হায়দার এম আলি, ইসলামাবাদ
মেরুকরণের স্বাভাবিক দোলাচলের মধ্যে আটকা পড়ে আছে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি। তবে, এই মুহূর্তে এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের পারস্পরিক সম্পর্কের নিক্তি ভয়ংকরভাবে একদিকে ঝুলে আছে। সম্প্রতি নয়াদিল্লি সফর শেষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ দেশে ফিরেছেন। তার দেশের বিশ্লেষকরাই বলছেন, ভারত যা চেয়েছে তার সবই তিনি দিয়ে এসেছেন, নিজের জনগণের জন্য তেমন কিছু আনতে পারেননি।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। তবে এতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে কি-না সেটা অন্য বিষয়। যে কোনভাবে দেখলেই বুঝা যাবে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ভারতকে ইচ্ছে মতো কাজ করার অধিকার দিয়েছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সর্বকালের তলানিতে এসে ঠেকেছে। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সম্পর্কের ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। পাকিস্তানকে শায়েস্তা করার প্রশ্নে কথা বলতে গেলে শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রী ও দলের নেতারা কোন শব্দ আর বাদ রাখছেন না। তাদের আচরণ ক্রমেই শত্রুতাপরায়ণ হয়ে উঠছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন ভারত চায় বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে বন্ধুহীন করে ফেলতে। এতে দেশটির ওপর নয়াদিল্লির কবজা আরো মজবুত হবে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে এবং বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের আগ্রহে লক্ষ্যণীয়মাত্রায় ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন ও সাগরের গ্যাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরে সুযোগ খুঁজছিলো। কিন্তু অস্বাভাবিক দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর হতাশ হয়ে তারা বন্দর নিয়ে আলোচনার বিষয়টি পরিত্যাগ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এখন ভারতের চোখ দিয়ে বাংলাদেশকে দেখতে শুরু করেছে। সম্ভবত বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের পরামর্শ মেনেই তারা কাজ করবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের কয়েকজন মন্ত্রী জন কেরি, নিশা দেশাই ও অন্য সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তাদের ব্যাপারে মর্যাদাহানিকর মন্তব্য করেছেন। কথিত ‘সেক্যুলার’ পোশাকি আচরণের জন্য আওয়ামী লীগের ব্যাপারে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সাধারণত নমনীয় মনোভাব পোষণ করে। কিন্তু এ সরকারের মানবাধিকার সমস্যা নিয়ে তারা এখন অসন্তুষ্ট।
বাংলাদেশে চীনের বিপুল বিনিয়োগ প্রতইশ্রুতি রয়েছে। কিন্তু নয়া দিল্লির সঙ্গে হাসিনার সাম্প্রতিক বোঝাপড়া নিয়ে তারাও চোখ উল্টাতে শুরু করেছে। হাসিনা দিল্লিতে গিয়ে প্রতিরক্ষাসংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোতে চুক্তি স্বাক্ষর করে এসেছেন। অন্যদিকে, দালাই লামাকে তাওয়াং যেতে না দিতে বেইজিংয়ের অনুরোধে দিল্লি কোনরকম কান দেয়নি। চীন একে স্পর্শকাতর জায়গায় আঘাত হানার মতো মনে করছে। ভারতের অংশগ্রহণের কথা থাকায় ইতোমধ্যে তারা মস্কোতে আসন্ন ত্রিপক্ষীয় বৈঠক থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তাই বাংলাদেশের ব্যাপারেও এ কথা সত্য। ভারতের সঙ্গে মাখামাখি তারা ভালো চোখে দেখবে না। বেইজিং সাধারণত তার সামরিক পেশিশক্তি দেখাতে চায় না। এর স্বাভাবিক প্রবণতা হলো যুতসই জায়গা, তথা অর্থনীতিকে লক্ষ্য বানানো। তাই বাংলাদেশকে খুবই সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে হবে।
