কাদির কল্লোল, বিবিসি বাংলা
বাংলাদেশে কট্টরপন্থী হেফাজতে ইসলামের সাথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সখ্যতার অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে দলটির নেতা-কর্মীদের অনেকের মাঝেই এক ধরণের বিভ্রান্তি এবং অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।
তাদের অনেকের নিজেদের মধ্যে হেফাজত ইস্যুটি টিপ্পনী কাটার বিষয় হয়েও দাঁড়িয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকের কাছেই পুরো বিষয়টি পরিষ্কার নয়।তারা বলেছেন, এমন কোন সখ্যতা হলে সেটা তাদের দল এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে।
তবে আওয়ামী লীগের ভিতরে টানাপড়েনের অভিযোগ নাকচ করে দলটির নীতিনির্ধারকদের অনেকে বলেছেন,স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বাদ দিয়ে তারা সকলকে নিয়ে চলতে চান।
হেফাজতে ইসলামের দাবি অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনা হয়েছে, এই অভিযোগ নিয়ে প্রথম আলোচনা শুরু হয়।
এর রেশ কাটতে না কাটতেই জোরালো বিতর্ক দেখা দেয় সুপ্রিমকোর্ট চত্বর থেকে ভাস্কর্য সরানোর প্রশ্নে, যখন হেফাজতের নেতা আহমদ শফিসহ আলেমদের নিয়ে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাস্কর্যটি অপসারণের হেফাজতের দাবির প্রতি সমর্থন জানান।
অভিযোগ উঠেছে হেফাজতের কাছে আওয়ামী লীগ একের পর এক ছাড় দিচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ের নেতাদেরই অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
রংপুর অঞ্চলের একটি জেলার একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছিলেন, তাঁরা দলের কয়েকজন নেতা-কর্মী বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দুপুরে আড্ডায় বসেছিলেন।
সেখানে এক আরেকজনকে হেফাজত বলে টিপ্পনী কাটছিলেন।
এমন উদাহরণ দিয়ে দলটির ঐ নেতা তাদের মনোভাবকে তুলে ধরেন।
আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মিরা।উত্তরের একটি বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে আৗয়ামী লীগের স্থানীয় একজন নেতা নুরুল ইসলাম সরকার বলছিলেন, দলের এই পদক্ষেপ তাদের কাছে পরিষ্কার নয়।
“ঢাকা কেন্দ্রিক হেফাজতের যে তাণ্ডব আমরা দেখেছি।এরপরও হেফাজতে পলিটিক্যাল ভিউ এর সাথে যদি কোন সমঝোতা হয়,সেটা ভবিষ্যতে আমাদের জন্য খুব বেশি মঙ্গলজনক হবে, তা আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করিনা।আমার মাঠ পর্যায়ে যাদের সাথে কথা হয়,অনেকে উদ্বিগ্ন যে, এটা হচ্ছেটা কি?অথবা আসলে কি হয়েছে?এটা এখন পর্যন্ত আমরা পরিষ্কার না।”
দক্ষিণেও বরিশাল, মাদারীপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলার আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, হেফাজতের সাথে সখ্যতার অভিযোগ তাঁরা মানতে পারছেন না।
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা যশোর থেকে আওয়ামী লীগের একজন নেতা শাহারুল ইসলাম বলছিলেন, তাদের দলের সুবিধাবাদী কোন অংশ এ ধরণের পদক্ষেপ নিয়ে তাদের শীর্ষ নেতৃত্বকে উৎসাহিত করছে বলে তিনি মনে করেন।
“হেফাজত ইস্যু নিয়ে আমাদের মাঠ পর্যায়ের সাথে কেন্দ্রের কোন আলোচনা হয়নি।আমি যেটা বুঝেছি, সেটা হচ্ছে, আমাদের দলে নব্য যারা,এরাই সুবিধা পাওয়ার জন্য এমন করতে পারে।তাছাড়া বিষয়টা আমাদের কাছে পরিষ্কারও নয়।”
হেফাজত ইস্যুতে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদেরও অনেকে অস্বস্তিতে পড়েছেন বলে মনে হয়েছে।তাদের কেউই মুখ খুলছেন না।
তবে অনেকে অনানুষ্ঠানিক ভাবে পরিস্থিতিকে বিন্ন ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছেন।তাদের অনেকে বলেছেন,সরকারকে কিছুই না জানিয়ে সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে হঠাৎ করে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছে।
সেকারণে এর উদ্দেশ্য নিয়ে সরকারের ভিতরেও আলোচনা হয়েছে।দলটির অনেকে বলেছেন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটা কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য সরকারকে বেশি ছাড় দিতে হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী তাদের দলে কোন টানাপোড়েন বা কারও মধ্যে অস্বস্তি থাকার অভিযোগ নাকচ করেছেন।
তিনি বলছিলেন, “এখানে অস্বস্তি বোধ করার বিষয় নাই। একটা অংশ ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা সরকারি কাঠামোর বাইরে ছিল।সেটাকে শেখ হাসিনা তাদের সাথে আলোচনা বা মতবিনিময়ের মাধ্যমে কাঠামোর ভিতরে আনলেন।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন,দেশের বাস্তবতা মানতে হবে এবং সিংহভাগ মানুষের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রতিপক্ষ বিএনপি’র জোটে যেহেতু ইসলামপন্থী কয়েকটি দল রয়েছে।সেখানে ইসলামপন্থীদের অন্য অংশকে আওয়ামী তাদের সাথে নিচ্ছে।এমন অভিযোগও উঠছে।
কিন্তু আওয়ামী লীগ নেত্রী মতিয়া চৌধুরী বলছিলেন, “আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা বিরোধীদের বাদ দিয়ে সকলকে নিয়েই চলেছে। আমরাই বলবো, ইনক্লুসিভ সোসাইটি। আবার স্বাধীনতা বিরোধী বিষাক্তদের বাদ দিয়ে যখন সকলকে নিয়ে চলার কথা আসে, তখন বলা হয় আওয়ামী লীগ আপোষ করছে।আমরা কিছু করলেই প্রশ্ন তোলা হয়।এর মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ চলছে।”
তবে আওয়ামী লীগ তাদের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির অবস্থান টিকিয়ে রাখবে, সেটাই চান দলটির তৃণমূলে নেতা কর্মিরা।
Discussion about this post