অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
তিন’শ জনের বিশাল বহর নিয়ে বহুল আলোচিত চারদিনের ভারত সফর শেষে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এ সফরে বাংলাদেশের কোনো প্রাপ্তি না থাকলেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দাবি ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। প্রটোকল ভেঙ্গে নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছেন। তাই দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত পুরো রাস্তায় গণসংবর্ধনা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এ সংবর্ধনায় জনগণকেও অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
কিন্তু, হঠাৎ করেই রোববার রাতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সংবর্ধনা বাতিল করা হয় বলে গণমাধ্যমকে জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান কেন বাতিল করা হয়েছে এবিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো কিছু না জানালেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে একাধিক কারণে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক কোনোটিতেই রাজি ছিলেন না শেখ হাসিনা। আর প্রতিরক্ষা চুক্তিতে রাজি না থাকায় ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর স্থগিত করা হয়। চীনের একটি পত্রিকার প্রতিবেদনেও বিষয়টি উল্লেখ করেছে। ভারতের পক্ষ থেকে চাপ ছিল প্রতিরক্ষা বিষয়ে ২৫ বছরের চুক্তি। জনগণ ও ক্যান্টনমেন্ট মেনে নেবে না বিধায় প্রধানমন্ত্রী আর এ পথে অগ্রসর হননি। সবশেষে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত যে সমঝোত স্মারক সই করেছে এটাতে বাংলাদেশের যে কোনো লাভ হবে না বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা বুঝতে পেরেছেন। যদিও তারা দাবি করছেন যে এর মাধ্যমে বাংলাদেশের নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী হবে।
এরপর সামরিক উপকরণ কেনার জন্য ভারত যে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে সেটাও কঠিন শর্তে। অস্ত্র কিনতে হবে ভারতের কাছ থেকেই। তারাও অন্য দেশ থেকে অস্ত্র কিনে বাংলাদেশের কাছে বেশি দামে বিক্রি করবে। এতে করে বাংলাদেশের লোকসান আরও বেশি হবে। কারণ, চীন-রাশিয়া থেকে আরও কম দামে উন্নত মানের অস্ত্র কেনা যায়। এটাও সরকারের জন্য নেতিবাচক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অপরদিকে, বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার যে ঘোষণা দিয়েছে ভারত সেটাও কড়া শর্তে। রাস্তা সংস্কারের জন্য ইট, বালি সিমেন্টসহ যত উপকরণ লাগবে এসবের ৭৫ শতাংশ কিনতে হবে ভারত থেকে। এ ঋণেও লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি হবে।
জানা গেছে, এসব চুক্তি ও সমঝোতাকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ্যে সফলতা বললেও ভেতরে ভেতরে তারা ভারতের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ । তাদের প্রত্যাশা ছিল রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি তিস্তার বিষয়ে এবার একটা ফয়সালা করে দেবেন। তা না হওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতারা নাখোশ হয়েছে। এদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি তিস্তা চুক্তি ছাড়াই প্রতিরক্ষা সমঝোতা করায় রাজনৈতিক অঙ্গন, টিভি টকশোসহ বিভিন্ন জায়গায় যে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা হচ্ছে এবং বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মানুষ যে সরকারের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছে সেটাও বুঝতে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের লোকজনই প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন যে, তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সাধারণ মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এরপরই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বাতিলের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তার এ নির্দেশের পরই সংবর্ধনা বাতিলের কথা গণমাধ্যমকে জানান আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ।
Discussion about this post