গুম-খুনের দায়ে অভিযুক্ত আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা পুলিশের আই জি বেনজির আহমেদ ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আয়োজিত পুলিশ প্রধানদের সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে এই সার্কুলার জারি করা হয়েছে ৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার। সার্কুলার অনুযায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের নাম রয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা বেনজির আহমেদের নামও রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা বেনজিরকে আমেরিকা প্রবেশ করতে দিবে কি না। যদি প্রবেশ করতে দেয় তাহলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ছাড়া কিভাবে অনুমতি দিবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। এছাড়া আমেরিকা ভিসা ইস্যু করলে এবং তাঁকে প্রবেশ করতে দিলে নিষেধাজ্ঞার গুরুত্বই বা কি, এনিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ইস্যু করা সার্কুলার বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) আমার দেশ-এর হাতে আসার পরপরই বাংলাদেশে ঢাকাস্থ আমেরিকান অ্যাম্বেসির ওয়েবসাইটে থাকা ই-মেইলে একটি মেইল পাঠিয়ে আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল। অ্যাম্বেসির কর্তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, গুম-খুনের দায়ে তাদের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা পুলিশ প্রধানকে ভিসা ইস্যু করা হয়েছে কি না। ভিসা ইস্যু করা হয়ে থাকলে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা অভিযুক্ত একজন ব্যক্তিকে কিভাবে ভিসা দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও আমেরিকান অ্যাম্বেসি থেকে কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
গ্লোবাল পুলিশিং চ্যালেঞ্জ এবং এগিয়ে যাওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করার জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পুলিশ প্রধানদের তৃতীয় এই সম্মেলন হবে দুইদিন ব্যাপী। ৩১ আগস্ট সম্মেলন শুরু হয়ে শেষ হবে ১ সেপ্টেম্বর। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই সম্মেলনে যোগ দেবেন বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজির আহমেদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব আবু হেনা মোস্তফা জামান, উপ-সচিব মো. আসাদুজ্জামান, পুলিশের এডিশনাল ডেপুটি সেক্রেটারী জেনারেল নাসিয়ান ওয়াজেদ ও সহকারী ইন্সপেক্টর জেনারেল মোহাম্মদ মাসুদ আলম।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারী মো. হারুন অর রশীদ স্বাক্ষরিত এক সরকারি আদেশে এই প্রতিনিধি দলের ইউএনসিওপিএস সম্মেলনে যোগ দিতে চাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধে’ মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন রাজস্ব ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানানো হয়েছিল। মূলত: বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ভিন্নমতের রাজনীতিকদের আটক করে গুম করার অভিযোগে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার বরাত দিয়ে বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে ছয় শতাধিক গুম, ২০১৮ সাল থেকে প্রায় ৬০০ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতনে র্যাব ও রাষ্ট্রের অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায় রয়েছে। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মত মানবতা বিরোধী অপরাধ গুলোর সাথে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় না আনা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
এই নিষেধাজ্ঞার সাত মাস পর গুম-খুনের নেপথ্যের নায়ক বেনজির আহমেদ কীভাবে জাতিসংঘের পুলিশ সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছেন সেটি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর আগে গত মার্চ মাসে ডিফেন্স সার্ভিসেস এশিয়া (ডিএসএ) এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি (এনএটিএসইসি) এশিয়া সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মালয়েশিয়া সফরে যান বেনজির। সফরের সময় মালয়েশিয়া সরকারের ইমিগ্রেশন প্রধানের সাথে সাক্ষাত চেয়ে ২৩ মার্চ একটি আবেদন করেন বেনজির আহমেদ। তার পক্ষে আবেদনটি করা হয় বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে। মালয়েশিয়ান রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের বরাবরে আবেদনের পরও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র কুয়ালালামপুর থেকে আমার দেশকে জানায়, বেনজির আহমদের গুম-খুনের বিষয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষ থেকে সেখানকার কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছিল। বিশেষ করে ২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে তার নেতৃত্বে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে আলেম ও মাদ্রাসা ছাত্রদের হত্যা, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গুম এবং বিচারবহির্ভূত খুনের বিষয়টি মালয়েশিয়া সরকারকে অবহিত করা হয়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। মালয়েশিয়ায় একটি গণতান্ত্রিক ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। ফলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের এই আবেদন সে দেশের সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছিল।
সূত্র: আমার দেশ
Discussion about this post