ্টই বুঝি। সেটা মোটেও অমূলক নয়। সেই উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে এখানে দুই-একটি বিষয় দ্রুত বলে রাখতে চাই।

একটি প্রবল আপত্তি হেফাজতের ভাষা নিয়ে, তাদের ধর্মীয় পরিভাষা এবং একান্তই মুসলমান-কেন্দ্রিক বয়ান নিয়ে, যা অন্য সম্প্রদায় বা বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক মনে হয়। যেমন, হেফাজত যে ভাষায় মোকাবেলা করছে সেটা কি সাম্প্রদায়িক শোনায় না? হিন্দুয়ানি বলে যে উৎসব বাতিল চায় ওরা, কিংবা ইসলামে এটা নাই সেটা নাই যে বলে থাকে তারা, রাষ্ট্র তো ইসলামিস্টদের নয়, রাষ্ট্র তো সাধারণের। তাহলে হেফাজত কি সাম্প্রদায়িক শক্তি নয়? এখান থেকেই শুরু করি।

বাঙালি জাতিবাদ যেমন বাঙালি জাতির কথা বলতে গিয়ে অন্য জাতির অধিকার কিম্বা অন্য মতাদর্শের নাগরিকদের গুম করে, গুম খুন করে, হত্যা নির্যাতন দমন-নিপীড়ন করে, হেফাজত সেই তুলনায় ‘সাম্প্রদায়িক’ নয়। জাতিবাদ সাম্প্রদায়িক মতবাদ। সম্প্রদায় যেমন ধর্মের ভিত্তিতে হয়, তেমনি জাতি, বর্ণ, ভাষা, সংস্কৃতি, এমনকি চাষাবাদের পদ্ধতি দিয়েও হয়, যেমন, ‘জুম্ম জাতীয়তাবাদ’। সেই দিক থেকে হেফাজত নতুন কিছুই না। তাদের সম্প্রদায় চেতনা জাতিবাদেরই আরেক রূপ মাত্র।

তাহলে হেফাজত তো হেফাজতের ভাষাতেই কথা বলবে, হিন্দু হিন্দুর ভাষায়। সমাজে নানান সম্প্রদায় আছে, থাকবে। তাদের ভাষা কি প্রায়ই সাম্প্রদায়িক শোনায় না? ঠিকই শোনায়। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানদের ভাষা আরো অধিক সাম্প্রদায়িক। তাই না? নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদের বলে বলিয়ান হয়ে তারা এখন জাতীয় সংসদে পৃথক আসন দাবি করছে। এটাই বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা। তাহলে হেফাজতকে ‘সাম্প্রদায়িক’ বলার মধ্য দিয়ে আমরা আসলে বাংলাদেশের সাধারণ বাস্তবতার প্রশ্নই তুলছি। সেই ক্ষেত্রে হেফাজতকে বিচ্ছিন্নভাবে নিন্দা করে লাভ নাই। প্রশ্ন হচ্ছে- একে মোকাবিলা করব কিভাবে?

ইসলাম নির্মূল বা ইসলামবিদ্বেষের রাজনীতি ও সংস্কৃতি দিয়ে কি ইসলামি বা মুসলিম জাতিবাদ মোকাবিলা করা যাবে? যাবে না। একদমই না। হিন্দুত্ববাদ মোকাবিলার জন্য কি পাল্টা হিন্দুবিদ্বেষ চর্চা করতে হবে? অবশ্যই না। আজকাল আমরা তো জানিই না যে ‘হিন্দু’ বলে কোনো তথাকথিত ‘ধর্ম’ নাই। তেমনি ‘ইসলাম’ও একাট্টা কিছু না। আমাদের বাস্তব সমস্যার গোড়া নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে। সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের রাজনীতি বা ধর্মীয় জাতিবাদ গড়ে উঠবার ঐতিহাসিক ও সামাজিক বাস্তবতা তো একান্তই আধুনিকতা ও জাতিবাদের সমস্যা। ধর্মের নয়, কিম্বা ভাষা বা সংস্কৃতিরও নয়।

