অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সারাদেশে খুন, হত্যা, গুম, অপহরণ, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণসহ সব ধরণের অপরাধ কর্মকাণ্ড যখন বেড়েই চলেছে তখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে মুখ থুবড়ে পড়েছে। যদিও এই চিত্র নতুন কিছু নয়। শুধু তাই নয় নাগরিকরা বাসা থেকে বের হয়ে যে সুস্থ অবস্থায় ফিরতে পারবে সেই নিশ্য়তা নাই। নেই জান-মালের কোনো নিরাপত্তাও।
২০০৯ সালে ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সহযোগিতায় শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরই কথিত উন্নয়নের নামে দুর্নীতি, লুটপাট আর বিরোধীদলকে নির্মূল করার অভিযানে নামে। বিগত ১২ বছরে শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাকর্মীরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এই দুইটি কাজ করে যাচ্ছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে ১২ বছর ধরে শেখ হাসিনা বিরোধীদলকে দমনের কাজে ব্যবহার করছে। এই সুযোগে পুরো দেশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে অপরাধীরা।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ সর্বদায় আতঙ্কে থাকে। এমনকি মানুষ এখন নিজ বাসাতেও নিরাপদ নয়। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার প্রধান দায়িত্ব হল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। অথচ-জনগণের নিরাপত্তা না দিয়ে উল্টো মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে পুলিশ বাহিনী।
প্রতি বছর দুই ঈদে দুইটি উৎসব পালন করে এদেশের মানুষ। যারা জীবিকা নির্বাহের জন্য বাড়ির বাইরে থাকে ঈদের সময় তারা বাবা-মাসহ আত্মীয় স্বজনের সাথে ঈদ করতে বাড়ি যায়। কিন্তু বিগত কযেক বছর ধরে মানুষ শান্তিতে ঈদ উৎসবও পালন করতে পারে না। যারা ঢাকা কিংবা অন্য শহরে থাকেন তারা বাসার নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাড়ি যেতে পারেন না।
ঈদ উৎসবের সময় মানুষের বাসা বাড়ির নিরাপত্তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব। অথচ পুলিশ কর্মকর্তারা মানুষকে বলছে-বাসা খালি রেখে বাড়িতে না যাওয়ার জন্য।
গত সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন-ঈদের মধ্যে স্বর্ণালঙ্ক আত্বীয়সজনের বাসায় রেখে যাওয়ার জন্য। ঈদের সময় প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য নগরবাসীর অনেকেই গ্রামের বাড়িতে যান। তাতে তাদের বাসা-বাড়ি ফাঁকা থাকে। এ সময় যেন কোনো ধরনের অঘটন না ঘটে, এজন্য বাসাবাড়ির নিরাপত্তা প্রহরীদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
এর একদিন পর চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার বলেছেন-বাসা খালি রেখে ঈদে বাড়ি না যাওয়ার জন্য। এসময় আসন্ন ঈদের বন্ধে খালি বাসায় মূল্যবান জিনিসপত্র না রেখে আত্মীয়স্বজন কিংবা বিশ্বস্ত কারও কাছে রাখার জন্য নগরবাসীকে পরামর্শ দিয়েছেন নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।
তাদের এসব বক্তব্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এনিয়ে মানুষের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্রই মানুষ কঠোর ভাষায় সরকার ও পুলিশের সমালোচনা করছেন। অনেকেই বলছেন-পুলিশের দায়িত্ব হল নিরাপত্তা দেয়া। কিন্তু তারা সেটা না করে মানুষের মধ্যে উল্টো আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন যদি মানুষের মধ্যে চুরি-ডাকাতির আতঙ্ক ছড়ায় তাহলে আশ্বস্ত করবে কে?
এছাড়া সম্প্রতি র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে ওই দেশের ‘লেহি আইন’ অনুযায়ী ওই সংস্থাকে কোনও সহায়তা দিতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে বাংলাদেশের অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা বিচারিক বিভাগকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ করেছে যা বাংলার জনমনে আরও হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে। এরআগে ফরিদপৃুরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এস এম আসাদুজ্জামানও দায়িত্বহীন কথা বলে তোপের মুখে পড়েছিলে। আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে স্থানীয়দের মাঝে।
লিখিত বক্তব্যের শেষ লাইন দুইটিতে লেখা ছিল, ‘হাইওয়ে থানা পুলিশ ব্যতীত অন্য কোনও সংগঠন বা ব্যক্তি মহাসড়কে চাঁদাবাজি করলে তার দায়-দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশ নেবে না।’
বিষয়টি নিয়ে সংবাদকর্মী ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। অনেকেই ফেসবুকে বিষয়টিকে ভাইরাল করে বিভিন্ন বক্তব্য দিতে থাকেন। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের অভিযোগ, মহাসড়কে থ্রি হুইলার বন্ধ ও চাঁদাবাজি দূর করা। এসব দেখভালের দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশের।
Discussion about this post