অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
শেখ হাসিনার মনোনীত নির্বাচন কমিশন এবার ইভিএমকে হালাল করার কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে। এই কৌশলের অংশ হিসাবেই ইভিএম-এর পক্ষে সাফাই গাইতে আওয়ামী তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হিসাবে পরিচিত জাফর ইকবালকে নামানো হয়েছে মাঠে। মঙ্গলবার (২৫ মে) নির্বাচন কমিশনের আয়োজিত ইভিএম নিয়ে মতবিনিময়ের পর জাফর ইকবাল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের প্রশংসা করেছেন। জাফর ইকবালের সাথে আরো যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের প্রায় সকলেই আওয়ামী তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হিসাবে পরিচিত। বেঠকে তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন আওয়ামী হিসাবে জাফর ইকবাল। তাঁর সাথে ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম কায়কোবাদসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষক। তবে বৈঠক শেষে ইভিএম-এর পক্ষে সাফাই গেয়ে বক্তব্য দেন জাফর ইকবাল এবং কায়কোবাদ। দুইজন একই সুরে ইভিএম-এর প্রশংসা করেছেন।
ইতোমধ্যেই ধারণা করা হচ্ছে, আগামী নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার ভিন্ন কৌশল হতে যাচ্ছে ইভিএম। তিনি গত ৮ মে গণভবনে দলীয় নেতাদের সাথে বৈঠকে ঘোষণা করেছেন আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে ইভিএম-এ। যদিও পরের দিনই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন আগামী নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে সেটা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। মঙ্গলবারের মতবিনিময়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবেও একই কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আওয়াল। তবে প্রশ্ন উঠেছে, যদি সিদ্ধান্তই না নেওয়া হয়ে থাকে তাহলে ইভিএম নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরই আওয়ামী তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের দাওয়াত দিয়ে প্রশংসা করানোর উদ্দেশ্য কি? কেনইবা আওয়ামী তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হিসাবে পরিচিতদের দাওয়া দেওয়া হলো? জাফর ইকবাল তো বরাবরই শেখ হাসিনার ভাষাকে সমর্থন করে ইভিএম-এর পক্ষে সাফাই গাইছেন। তাঁকে দিয়ে নতুন করে আবার সাফাই গাওয়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মতবিনিময় সভায় ইভিএম প্রদর্শন শেষে অধ্যাপক মোহাম্মদ জাফর ইকবাল এবং কায়কোবাদ এক স্বরে বলেন, ইভিএম অত্যন্ত চমৎকার মেশিন। এই মেশিন দিয়ে ম্যানুপ্যুলেশন (কারচুপির) করার সুযোগ নাই। সাংবাদিকদের জাফর ইকবাল আরো বলেন, আমি গতবার যখন এই মিটিংয়ে এসেছিলাম তখন আমাদের একজন সদস্য বলেছিলেন যে, ইভিএম বিষয়টা আমাদের দেশের জন্য খুবই হাইটেক। এটা আমাদের দেশে ব্যবহার করা উচিত না। আমি তখন কমিটিকে বলেছিলাম যে, ইভিএম মোটেও হাইটেক মেশিন না। আমাদের আন্ডার গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টরা তাদের প্রজেক্ট হিসেবে প্রায়ই নিয়মিতভাবেই ইভিএম তৈরি করে। স্টুডেন্টরা দেশের বাইরে গিয়ে ইভিএম তৈরি করে অনেক বড় পুরস্কার পেয়ে আসছে। সেজন্য আমি উনাদেরকে অনুরোধ করেছিলাম যে, ইভিএম মেশিনটা আমাদের বাংলাদেশের প্রযুক্তিবিদ যারা তাদের সামনে দেখানোর জন্য। যাতে তারা এটি দেখে মন্তব্য করতে পারেন। মোস্ট প্রোভাবলি আমাদের সেই অনুরোধটা রক্ষা করে আজকে আমাদের সবাইকে ডেকেছেন।
তিনি বলেন, একটা মেশিন খুলে দেখেছি। এটা অত্যন্ত চমৎকার একটা মেশিন। আমার মনে হয় পৃথিবীর কম দেশেই এই মূল্যবান জিনিসটা আছে। যারা এটি তৈরী করেছেন আমি তাদেরকে কংগ্রাচুলেট করি। অত্যন্ত সহজভাবে এটা চালানো সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, আমি খবরের কাগজে দেখেছি রাজনৈতিক দলগুলি নতুন করে কমিশন তৈরিসহ নানান দাবি করছে। আমি রাজনৈতিক দলগুলিকে বলবো আপনাদের মত অনুযায়ী যদি নতুন কমিশন তৈরী করতে পারেন, তারপরও তাদেরকে অনুরোধ করবো আপনারা এই নতুন মেশিনটা ব্যবহার করেন, তাতে আপনাদেরই লাভ হবে।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এম কায়কোবাদ বলেন, কোনো মেশিনকে শতভাগ বিশ্বাস করা যাবে না। তবে এখানে যেটা করা হয়েছে এর প্রত্যেকটা অংশ এমনভাবে কাস্টমাইজড করা হয়েছে। একজন ইচ্ছে করলেই সেটাকে পরিবর্তন করতে পারবেন না। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট দক্ষ এবং তাদেরকে আমরা বিশ্বাস করতে পারি। খুবই একটা ভালো মেশিন তৈরি করা হয়েছে। আমি আশা করি এটা ডিসপ্লে করা হবে এবং যে কেউ টেস্ট করতে পারবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা যেটা বলতে চাচ্ছি আমরা কিন্তু কারো মতামতকে উপেক্ষা করিনি। বিরোধী দল থেকে যে মতামত এসেছে-আমরা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেইনি। আমরা অনেকগুলো মিটিং করেছি। আজকেও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বসেছি। যারা প্রযুক্তিবিদ তাদের সঙ্গে বসেছি। এই মেশিনের (ইভিএম) ব্যাপারে উনাদের বক্তব্যের পরে কোনো কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমি শুধু বলতে চাচ্ছি এই মেশিনের বিষয়ে আরো কয়েকটা মিটিং করবো। পলিটিক্যাল পার্টিকে ডাকা হবে।
তিনি বলেন, ইভিএমে নিয়ে প্রযুক্তিবিদরা বলেছেন ম্যানুপ্যুলেশন করার সুযোগ নেই। আমার কিন্তু আস্থা রাখতে হবে ওইসব মানুষের ওপর যারা এই জিনিসগুলো বোঝেন, যারা প্রোডাক্টগুলো তৈরি করেছেন তাদের ওপর। প্রযুক্তিবিদরা আশ্বস্ত হয়েছেন। আমরা আরো কয়েকটি বড় মিটিং করব। পলিটিক্যাল পার্টি যেহেতু বাইরে মাঠে বলছেন এটা মন্দ মেশিন ভালো মেশিন না।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ইভিএম মেশিন নিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। আমরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে করব, না ১০০ আসনে করব, না মোটেই করবো না; এগুলি যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হবে, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এছাড়াও মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান (অব.), বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মতিন সাদ আবদুল্লাহ, ড. মো. মাহফুজুল ইসলাম, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) পরিচালক মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন, সেনা কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post