আমি আরব না, আমি বাংলাভাষী, বাঙালি। অবশ্যই। কিন্তু আমাকে বাঙালি জাতিবাদী হতে হবে কেন? তেমনি আমরা বাংলাদেশে অধিকাংশই জন্মসূত্রে মুসলমান। আমার বাড়ি নোয়াখালী। বলা হয়, আমরা মায়ের পেটে থাকতেই মায়ের কোরানের তেলাওয়াত শুনে বড় হই। মুসলমান ঘরের সন্তান হিসাবে সমাজ, ইতিহাস, ধর্ম, নীতি ইত্যাদি শিখি। তার জন্য কি রামায়ণ মহাভারত পড়া নিষিদ্ধ হয়ে যাবে? কিম্বা পুরাণ পড়লে আমার ধর্ম যাবে? আবার সেকুলার হতে হলে আমার নিজের বাপ-মায়ের ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্ম, সংস্কৃতি, নীতি আচার-ব্যবহার আয়ত্ত করতে হবে? মুসলমানের বহু খারাপ খাসিলত আছে। আসুন সেই সব শুধরাই। কিন্তু সেকুলার হবার জন্য ইসলাম অস্বীকার করার মতো নিম্নস্তরের মানসিকতা আর কিছুই হতে পারে না।

সমস্যা আসলে আধুনিকতা, জাতিবাদ, সাম্প্রদায়িক আত্মপরিচয় নির্মাণের বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে। যা পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার আভ্যন্তরীণ গতিপ্রক্রিয়ার অংশ। তাহলে আসুন, আধুনিকতা, জাতিবাদ, সাম্প্রদায়িক আত্মপরিচয়ের ঐতিহাসিক ও সামাজিক বাস্তবতার খোঁজ করি, গবেষণা করি। হেফাজতের বিরুদ্ধে গোস্বা করছেন কেন? সেটা করছেন আপনি ‘আধুনিক’, ‘জাতিবাদী’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বলে? ধর্মের বিরুদ্ধে বা ধর্মবিশ্বাসীদের তুলাধুনা করলে আধুনিকতার ও জাতিবাদী উগ্রতার বিপদ মিটবে না। জাতিবাদ ভাষা ও সংস্কৃতি দিয়ে যেমন তৈরি হয়, ধর্ম দিয়েও তৈরি হতে পারে। ঠিক বলেছেন, হেফাজত যখন জাতিবাদী হয়, যখন তারা শুধু এই দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের কথা বলে- তখন তারা শুধু আপনার জন্য না, ইসলামের জন্যও বিপদ তৈরি করে। কিন্তু জাতিবাদ তো তারা বাঙালি জাতিবাদীদের কাছেই শিখেছে। সেই ক্ষেত্রে আমাদের কাজ হচ্ছে তাদের মনে করিয়ে দেওয়া যে, ইসলামে জাতিবাদের কোনো স্থান নাই। তারা সেটা শোনে কি না তার ওপর আগামি দিনের রাজনীতি ঠিক হবে। কিন্তু ঘুরেফিরে কথা একটাই : আপনাকে আধুনিকতা, আধুনিক রাষ্ট্র ও জাতিবাদের পর্যালোচনা করতে হবে এবং একালে কিভাবে আপনি এই পর্ব অতিক্রম করে যাবেন তা নিয়ে কোনো প্রকার ইসলামবিদ্বেষ, কিম্বা ধর্ম নিয়ে বালখিল্য আতঙ্ক ছড়ানো বাদ দিয়ে ভাবতে হবে। নিশ্চয়ই পথ আছে। পথ আমরা খুঁজে পাবো অবশ্যই।

মার্কসবাদীরা মুখে শ্রেণির কথা বলে, কিন্তু তারা শেষাবধি জাতিবাদই করে। দুনিয়ার নিপীড়িত মজলুম মানুষ ‘এক’ করবার কর্তব্য ভুলে যায়। বাংলাদেশে কমিউনিস্ট নামে যাদের চিনি তাদের অধিকাংশই চরম ইসলামবিদ্বেষী, জঘন্য প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। সম্প্রতি দলবাজদের বাইরে তরুণরা নতুন করে ভাবতে চাইছে।

