শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতারা প্রায় প্রতিদিনই বলেন যে বিএনপি ক্ষমতার জন্য বিদেশিদের কাছে দৌড়ঝাপ করছে। দেশের মানুষের উপর তাদের কোনো আস্থা নাই। জনগণের ভোট পাবে না বলেই তারা বিদেশিদের কাছে ধরণা দিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে বিদেশিদের কাছে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের দৌড়ঝাপ আরও বেশি হচ্ছে।
আমেরিকাকে ম্যানেজ করার জন্য শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি খরচ করছে লবিষ্টদের পেছনে। গত কয়েক মাস আগে জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ২০১৮ সালের ভোটডাকাতির নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্যে বলেছেন যে, দিনের ভোট রাতে হয় এমন কথা তিনি পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে কখনো শুনেন নি। তারপর গত দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি রিপোর্টে বাংলাদেশের ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন তুলেছে। এই রিপোর্টের পর শেখ হাসিনার ছেলে জয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরকে ভন্ডদের আখড়া বলে মন্তব্য করেছিল।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাপানি রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রিপোর্টে চরম অস্বস্তিতে পরে শেখ হাসিনা ও তার দল। তারা প্রকাশ্যে জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেও গোপনে গোপনে লবিং চালু রাখে। এরই অংশ হিসেবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বৃটিশ হাইকমিশনের বাসায় গিয়ে বৈঠক করে আওয়ামী লীগ নেতারা। এসব বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হল আগামী নির্বাচনে তাদের সমর্থন লাভ। এদিকে ঈদুল ফিতরের পর জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডন সফরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষ করে তিনি এখন লন্ডনে গিয়েছেন। লন্ডনেও তিনি কয়েকদিন অবস্থান করবেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার এই সফরের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আগামী নির্বাচন। যেহেতু ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে এই তিনটি দেশ বেশি কথা বলছে, তাই তাদের মুখ বন্ধ করা এবং আগামী সংসদ নির্বাচনে তাদের সমর্থন লাভ করাই হাসিনার মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া, শেখ হাসিনা যে নির্বাচনী লবিং করতে বিদেশ ঘুরছেন সেটার প্রমাণও ইতিমধ্যে মিলেছে। গত তিন দিন আগে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এটা নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নাই। এর একদিন পর গত বুধবার জাপানি রাষ্ট্রদূতও কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাষায়। জাপানি রাষ্ট্রদূত বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না। আগামী নির্বাচন এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ধারণা করা হচ্ছে-দুয়েকদিন পর ব্রিটিশ হাইকমিশনারের পক্ষ থেকেও এমন বক্তব্য আসতে পারে।
রাজনীতিক বিশ্লেষক ও সচেতন মানুষ বলছেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের বক্তব্য প্রমাণ করে শেখ হাসিনা বিদেশে গিয়ে লবিং করছেন। তাদের বক্তব্য শেখ হাসিনার লবিংয়ের ফল। কিছুদিন আগেও যারা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছিল হঠাৎ করেই তারা পাল্টে গেল। এর পেছনে বড় ধরণের তদবির কাজ করেছে।
Discussion about this post