তাছাড়া, ঘনিষ্ঠ মিত্র পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের আচরণ নিয়েও বেইজিং খুশি নয়। এই মুহূর্তে চীনের জন্য পাকিস্তান অনেক কিছু এবং সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এক বন্ধু। তাই ইসলামাবাদের ব্যাপারে বাংলাদেশের নীতির ওপর বেইজিংয়ের নজর থাকবে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনেক রকম ধমকানি, তিরস্কার করা হলেও পাকিস্তান প্রথমদিকে চোখ বন্ধ করে থেকেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা একটি অবস্থান নেয়। দেশটি ১-৫ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সম্মেলনে যোগ দিতে অস্বীকার করে।
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার আয়াজ সিদ্দিক’র নেতৃত্বে ১০ সদস্যের সংসদীয় প্রতিনিধি দলের ওই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানের কথা ছিলো।
কেন এরকম সিদ্ধান্ত নেয়া হলো তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে স্পিকার সিদ্দিক বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাপারে পাকিস্তানের সংযম ও বোঝাপড়া সত্তেও সেখানকার নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা ও মিডিয়ার অব্যাহত নেতিবাচক আচরণ ও প্রকাশ্য বক্তব্য আমাদেরকে আতংকিত ও হতাশ করেছে। তাই আমরা বাংলাদেশ সফরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ অবস্থায় সফরের উদ্দেশ্য হাসিল হবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক নিশ্চিত করতে পাকিস্তান বার বার উদ্যোগী হয়েছে। ২০১৪ সালে ক্যামেরুনে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন পদে নির্বাচনকালে পাকিস্তানের সংসদীয় প্রতিনিধি দল সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশের বর্তমান স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরির পক্ষে ভোট দিয়েছে। নির্বাচনে খুবই স্বল্প ব্যাবধানে তিনি জয়ী হন। তার পক্ষে ৮২ এবং বিপক্ষে ৭৮ ভোট পড়ে। পাকিস্তানের সমর্থন ছাড়া এটা সম্ভব হতো না।
এ ধরনের বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের কোন প্রতিদান পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ পায়নি। বার বার আমন্ত্রণ জানানোর পরও বাংলাদেশের স্পিকার পাকিস্তান সফরে যাননি। গত দু’বছরে পাকিস্তানে যতগুলো আন্তর্জাতিক সংসদীয় সম্মেলন হয়েছে তার সবগুলো বাংলাদেশ বর্জন করেছে।
পাকিস্তান পার্লামেন্টের সর্বোচ্চ নেতা ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশ স্পিকারকে অনুরোধ জানালেও তাতে সাড়া পাননি। এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিলো ২০১৬ সালের আগস্টে সার্ক ইয়ং পার্লামেন্টারিয়ান কনফারেন্স, ২০১৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল উইমেন পার্লামেন্টারিয়ান কনফারেন্স ও ২০১৭ সালের এশিয়ান পার্লামেন্টারিয়ান এসেমব্লি।’
অধিকন্তু ভারতকে খুশি করার জন্য শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ব্যবহার করছেন এবং অব্যাহতভাবে পাকিস্তান-বিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। সম্ভবত ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধই আওয়ামী লীগের সাফল্যের একমাত্র কাহিনী। তাই টিকে থাকার জন্য তারা একেই প্রবলভাবে আঁকড়ে থাকতে চায়। তারা যে ‘ইস্যু’টি টিকিয়ে রাখতে চায় তার সুষ্পষ্ট কারণও রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ নেয়া ‘জামায়াতে ইসলামী’কে এতগুলো বছর ধরে ‘শ্যাডো বক্সিং’ [কল্পিত প্রতিদ্বন্দ্বির সঙ্গে একা একা মুষ্টিযুদ্ধ অনুশীলন]-এর যুতসই পক্ষ বানানো হয়েছে। এই দলের শীর্ষ নেতাদের বিচার ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর তাও ‘ডেড ইস্যু’তে পরিণত হয়েছে। তাই আরেকটি নতুন ইস্যু সাজানো হয়েছে। এ বছর শেখ হাসিনা সরকার প্রস্তাব পাস করেছে – প্রতিবছর ২৫ মার্চ দিনটি ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে বলে। এই প্রস্তাব জাতিসংঘে তুলতে সাহায্যের হাত বাড়াতে ভারতও রাজি হয়েছে।