আমাদের সমাজে শরিয়াপন্থী, মারফতওয়ালা, হুজুর কেবলা, পীর কেবলা, সুফি, দেওবন্দী, আলিয়া, বৌদ্ধ, শৈব, শাক্ত, চার্বাকপন্থী নাস্তিক, জৈন, বৌদ্ধ, শৈব, শাক্ত, আউল, বাউল, ফকির, দরবেশ নানান বিশ্বাস ও মতাদর্শ ছিল, এখনো আছে। এর সঙ্গে মার্কসবাদ, লেনিনবাদ, মাওজে দং চিন্তাধারা, মুজিববাদ, সমাজতন্ত্রী ও তথাকথিত আধুনিক শিক্ষিতদের যুক্ত করতে পারেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে নদিয়ার ভাব, বিশেষত ফকির লালন সাঁইর জীবন ও আদর্শ নিয়ে ভাবি। নির্বিচার নই। বর্তমান অবস্থা থেকে নিষ্ক্রান্ত হবার গরজেই। তাছাড়া ইহলৌকিক সব কিছু ত্যাগ করা কিম্বা নাফসানিয়াতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রুহানিয়াতের পথে যাবার সদর রাস্তা সন্ধান আমার দর্শনচর্চার প্রধান দিক। আপনি আমাকেও সমালোচনা করুন। অসুবিধা কী? সমাজের শক্তি হচ্ছে পরস্পরের সঙ্গে কথাবার্তা বলা, পরস্পরকে জানা ও পর্যালোচনার কার্যকর ক্ষেত্র বা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। কিন্তু সেই কাজ না করে হেফাজতকে একা দুষলে কী লাভ? শুধু হেফাজত নয়, প্রতিটি আদর্শিক অবস্থানের পর্যালোচনা দরকার। সমাজে নানান মত আছে। থাকবেই। অনেকে নতুন কথাও বলবে। কিন্তু সমাজ জাতিবাদের ভিত্তিতে এক দিকে ধর্মীয় জাতিবাদ; অন্য দিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদে কেন ভাগ হয়ে যাচ্ছে সেটা বুঝতে হলে আধুনিক সমাজ, আধুনিক রাষ্ট্র এবং শ্রেণি ও স্বার্থের দ্বন্দ্বের নৈর্ব্যক্তিক পর্যালোচনা দরকার। সেটাই আমাদের কাজ। হেফাজত নিয়ে আতঙ্কিত হবার আমি আদৌ কোনো কারণ দেখি না।

সমাজে সম্প্রদায়ের সামাজিক উপস্থিতি বড় কোনো সমস্যা তৈরি করে না। বাংলাদেশে হেফাজত হিন্দুকে হেফাজতি, কিম্বা হিন্দু হেফাজতিকে হিন্দু হবার জন্য বল প্রয়োগ বা জবরদস্তি করলে সেটা ভিন্ন কথা। সবার নির্ভয়ে কথা বলবার ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে নেগোসিয়েশান বা আলাপ-আলোচনার পরিসর, যাকে আমি ‘রাজনৈতিক পরিসর’ বলি, তাকে বলবান করাই ছিল আমাদের কাজ, অপরের কণ্ঠস্বর দমন করা নয়। রাজনৈতিক পরিসর বিলুপ্ত হয়ে যাওয়াটাই ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক।

তদুপরি ভাবুন, যে দেশের মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়েছে, নিজেদের ধর্মরাষ্ট্রের অধীনস্থ করবে না বলে লড়েছে, অথচ তারা যে রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিল তাদের সেই রাষ্ট্র বানাতে দেয়া হোলো না। তারা যুদ্ধ করল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য। এই তিন নীতির ভিত্তির ওপর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করা হোলো না। স্বাধীনতার ঘোষণা দেখুন। অথচ উচ্চবর্ণের হিন্দুর সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়ের মানদণ্ড দিয়ে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ কায়েম হোলো। এটাই নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। তার সঙ্গে যুক্ত হোলো ইসলাম নির্মূলের রাজনীতি, অর্থাৎ তথাকথিত ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’। আরো যুক্ত হোলো হিটলার-মুসোলিনির ‘সমাজতন্ত্র’- এই সব পচা জিনিসের ওপর হাস্যকরভাবে গণতন্ত্রের পোশাক পরানো হোলো। ভেতরের দুর্গন্ধ তো ঢাকা যায় না। বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার নামে আদতে একটি হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রই বাংলাদেশে ভারতের আদলে গড়ে তোলা হোলো।

