বিদ্যুতের লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং ভোলায় দুই নেতাকে হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র যৌথ আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারে কাছে ক্ষমতার হস্তান্তর করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। বক্তারা বলেন, এই লড়াই হচ্ছে দেশ ও জাতিকে রক্ষার লড়াই। লুটেরা সরকারের হাত থেকে মানুষকে বাঁচানোর লড়াই। সরকার লুটপাট ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে উল্লেখ করে বক্তারা আরো বলেন, সরকারি দলের লুটেরাদের সুযোগ করে দিতে সরকার ইনডেমনিটি আইন বানিয়ে দেশের টাকা লুট করেছে। পদত্যাগ না করলে অবিলম্বে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে বলেও বক্তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সভাপতি আবদুস সালাম। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কেন্দ্রীয় নেতা, আবদুল আওয়াল মিন্টু, আবদুল্লাহ আল নোমান, ডা. এজডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, জয়নাল আবেদীন, আমান উল্লাহ আমান, আফরোজা খান রিতা, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী, আবদুস সালাম আজাদ, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, উলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ছাত্র দলের কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমূখ এই জনসভায় বক্তব্য রাখেন।
বেলা দুইটায় সমাবেশের নির্ধারিত সময়ের আগেই নয়াপল্টনের রাস্তায় হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত হয়। এক পর্যায়ে কাকরাইলের নাইটেঙ্গ্যাল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত পুরো রাস্তা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এছাড়া আশে-পাশের বিজয়নগর রাস্তাসহ অন্যান্য রাস্তায়ও লোক সমাগম ঘটে।
সমাবেশে আসার পথে বিভিন্ন জায়গায় বাঁধা উপেক্ষা করেই উপস্থিত হয় নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের শ্লোগানে মুখরিত ছিল ঢাকার বিভিন্ন রাস্তা। শ্লোগান ছিল-এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা তুই কবে যাবি? ঢাকার রাজপথে অনেক দিন পর বিএনপি’র এরকম একটি সমাবেশকে ঘিরে পুরো শহর যেন শ্লোগানের নগরীতে পরিণত হয়েছিল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের জেগে উঠতে হবে। আবার নতুন করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হবে। লড়াই সংগ্রাম শুরু হয়েছে। এ লড়াই আমাদের বেঁচে থাকার লড়াই। এ লড়াই বাংলাদেশকে রক্ষা করবার লড়াই। শুধু বিএনপির নয়, তারেক রহমানের নয়, আমাদের নয় এ লড়াই বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে বাঁচাবার লড়াই। এ লড়াইয়ে আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। রাজপথ আমাদের দখল করতে হবে। রাজপথে লড়াই চালিয়েই আমরা এ ফ্যাসিস্ট, মাফিয়া সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার ও একটি জনগণের সমাজ তৈরি করবো।
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির মহাসচিব বলেন, হাসিনা সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে চাই আর কাল বিলম্ব না করে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিয়ে নতুন পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমাদের অনেকে বলেন আওয়ামী লীগ একটি ফোরটুয়েন্টি পার্টি। আমি তাদের সঙ্গে একমত হয়ে বলতে চাই আওয়ামী লীগ একটি প্রতারক দল। এ সরকার প্রতারণা করে মানুষের অধিকারগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা কী বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন আমি ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াব, ঘরে ঘরে চাকরি দেব, বিনা পয়সায় সার দেব। তাই না? এখন সারের দাম কত? ২২ টাকা। আজকে সেই সারের দাম আবার ৩৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। আর ঘরে ঘরে অনেক শিক্ষিত ছেলেদের কাজ নেই। শিক্ষিত ছেলেরা মোটরবাইক চালায়। আমাদের অনেক ছেলেরা আছে যারা বলে না, তারা এখন রিকশা চালায়, অটোরিকশা চালায়। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অত্যাচারে এলাকায় থাকতে পারে না। ঢাকায় চলে এসেছে। এখানে এ কাজগুলো করে তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে।
এ সরকার কাদের চাকরি দেয় প্রশ্ন করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের রিকমেন্ডশন লাগবে সঙ্গে ১৫/২০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে। এ হচ্ছে আওয়ামী লীগের কাজ। তারা বলেছিল দেশে গণতন্ত্র দেবে, বাক স্বাধীনতা দেবে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেবে। সমস্ত কিছু তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। এখানে সাংবাদিক ভাইয়েরা আছেন, তারা জানেন যে তারা কতটুকু লিখতে পারেন। টেলিভিশনের ভাইয়েরা এখানে সকাল থেকে আছেন। কিন্তু তারা গিয়ে দেখবেন দুই থেকে তিন সেকেন্ড দেখাবে।
এ সরকার বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করেছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু তাই না, বিচারপতি খায়রুল হককে দিয়ে তারা এ দেশের সংবিধানকে ধ্বংস করেছে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যার মাধ্যমে আমরা একটা অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন পেতাম। যে ব্যবস্থায় এ দেশের মানুষ তাদের ভোট দিতে পারতো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চারটা নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সেই ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা করেছে। সেদিন থেকেই তারা এ দেশের রাজনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের মধ্য দিয়ে দেশে নতুন করে সংঘাত ও অস্থিতিশীলতা শুরু হলো।
সমাবেশে বিএনপির নেতারা বলেন, সরকার তাদের দাবিতে কান না দিলে বিএনপি রাস্তায় জোরদার আন্দোলন শুরু করবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই স্বৈরাচারী, লুটেরা, ভোট ডাকাত, ফ্যাসিবাদী সরকারের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হলে, ফয়সালা করতে হবে রাজপথে। এই ফয়সালা করতে প্রস্তুত বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো। এদেশে যখন গণতন্ত্র ছিলো না, তখন সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছিলেন বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। বহুদলীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল বিএনপি। এরপর স্বৈরাচার ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলো। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এদেশে আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে। তারা কোনোদিন গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবে না। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে।
সূত্র: আমার দেশ
Discussion about this post