সম্প্রতি দি ইকনমিস্ট লিখেছে, “আওয়ামী লীগ নিজের স্বার্থেই চায় কেউ যেন যুদ্ধের কথা ভুলে না যায়: মোটের ওপর স্বাধীনতা হলো এই দলের অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ বা উদ্দেশ্য।” ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগ দেশটির ওপর ক্রমাগতভাবে স্বৈরাচারি কায়দার নিয়ন্ত্রণ জোরদার করছে। প্রধান প্রতিপক্ষ দল বিএনপি’র নেতা ও সমর্থকদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়েছে। তারা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ফাঁসি দিয়েছে। ১৯৭১ সালে যেসব বাঙ্গালী বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেনি এবং পাকিস্তান সরকারকে সমর্থন করেছিলো তাদের বিচারের জন্য বাংলাদেশী ট্রাইব্যুনাল কোর্ট তৈরি করে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ নাম দিয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার এমন একটি ভিডিও গেমস তৈরির জন্য অর্থ দিয়েছে যেখানে দেখানো হবে খেলোয়াড়রা পাকিস্তানী সেনাদের হত্যা করছে। এই গেম-এ বাংলাদেশী তরুণদের শেখানো হবে যেন তারা ১৯৭১ সালের যুদ্ধের আদলে গেরিলা নেতা সেজে পাকিস্তানী সেনাদের হত্যা করছে।
এই গেম- এর উদ্দেশ্য খুবই সাদামাটা — শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ইতিহাসের এমন সংস্করণকে তুলে ধরা; স্বাধীনতা যুদ্ধে এই দলের ভূমিকার কীর্তন করা, আর দেখানো যে যারা একে সমর্থন করবে না তারা সন্ত্রাসী ও হত্যার যোগ্য। তরুণদের মধ্যে পাকিস্তান-বিরোধী মনোভাব তৈরি করাই এর লক্ষ্য।
সম্পর্কে অব্যাহত টানাপড়েনের মধ্যে পাকিস্তানে টি-২০ ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে দল পাঠাবে না বলে বাংলাদেশ সম্প্রতি ঘোষণা করেছে। গত বছর ইসলামাবাদে সার্ক-এর যে শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিলো। ভারত তা বয়কট করলে বাংলাদেশ তাতে সমর্থন দেয়। ড. জুনায়েদ আহমদের লেখা ‘ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ: মিথস এক্সপ্লোডেড’ [বাংলাদেশের জন্ম: কল্পকাহিনীর বিস্তারিত] শীর্ষক বইয়ের ব্যাপারে সম্প্রতি পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পাক প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সারতাজ আজিজের কাছে অভিযোগ করেছেন। বাংলাদেশ যেভাবে ঘটনাবলী ঘটেছে বলে দেখাতে চায় তা এই বইয়ে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত দাবি করেন যে ইতিহাস নতুন করে আবিস্কারের জন্য এই বই লিখতে ইসলামাবাদের ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি’ টাকা দিয়েছে।
মজার ব্যাপার হলো, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই সেখানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রোষ অনেকটা উবে গিয়েছিলো। সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্কের বিস্তার ঘটে। ১৯৭৪ সালে জুলফিকার আলি ভুট্টো বাংলাদেশ সফরে গেলে তাকে ফুলমাল্য দিয়ে বরণ করা হয়। তাকে উষ্ণ স্বাগত জানিয়ে জনতা স্বতস্ফুর্তভাবে স্লোগান দেয়। ভুট্টোর প্রতি এই অতিরিক্ত ‘শুভেচ্ছা’ বর্ষণ দেখে শেখ মুজিব এতটাই বিব্রত হন যে তিনি রক্ষীবাহিনীর তরুণ অফিসারদের