‘রাষ্ট্র সাধারণের’ বলে যে রাষ্ট্রের কথা সেকুলাররা বলতে চাইছেন, তা কি আপনারা গড়ে তুলেছেন? তোলেননি। তো এখন অভিযোগ করছেন কার বিরুদ্ধে? কিম্বা আদৌ কি ভেবেছেন কিভাবে ‘সাধারণের রাষ্ট্র’ গড়া হয়। ‘গঠনতন্ত্র’ কী? কিভাবে জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের সারার্থ করে তাকে গণপরিষদের মধ্য দিয়ে রূপ দিতে হয়? পাশ্চাত্যে গণতান্ত্রিক ইতিহাস কিভাবে গড়া হয়েছে? তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সীমাবদ্ধতা কী? ভাবুন, এই দেশে ও উপমহাদেশে ইসলামের ভূমিকা, মুসলমানদের ঐতিহাসিক লড়াই-সংগ্রাম সব কিছুকে গায়েব করে দিয়ে বাঙালির ইতিহাসকে পর্যবসিত করা হোলো নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে, যেখানে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের নামে বাংলাদেশকে দিল্লি স্বাধীন করে দিলো!!! এর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তো হবেই। তারই ফল দেখছি আমরা এখন। এখন আর বললে কী হবে!!

এখন যখন হেফাজত নিজ সম্প্রদায়ের ভাষায় বাঙালি মুসলমান স্বার্থ রক্ষার জন্য লড়তে নেমেছে, তখন আমাদের অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে। অস্বস্তির কারণ আসলে হেফাজত না। কারণ হচ্ছে সাধারণ মানুষ তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে ইতিহাস অস্বীকারের বিধ্বংসী ও আত্মঘাতী রাজনীতির মর্ম বুঝতে শুরু করেছে। তারা হেফাজতকে সমর্থন করছে। ইসলামপন্থার প্রতি জনগণের দুর্বলতা সঙ্গত কারণেই বেড়েছে। এতেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। এখন আওয়ামী-হেফাজত মৈত্রী দেখে আমাদের মূর্ছা যাবার জোগাড়!! এটা হোতো না যদি সেকুলার বা তথাকথিত প্রগতিশীলরা ইতিহাসের গতিপ্রক্রিয়া নৈর্ব্যক্তিকভাবে বোঝা ও তাকে পরিচালনার জন্য উপযুক্ত মতাদর্শ, নীতি ও কৌশল হাজির করতে পারত। তারা উল্টা বাংলাদেশে ইসলামবিদ্বেষী শিবসেনার ভূমিকা পালন করেছে ও করছে। ইসলামপন্থীরা বুঝে গিয়েছে আমরা কালা চামড়ার সাদা সাহেব। আমরা ইউরোপের চোখ দিয়ে নিজেদের সমাজ বিচার করি। তাই ইসলামপন্থীরা আমাদের কোনো কথা শুনবে কি না জানি না। কিন্তু নিজেদের শোধরানোই প্রথম কাজ।

 

 

অতএব হেফাজত ইসলামের সঠিক রিপ্রেজেন্টার কি না সেটা নিছকই কূটতর্ক। অর্থহীন। ইসলামের ব্যাখ্যায় কে ছহি কে না, সেটা তো তর্কের বিষয় না। সেটা আমি আপনি ঠিক করে দিতে পারব না। আপনার কথা মানুষ মানবে না, আলেম ওলেমা মুফতিদের কথাই জনগণ শুনবে। অতএব হেফাজতের ইমান-আকিদা রক্ষার লড়াই জনগণ সমর্থন করছে। তাদের ‘ইসলাম’ নিয়ে তর্ক করবার যারা ‘অথরিটি’ তাদের সেই তর্ক করতে দিন। সেটা আমার আপনার ক্ষেত্র না। আসুন আমরা সমাজ, ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজনীতির বাস্তবতা পর্যালোচনা করি। এটাই আমাদের ক্ষেত্র। দর্শনের, অর্থনীতির, রাষ্ট্রনীতির নীতিবিদ্যার, ইত্যাদি। এগুলো হেফাজতের এখতিয়ারভুক্ত এলাকা না। তারা নিজেরা বলছে আমরা রাজনৈতিক দল নই, আমরা রাজনীতি করতে চাই না। তাদের তাহলে তাদের জায়গাতেই কাজ করতে দিন। আপনার নিজের কাজ ঠিকমতো নিষ্ঠার সাথে করেন। আতঙ্কিত হবার কিছু নাই।

