অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দিন যত যাচ্ছে ততই দেশের রাজনীতিতে বাড়ছে উত্তাপ-উত্তেজনা। বিশেষ করে দেশের রাজনীতিতে এখন আলোচনার কেন্দ্রে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন কোন কিভাবে হবে সেই প্রশ্নে বিভক্ত সরকার ও বিরোধী দল। আওয়ামী লীগ বলছে-সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদিও বিএনপির দাবি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। তারা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দেশের কিছু নামসর্বস্ব ও গণবিচ্ছিন্ন সংগঠনের সাথে জোট করে সরকার বিরোধী আন্দোলনের চেষ্টা করতেছে।
তবে, আগামী নির্বাচনটা কেমন হবে-প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়াল ইতিমধ্যে পরিষ্কার করেছন। গত দুইদিন আগে তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে তারা কোনো গরুত্ব দেননি। তারা নিজেরা যেটা ভাল মনে করেছেন সেটাই করেছেন।
কথিত নির্বাচন কমিশন প্রধানের বক্তব্যে খুবই পরিষ্কার। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা সংলাপ ছিলো শুধু দেখানোর জন্য। দলগুলোর দেয়া মতামতকে কোনো পাত্তাই দেওয়া হয়নি। তাদের মতো করেই তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
দেখা গেছে, সংলাপে বিএনপি অংশ নেয়নি। অন্যান্য দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাদেরকে মতামতকে কোনো গুরুত্ব দেননি। বরং ক্ষমতাসীন দলের সিদ্ধান্তকেই বাস্তবায়ন করতে মারিয়া হয়ে উঠেছে। যার ফলশ্রুতিতে তারা ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আর লক্ষণীয় বিষয় হল-সিইসি প্রকাশ্যে বলেছেন, ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্তে দলগলোর মতামত মুখ্য নয়। মানে শুরুতেই তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে কোনো গুরুত্ব দেয়নি। তাহলে পরবর্তী দিনগলোতে কী হতে পারে সেটাও দুর্বোধ্য নয়। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার জন্য নুরুল হুদার মতো বর্তমান সিইসিও একই ভূমিকা পালন করবে। এক্ষেত্রে কে কি বলল সেটা তাদের কাছে ধর্তব্য হবে না।
এখন প্রশ্ন হল- বিএনপি কি সিইসির এই ম্যাসেজ বুঝতে পেরেছে? নাকি আবারও হাসিনার সেই ফাঁদে পা দেবে তারা?
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিইসি কাজী হাবিবুল আওয়াল সাবেক সিইসি নুরুল হুদার চেয়েও শেখ হাসিনার অধিক অনুগত। শেখ হাসিনা সরকার তাকে বিশেষ এজেন্ডা নিয়েই তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আসনে বসিয়েছে। আগামী নির্বাচনটা হবে শুধুই একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কয়টা আসন আওয়ামী লীগ রাখবে আর কয়টা অন্যদেরকে দেবে তা আগেই সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।
তবে বিরোধী দল গুলোকে আওয়ামী লীগকে বৈধতা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া বোকামি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বিএনপি যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন নিশ্চত না করতে পারে তাহলে নির্বাচন থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আর বিএনপি যদি সিইসির বার্তা না বুঝে তাহলে তাদের জন্য সমবেদনা প্রকাশ ছাড়া কিছু বলার নেই।
এদিকে ইভিএম বিতর্ক নিয়ে বেশ পুরোনো। বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল গত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা দেখে ইভিএমে ভোট চাইছে না৷ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনে পরিণত হয়েছে৷ প্রশাসন আর আমার প্রতিদ্বন্দ্বী৷ শুধু আওয়ামী লীগ নয়৷ নির্বাচনের দিনের আগে থেকেই বিষয়টা দেখছি৷ নালিশ জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি৷”
‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ টকশোতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন সেটা আসলে গুরুত্বপূর্ণ৷ আমার এলাকায় ইভিএমে ভোট হয়েছিল৷ কী সমস্যা হয়েছিল জানি৷ চাইলেও মামলা করতে পারিনি, কারণ কোনো কাগজ পাইনি৷” আবদুস সালামের অভিযোগ, ‘‘ভোট যাকে দিলাম সেখানেই যে গেল তার প্রমাণ নেই৷আমার প্রতিটা কেন্দ্রে একটা না একটা যন্ত্রে সমস্যা ছিল৷ ইভিএমে ভোগান্তি বেশি৷ থাম্ব দেয়ার পর প্রতীকে অন্যের লোক ভোট দিয়ে দিতে পারে৷ বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ অভ্যস্ত নন৷ ইভিএমে কারচুপি সম্ভব৷ দিল্লির পার্লামেন্টেও এই বিষয়টি দেখানো হয়েছে৷ এক জায়গায় ভোট দিলে অন্য জায়গায় পড়ছে৷আর বাংলাদেশের ইভিএম তো ভারতের অনেক পিছনে৷”
তার কথায়, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে ভোট চায় না বিএনপি৷ কারণ তা নিরপেক্ষ হয় না৷ ইভিএম ত্রুটিপূর্ণ, আস্থা নেই৷ যন্ত্র হ্যাক করার প্রযুক্তি রয়েছে৷ নিজের মতো করে ইভিএম চালনা করে৷ বাংলাদেশের বেশিরভাগ দল ইভিএমে ভোট চায় না৷
সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার কথা উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, যন্ত্র কিনতে বিপুল পরিমাণ খরচ হবে৷ এই মুহূর্তে এটা বিলাসিতা৷
উন্নত বিশ্বে ইভিএমে ভোট চায় না কিন্তু আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন ইভিএমে ভোট চান, খালেদ মুহিউদ্দীনের এমন প্রশ্নের উত্তরে আ স ম ফিরোজ বলেন, স্বাধীন সার্বভৌম কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে৷
Discussion about this post