নির্দেশ দেন তারা যেন লুঙ্গি-গেঞ্জি গায়ে দিয়ে সাধারণ মানুষের ভীড়ে মিশে ভুট্টোর বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়। ভুট্টো সাভারের শহীদ স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে গেলে সেখানে সাদা পোশাকে উপস্থিত রক্ষী বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তান ও ভুট্টোর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ায় একটি আঞ্চলিক সংস্থা তৈরি করতে চেয়েছিলো বলে ১৯৮৫ সালে সার্ক সৃষ্টি হয়েছিলো। এই সংস্থা দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও আঞ্চলিক কানেকটিভিটি জোরদার করবে বলে স্বপ্ন দেখা হয়েছিলো। এমনকি এই ২০১৩ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা ও নওয়াজ শরীফের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় ছিলো।
তবে হাসিনা সরকার একেবারে শুরু থেকেই যে দিল্লির প্রভাবের মধ্যে থেকেছে তা গোপন কোন বিষয় নয়। তার পিতার গড়া ও এগিয়ে নেয়া দল আওয়ামী লীগ সবসময় ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে।
খালেদা জিয়ার ভোট-ভিত্তি ধ্বংস করতে হাসিনা জামায়াতে ইসলামীকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিলেন। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে খালেদা আগের নির্বাচনে বিজয়ী হন। জামায়াতে ইসলামীকে নিস্ক্রীয় করতে পেরে হাসিনা এখন বাংলাদেশের রাজনীতিকে ইচ্ছে মতো ব্যবহারের অবাধ সুযোগ পেয়ে গেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচন ছিলো ‘আইওয়াশ’ মাত্র। এতে ভোট গ্রহণের আগেই অধিকাংশ আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়ে যান।
নয়া দিল্লি আনুগত্যের জন্য শেখ হাসিনার পিঠ চাপড়ালেও বাস্তবিক পক্ষে বাংলাদেশ তার বৃহৎ প্রতিবেশির কাছ থেকে তেমন কিছু পায়নি। সীমান্ত এলাকায় হত্যাকাণ্ড চলছে। ভারতের কাছ থেকে পাওয়া ঋণগুলো থাকে শর্তে ভারাক্রান্ত। শর্তগুলো এমন যেন ঋণের টাকা ভারতের পকেটেই আবার ফেরত যায়। অভিন্ন নদীর পানিতে ন্যায্য হিস্যা পেতে বাংলাদেশের অব্যাহত দাবি ভারত ক্রমাগত প্রত্যাখ্যান করে চলেছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বোঝাপড়া ভারতের পক্ষ থেকে প্রবলভাবে তিরস্কার করা হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতে সফরে গিয়ে হাসিনা তিনটি ‘প্রতিরক্ষা এমওইউ’ সই করে এসেছেন।
শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশ ভারতের কৌশলগত অবস্থান থেকে পাকিস্তানকে বিবেচনা করতে চায়। এই অঞ্চলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি দৃশ্যত ভারতীয় নীতির একটি ‘এক্সটেনশন’-এ পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের জনগণ ভারতের প্রতি ভালোবাসার স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়নি। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ দুটি বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র। একটি অভিন্ন ইতিহাস রয়েছে তাদের। তাদের মধ্যে অমিলের চেয়ে মিলের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। কিন্তু হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে কোন বাস্তবিক ও গঠনমূলক সম্পর্ক বাস্তবে রূপ দেয়া কঠিন হবে। ক্রিকেটকে একটি ‘বেঞ্চমার্ক’ হিসেবে কল্পনা করা গেলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় বাংলাদেশীদের মন হাসিনার সঙ্গে নেই। প্রতিবার ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী টিমের খেলায় তাদের সমর্থনের বহর এ কথার স্বাক্ষ্য দেয়।
সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর
Discussion about this post