অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রায় প্রতিনিয়তই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যখন গুম, অপহরণ, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বলে তখনই হাসিনা আরো বেশি উত্তেজিত হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনা সব সময় একটা কথাই বেশি বলে থাকেন-যুক্তরাষ্ট্র খুনীদের আশ্রয়দাতা। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফেরত দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র।
তারপর, শেখ হাসিনার ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশের চেয়েও বেশি মানুষ মারা যায়। আর হাসিনার মন্ত্রীরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রেও গণতন্ত্র নেই। তারা নিজেরা আগে গণতন্ত্র চর্চা করুক। তারপর অন্যদের গণতন্ত্র শেখাক।
দেখা গেছে যে দেশের সমালোচনায় মুখর, দিন শেষে আগামীতে ক্ষমতায় আসার জন্য আবার সেই দেশের কাছেই ধরণা দিচ্ছে। শেখ হাসিনার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি রোববার একটি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে বলেছেন, আমেরিকার দৃষ্টি ভঙ্গির কারণে সরকার চীন থেকে দূরে সরে আসছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য চীন থেকে এত টাকা এনে হঠাৎ করে দূরে সরে আসার কারণ না বললেও তার এই বক্তব্যের অর্থ পরিষ্কার। আন্তর্জাতিক গোষ্টী মূলত দুইভাগে বিভক্ত। চীন আর যুক্তরাষ্ট্র। চীনের পলিসি হল অর্থনৈতিক। তারা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রকল্প ও কাঠামোগত উন্নয়নে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে। এর মাধ্যমে তারা অর্থগ্রহীতা দেশগুলো নিজেদের কব্জায় নিয়ে আসে। দেশের অভ্যন্তরের রাজনীতি বা ক্ষমতার পরিবর্তন নিয়ে তারা কোনো চিন্তা করে না।
অপরদিকে, আমেরিকা কোনো দেশের সরকার যদি তাদের পক্ষের না হয় তাহলে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে তাদেরকে নিজেদের পক্ষে নেয়। আর পক্ষে না আসলে ভিন্ন পন্থায় সরিয়ে দেয়া বা নির্বাচনে বিরোধী পক্ষকে সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। এই কাজে যুক্তরাষ্ট্র খুবই দক্ষ এবং দীর্ঘদিন ধরেই তারা বিভিন্ন দেশের সরকার পরিবর্তনে বা চলমান সরকারকে ধরে রাখতে এসব কৌশল ব্যবহার করে আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করলেও ভেতরে ভেতরে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে ও আগামীতে আবার ক্ষমতায় আসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ধরণা দিচ্ছে। বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে যাওয়ার জন্য হাসিনার উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে লবিং করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের যেসব চাওয়া আছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মেনে নেয়ার আশ্বাসও দেয়া হয়েছে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে।
জানা গেছে, কূটনৈতিক বিষয়গুলো সরকার সব সময়ই গোপন রাখে। এক দেশের বিষয় অন্য দেশকে বুঝতে দেয় না।কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেদের অজান্তেই সরকারের এই গোপন বিষয় ফাস করে দিয়েছে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের চেয়ে সরকারের এখন বেশি দরকার আগামীতে ক্ষমতার নিশ্চয়তা। চীন যেহেতু ক্ষমতার রাজনীততে হস্তক্ষেপ করে না তাই সরকারকে এখন আমেরিকার কাছে ধরণা দিতে হচ্ছে। শেখ হাসিনা অনেক দিন ধরেই বুঝতে পারছে যে যুক্তরাষ্ট্র তার উপর ক্ষুব্দ। আগামীতে বিএনপি জোটকেও তারা ক্ষমতায় নিয়ে আসতে পারে। সেইজন্য এখন থেকেই দৌড়ঝাপ শুরু করেছে। আর বাণিজ্যমন্ত্রী আসল সত্যটাই বলেছেন।
Discussion about this post