অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক:
শুক্রবার রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে দেওয়া আগুনে পুড়ে ৫ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
মোট চারটি বগিতে আগুন দেয়া হয়। এবং বগিগুলো পুড়ে প্রায় নিঃশেষ হয়ে যায। সাথে ঝড়ে যায় পাচঁটি তাজা প্রান। এ ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এদিকে শেখ হাসিনা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা কিনা- তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। কথা হচ্ছে এ আগুন কিভাবে লাগলো? কে দিলো? কেনই বা দিলো?
সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী এ আগুন দিয়েছে দুবৃত্তরা। কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যম বলছে কে বা কারা দিয়েছে এখনও শনাক্ত করা যায়নি। একটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রেনের পাওয়ার কার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। আগুন যেভাবেই লাগুক মানব সভ্যতার জন্য এটি একটি বড় রকমের দুর্ঘটনা ছিল।
নেটিজেন ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন যদি ট্রেনের পাওয়ার কার থেকে এ আগুন না লেগে থাকে তাহলে ধরে নেয়া যায় গোপিবাগে ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনা এটি পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। যেহুতু ৬ ও ৭ জানুয়ারী বিরোধী দলগুলো হরতাল ডেকেছে সেহুত ৫ জানুয়ারী পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়ে বিরোধী দলগুলোর উপর দোষ চাপানো হতে পারে।
উল্লেখ্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ আগামীকাল রোববার। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগই প্রধান দল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী কোথাও নিজেরা, কোথাও ঘনিষ্ঠরা। আর এরকম একটি একতরফা, বিরোধী দল ছাড়া ডামি নির্বাচনকে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং জামায়াতসহ উল্লেখযোগ্য বড় দল বর্জন করেছে। একই সাথে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ এবং তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের দাবী করে আসছে বিরোধী দলগুলো। তারই ধারবাহিকতায় ৭ জানুয়ারী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়া স্বত্বেও এই নির্বাচনেক বর্জন করে ৬ এবং ৭ জানুয়ারী হরতাল ডেকেছে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলো। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কেউ ট্রেনে আগুন দিয়ে দোষ চাপানোর অপচেষ্টাও করতে পারে বিরোধী দলগুলোর উপর।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস বক্তব্য বলছে ভিন্ন কথা:
শুক্রবার (৫জানুয়ারী) দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে আয়োজিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্রিফিং-পরবর্তী মিডিয়া ব্রিফিংয়ে আইজিপি বলেন, ‘নির্বাচনে নাশকতাকারীদের পরিকল্পনার তথ্য পেয়েছি’। ( সময় টিভি ০৩ টা ৫৯ মিনিট, ৫ জানুয়ারি ২০২৪)
শুক্রবার (৫জানুয়ারী) ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মনিটরিং সেল গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। এছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে সব সদস্যদের ছুটি বাতিল করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় মনিটরিং ও কো-অর্ডিনেশন সেল গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনকালে সহিংসতায় অগ্নিকাণ্ডসহ যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এ মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।’ (যুগান্তর ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:০৮ বিকাল)
ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনার পরে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস ১ ঘন্টা পর এসেছ ।’ ( যমুনা টিভি- ৫ জানুয়ারী ২০২৪ রাত ১০:১৬ মিনিট)
এত নিরাপত্তা বেষ্টনী ও চৌকস পুলিশ যারা নাশকতার আগেই নাশকতা সম্পর্কে অবগত ছিলেন, তারা সব কিছু জানলেও ট্রেনের আগুনের ব্যাপারে জানতেন না ব্যাপারটি কেমন যেন রসিকতার মত। এবং ফায়ার সার্ভিসের সব ছুটি বাতিল করে মনিটরিং সেল গঠনসহ কঠোর প্রস্ততি থাকা স্বত্বেও আগুন লাগা ট্রেনের কাছে পৌছতে প্রায় ১ ঘন্টা সময় লেগে গেছে এ বিষয়টিও রহস্যজনক।
একে একে চারটি বগি পুড়ে ছাই হয়ে গেলো। চারটি বগিতে আগুন তো এমনি এমনি লাগেনি। এবং চারটি বগি পুড়ে যেতে কম সময় লাগেনি। এতক্ষনে ফায়ার সার্ভিস সেখানে পৌছাতে পারে নাই। এ থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে এটি একটি পরিকল্পিত অগ্নিকান্ড। যার সাথে পুলিশ জড়িত থাকতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
দুপুরে পুলিশ যে নাশকতার কথা টের পেয়ে গেছেন বলে জানিয়েছিলেন সেটা ঠিক কি ধরনের নাশকতা ছিল? ফায়ার সার্ভিসের সব ছুটি বাতিল করে কিসের প্রস্ততি নিয়েছিল? ফায়ার সার্ভিস কার নির্দেশে ঘটনাস্থলে পৌছতে দেরি করেছে? বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসব প্রশ্নের উত্তর যদি পাওয়া যায় তাহলেই আসল ঘটনা বের হয়ে আসবে। শনাক্ত করা যাবে দুষ্ট চক্রের এস লোকদের।
Discussion about this post