২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সংঘাতময় নির্বাচন হিসেবে তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংস্থা ইউনাইটেড স্টেইটস ইনষ্টিটিউট অব পিস (ইউএসআইপি)। আর এ সংঘাতের জন্য আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ধরে রাখবার জন্য আক্রমনাত্মক মনোভাব এবং নির্বাচনে সংঘাত কমিয়ে আনবার উপায় উপকরণ বিগত নির্বাচনের চেয়ে দুর্বল থাকাকে দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ‘ইলেকটিং পিস ভায়োল্যান্স প্রিভেনশন এন্ড ইমপ্যাক্ট এট পুল’ শীর্ষক প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায় সংগঠনটি।
বিশ্বে সংঘাতময় পাঁচটি নির্বাচনের মধ্যে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে সংঘাতময় ৫টি দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার উপর কেইস স্টাডি করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। বাংলাদেশসহ অপর চারটি দেশ হচ্ছে হুন্ডুরাশ, থাইল্যান্ড, মালাভি, এবং মলডোভা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিরোধী দলীয় জোট নির্বাচন বয়কট করেই শুধু ক্ষান্ত হয়নি। তারা রাস্তায় ভাংচুর করে, বাসে ককটেল নিক্ষেপ করে। জবাবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দলীয় অনুগত সেনাবাহিনী, পুলিশকে ব্যবহার করে। তারা জনবহুল প্রতিবাদ মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। আর এসব ঘটনায় ভোটার, রাজনৈতিক দলের কর্মী, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ কমপক্ষে ৪০০ জন লোক নিহত হয়। আর এসব ঘটনা ঘটে নির্বাচনের একমাস আগ থেকে নির্বাচনের এক সপ্তাহ পর পর্যন্ত ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্তের কারণে অত্যন্ত ধীরে ধীরে সংঘাতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরী হবার পেছনে তিনটি কারণ নির্ণয় করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। প্রথমত; নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দ্বারা। দ্বিতীয়ত; নির্বাচন পর্যবেক্ষণ এবং পরিকল্পনা করা হয়েছে নিয়ম বহির্ভূতভাবে। তৃতীয়ত; ভোটারদের টার্গেট করে নেয়া কর্মসূচী (শান্তি বার্তা, নাগরিক ও ভোটার প্রশিক্ষণ, ভোটারদের সাথে আলোচনা, যুবকদের জন্য প্রশিক্ষণ) ছিল অত্যন্ত দুর্বল কিংবা কার্যকরভাবেই নামেমাত্র। আর এসব কারণেই দেশটিতে উচ্চমাত্রার সংঘাত দেখা গেছে বলে প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবেই উচ্চমাত্রার রাজনীতিকেন্দ্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত। যে ব্যবস্থা বিজয়ী দলই পরাজিত দলকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দিয়ে ক্ষমতার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। আর রাজনৈতিকভাবে একটি ইসলামিক সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে হিন্দুদের (৯ শতাংশ) রাজনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে বিতর্ক তৈরী হচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী লীগের দিকে ঝোঁকে যাওয়া তাদেরকে বিরোধী দলগুলোর টার্গেটে পরিণত করছে। আর এই দুটি ফ্যাক্টর বাংলাদেশে নির্বাচনী পরিবেশকে ঝুঁকির মধ্যে নিপতিত করছে।
Discussion about this post