এনালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসছেন মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ড. শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইসি ও মদিনা শরিফের মসজিদে নববীর জ্যেষ্ঠ ইমাম শায়খ ড. আলী বিন আবদুর রহমান আল হুযাইফি। তারা ৬ এপ্রিল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলেম-উলামা মহাসম্মেলনে অংশ নেবেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে গত কয়েকদিন ধরে এমন তথ্যই প্রচার করেছে বাংলাদেশের মিডিয়া।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালও গত ৩০ মার্চ বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে পবিত্র মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর প্রধান ইমামদের আসার ব্যপারে নিশ্চিতও করেছিলেন।
এমনকি এই দুইজন মেহমানের কথা বলে সারাদেশের ৬-৭ লক্ষ আলেম ওলামাকে দাওয়াতও করা হয়।
কিন্তু গত ৪ তারিখ হঠাৎ করেই পত্রিকাগুলোতে দুই পবিত্র মসজিদের প্রধান ইমামদের পরিবর্তে পবিত্র কাবা শরিফের খতিব এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসির আল খুজাইম ও মসজিদে নববীর ইমাম আব্দুল মেহসিন বিন মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল কাশেম এর আগমনের কথা প্রচারিত হয়। তারা দুইজন গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় আসেন, বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেন এবং আজকের ওলামা সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্যও রাখেন।
পবিত্র মক্কা ও মদিনার প্রধান ইমামগনকে আমন্ত্রন জানানোর পরও কেনো ওনারা না এসে অন্য মেহমানদের পাঠিয়েছেন সেই ব্যপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি কোনো বিবৃতি প্রদান করা না হলেও বাংলানিউজে বলা হয়েছে, দুই পবিত্র মসজিদের সম্মানিত প্রধান ইমামগন তাদের শারিরীক অসুস্থতার কারন দেখিয়ে বাংলাদেশে আসতে অপারগতা জানিয়েছেন।
জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি বৈঠকে মক্কা ও মদিনার দুই ইমামের ঢাকায় আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলে দুই ইমামকে দাওয়াত দিতে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল ৭ মার্চ আমন্ত্রণপত্র নিয়ে সৌদি আরব যান। তারা ফিরে এসে বলেন, ‘দুই ইমামই বাংলাদেশের দাওয়াত কবুল করেছেন। এখন শুধু তারিখ চূড়ান্ত বাকী।’ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রতিবছর জাঁকজমকের সঙ্গে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করে। ২২ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হলেও এবার একটু পিছিয়ে দেওয়া হয় এবং এটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার সিন্ধান্ত হয় দুই পবিত্র মসজিদের ইমামকে নিয়ে করা হবে বলে।
দুই ইমামের উপস্থিতির সুবিধার্থে ২২ মার্চ থেকে সম্মেলন পিছিয়ে ৬ এপ্রিল করার পরও মেহমানদের না আসায় অবাক হয়েছেন অনেকেই। এ বিষয়ে আলেম ওলামা ও সাধারণ জনগনের মনে শোনা যাচ্ছে নানা গুঞ্জণ। পত্রিকায় অসুস্থ্যতার অযুহাতের কথা বলা হলেও অনেকেই এই ব্যাখ্যাকে বিশ্বাস করতে চাইছেন না।
তাদের প্রশ্ন দুইজনই কি একত্রে অসুস্থ্যতায় পড়েছেন? দুজনই কেনো একসাথে না করে দিলেন? অন্তত একজনও তো আসতে পারতেন? আসলেই কি ওনারা দাওয়াত কবুল করেছিলেন? নাকি শুধু শুধুই তাদের নাম বলে আলেম ওলামাদের উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে? তারা এই দুই সম্মানিত মেহমানের বাংলাদেশে না আসার পেছনে বাংলাদেশের বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডকেই দায়ী করেছেন অনেকাংশে।
অনেকের মতে, বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের একের পর এক ফাঁসি কার্যকর, ২০১৩ সালের ৫মে ঢাকার শাপলা চত্তরে সরকারি বাহিনী কর্তৃক রাতের অন্ধকারে অসংখ্য আলেম ওলামা হত্যাসহ শেখ হাসিনাপুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের ইসলাম বিদ্ধেষী মন্তব্য মূলত শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে সৌদি আরবসহ মুসলিম দেশসমূহের কাছে ইসলাম বিরোধী হিসেবে উপস্থাপন করেছে। যে কারনে পবিত্র দুই মসজিদের প্রধান ইমামগন বাংলাদেশে আসতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
গতবছর অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যাওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের পিছনেও একই কারন রয়েছে বলে মনে করেন কেউ কেউ। তাদের মতে ওআইসি সম্মেলনে ইসলমি নেতৃবৃন্দের নানা প্রশ্নের সম্মুখিন হওয়া থেকে রক্ষা পেতেই শেখ হাসিনা সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলকে প্রেরণ করেন।
যাই হোক, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ইসলামপন্থিদের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সাথে সরকারের একটি ইতিবাচক অবস্থান রয়েছে বলা যায়। এমন সময়ে মক্কা ও মদিনার দুই প্রধান ইমামকে প্রথমবারের মত বাংলাদেশে আনার মাধ্যমে হয়তো শেখ হাসিনা দেশি এবং বিদেশি ইসলামপন্থিদের সাথে একটি সুসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টারই ইঙ্গিত দিতে চেয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনের পূর্বে এমনটা করা তার জন্য জরুরিও বটে। কিন্তু মক্কা ও মদিনার দুই ইমামের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান শেখ হাসিনার সেই চেষ্টা অনেকটা কঠিন হবে বলেই ইঙ্গিত প্রদান করলো।
Discussion about this post