সোজা কথা বাংলাদেশের মানুষ ভাবছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতার কারণে তাদের ইমান-আকিদা নিরাপদ না। নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদ এবং ভারতে নিত্যদিন দাঙ্গা ও মুসলিম নিধন, বিশেষত কাশ্মির পরিস্থিতির কারণে ইসলামপন্থার প্রতি সমর্থন বাড়ছে। বাড়বেই। মানুষ গুম করে, ফাঁসি দিয়ে, তিন মাসের বাচ্চাকে জিহাদী সন্ত্রাসী বলে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দিয়ে আপনি জুলুমের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিরোধ ঠেকাতে পারবেন না। ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া মিসরের ঘটনা এই দেশের মানুষকে প্রভাবিত করবেই।

এমনকি শেখ হাসিনাকেও তাই এখন হেফাজতের সাথে আপোষ করতে হচ্ছে। তিনি তিস্তার পানি পাননি। মোদি তাকে রিক্ত হাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন। নিজের গরজেই তাকে এখন তাদেরকেই ডেকে তোয়াজ করতে হচ্ছে যাদের তিনি নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছিলেন, পঙ্গু করেছিলেন। তাদেরকেই তিনি ‘মিত্র’ হিসাবে চাইছেন যারা তার ঘরদুষমন। আহ!!! ইতিহাসের এ কী প্রহসন!!! কারণ আগামিতে তাঁকে আবার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় থাকতে হবে। হেফাজত যা চায় তিনি তাই তাদের দিতে প্রস্তুত।

সমাজ যখন ঐতিহাসিকভাবে নিজেকে বোঝার চেষ্টা করে না, ক্রিটিক্যালি চিন্তা করবার মানুষের অভাব হয়, তখন সাম্প্রদায়িক চিন্তা ও রাজনীতি মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশই এক বিচিত্র দেশ যেখানে সেকুলারিজমের নামে উচ্চ বর্ণের হিন্দুর সংস্কৃতিকেই সেকুলার সংস্কৃতি বলে দাবি করা হয়। একে সাম্প্রদায়িক হিন্দুয়ানি-ভাবাপন্ন চিন্তা কিম্বা ‘হিন্দুয়ানি’ বললে শিবসেনারা আবার প্রতিবাদ করে। বাংলাদেশে ‘আধুনিক’দের মধ্যে সেকুলার ধারা কই? কাদের বলবেন?

তা ছাড়া হিন্দুর সংস্কৃতিতে অসুবিধা কী? নামটাও তো বিদেশিদের দেওয়া। তারা ‘সিন্ধু’ নদকে উচ্চারণ করত ‘হিন্দু’ বলে। সেখান থেকেই ‘হিন্দু’, ‘হিন্দুস্তান’ ইত্যাদি। তো সিন্ধু নদের এপাশে যারা বাস করে তারা সকলেই বিদেশিদের চোখে ‘হিন্দু’। কিন্তু এখন ‘হিন্দু’ পরিচয় একান্তই ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে জাতিবাদী পরিচয় হিসাবে বিশ্বব্যাপী দানা বেঁধেছে। এই হিন্দুত্ববাদ আর ‘হিন্দু’ সমার্থক নয়। হিন্দু আপনার ভাই, আপনার বোন, কিন্তু হিন্দুত্ববাদ আপনার দুষমন। হিন্দুত্ববাদকে শিবসেনা হয়ে আপনি যখন ‘জাতীয় সংস্কৃতি’ বলে মুসলমানের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইবেন, তখন তো আপনিই সমাজে দাঙ্গা-হাঙ্গামা লাগালেন। হেফাজতকে তাহলে দুষছেন কেন? যারা উপমহাদেশে ইসলামের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে মানে না তারা সজ্ঞানে উপমহাদেশে ইসলাম নির্মূলের রাজনীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখবার জন্যই ইসলামকে অস্বীকার করে। তখন সমাজ পাল্টা ফুঁসে ওঠে, প্রতিবাদ জানায়, নতুনভাবে সংগঠিত হয়।

