আমদানি ব্যয় প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জ্বালানি তেল আমদানির পরিমাণ কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে ১.০৪ কোটি টন জ্বালানি তেল আমদানিতে বাংলাদেশ খরচ করেছে ৪৭ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২৩ সালে ৮২.৬৬ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানিতে খরচ হয়েছে ৪৭ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০২২ সালের সমপরিমাণ আমদানি ব্যয়ে ২০ শতাংশ কম জ্বালানি তেল আমদানি হয়েছে ২০২৩ সালে।
আমদানি ব্যাপকভাবে কমে গেলেও মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ার কারণে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি ব্যয় কমেনি। আমদানি করা জ্বালানির মধ্যে রয়েছে হাই স্পিড ডিজেল তেল, ফার্নেস তেল, পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিন খনিজ ও অপরিশোধিত তেল থেকে প্রাপ্ত তেল। আমদানিকৃত জ্বালানি তেল বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার উৎপাদন, পরিবহন এবং কৃষিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি, কিছু ক্ষেত্রে বরং কমেছে। তবে এ সময় ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২০ শতাংশের বেশি, যার আমদানি ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে।
আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সরকার কৃচ্ছ্রতা পদক্ষেপ অবলম্বন করে, যার অংশ হিসেবে অন্যান্য পণ্যের মতো জ্বালানি আমদানি কমে যায়। এর ফলে লোডশেডিংয়ের কারণে দেশের শিল্প খাতের পাশাপাাশি বাসাবাড়ির গ্রাহকদেরও ভুগতে হয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিচালক অনুপম বড়ুয়া বলেন, ব্যবহার কমে যাওয়া ও টাকার অবমূল্যায়নসহ বেশ কয়েকটি কারণে জ্বালানি তেল আমদানি কমেছে। তিনি আরও বলেন, ‘কনজাম্পশন কমে যাওয়ায় আমাদের আমদানি [বিপিসির মাধ্যমে] ১০ শতাংশের মতো কমেছে। ডলার সংকটও একটি ইস্যু। তবে এটি বড় কারণ নয়। কেননা কম আমদানির কারণে তো কোনোকিছু বন্ধ নেই।’
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর টিবিএসকে বলেন, ‘টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় আমদানি খরচ বেড়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত ডলারের অভাবে জ্বালানি তেল আমদানি কমেছে, যার জন্য শিল্প ও মানুষকে ভুগতে হয়েছিল।’
রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, একই সময়ে ২০ শতাংশ আমদানি কমলেও বর্ধিত মূল্যের কারণে তা রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। বরং আগের বছরের তুলনায় ৫০ কোটি টাকা বেশি আয়কর আদায় হয়েছে, যার পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি।
দেশের আমদানিকৃত জ্বালানি তেলের প্রায় পুরোটাই চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আসে, যার অ্যাসেসমেন্ট করা এবং রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পালন করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজসের ডেপুটি কমিশনার মো. বদরুজ্জামান মুনশি বলেন, ‘আমদানি কমলেও বর্ধিত মূল্যের কারণে রাজস্ব আদায় কমেনি, বরং কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া ট্যারিফ ভ্যালুর পরিবর্তে ইনভয়েস ভ্যালুতে বর্ধিত দরের বিষয়টিকে বিবেচনায় নেওয়াও এ খাত থেকে রাজস্ব আদায় বাড়ার কারণ।’
Discussion about this post