দেওবন্দীরা তো দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশে আছে, কই তারা তো জামায়াতে ইসলামের রাজনীতি করেনি, এখনো করে না। তাদের সেকুলাররা খেপিয়ে তুলল কী বুঝে? হাফেজ্জী হুজুর একাত্তরে বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই, এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সমরতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে সেকুলারদের সঙ্গে তিনি কাজও করেছেন। তাহলে ভাবুন, এখন তাহলে কী ঘটল যাতে নতুন শক্তি হিসাবে তাদের আবির্ভাব ঘটছে? হেফাজত তো আগে ছিল না। এখন গড়ে ওঠার সামাজিক, সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক কারণ কী? যদি সেটা বোঝেন তাহলে বহু প্রশ্নের উত্তর সহজেই পাওয়া যাবে?

আমার যদি আদৌ কোনো ভূমিকা থাকে আমি এই পরিস্থিতি অতিক্রম করে যাবার জন্য প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছি। ইসলাম বনাম ধর্মনিরপেক্ষতার বাইনারির বাইরে ইতিহাসকে ইতিহাস হিসাবেই আমি বোঝার চেষ্টা করি। আমি ধর্ম, ধর্মতত্ত্ব বা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি যেমন করি না, তেমনি বঙ্গদেশীয় সেকুলার বা শিবসেনাদের রাজনীতিও করি না।

মানুষ নিয়ে আমার কারবার। মানুষই যেহেতু ধর্ম করে তাই ধর্মের প্রতি আমার প্রবল উৎসাহ। দর্শন বা প্রজ্ঞার এই আগ্রহকে ধর্ম, ধর্মতত্ত্ব বা সম্প্রদায়মূলক পরিচিতি দিয়ে বুঝবেন না। পর্যালোচনার শক্তি দিয়েই বুঝতে হবে।

সূত্র: নয়াদিগন্ত

Save

Save

Save

Save

সম্পর্কিত সংবাদ

ভয়েস অব আমেরিকা বন্ধের বার্তা কী?
slide

ভয়েস অব আমেরিকা বন্ধের বার্তা কী?

মার্চ ১৯, ২০২৫
ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় জনগণের সামরিক প্রশিক্ষণ জরুরি
মতামত

ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় জনগণের সামরিক প্রশিক্ষণ জরুরি

আগস্ট ১০, ২০২৪
কোটা, কোটা আন্দোলন ও এর ইতিহাস
কলাম

কোটা, কোটা আন্দোলন ও এর ইতিহাস

জুলাই ১৫, ২০২৪

Discussion about this post

জনপ্রিয় সংবাদ

  • বিতর্কিত আজিজের সাক্ষাৎকার নিয়ে লে. কর্নেল মুস্তাফিজের বিশ্লেষণ

    বিতর্কিত আজিজের সাক্ষাৎকার নিয়ে লে. কর্নেল মুস্তাফিজের বিশ্লেষণ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির যত মামলা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • ইসরায়েলে নিহত বেড়ে ২৫০, আহত ১ হাজার ৫০০

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • রক্তাক্ত ২৮ ফেব্রুয়ারি: নির্বিচার গণহত্যার দিন

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • ভাষা আন্দোলন ও এর ঘটনা প্রবাহ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

সাম্প্রতিক সংবাদ

মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাব

মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাব

মে ২১, ২০২৫
ইশরাকের মেয়র হতে বাধা কোথায়?

ইশরাকের মেয়র হতে বাধা কোথায়?

মে ২১, ২০২৫
নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করতে হবে

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করতে হবে

এপ্রিল ৩০, ২০২৫
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন ধারার প্রবর্তন অপরিহার্য

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন ধারার প্রবর্তন অপরিহার্য

এপ্রিল ৩০, ২০২৫
হাওর ধ্বংস করে আবদুল হামিদের প্রমোদ সড়ক

হাওর ধ্বংস করে আবদুল হামিদের প্রমোদ সড়ক

মার্চ ২০, ২০২৫
  • Privacy Policy

© Analysis BD

No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে

© Analysis BD