অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ইউক্রেনের বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি জাহাজে রকেট হামলায় নিহত নাবিক হাদিসুর রহমান আরিফের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে স্বজনদের কাছে হাদিসুরের নিহতের খবর পৌঁছেছে। নিহত নাবিক হাদিসুরের বাড়ি বরগুনা বেতাগী উপজেলার ৩ নম্বর হোসনাবাদ ইউনিয়নে। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা মো. রাজা হাওলাদারের ছেলে।
নিহত হওয়ার খবর পরিবারের কাছে পৌঁছানো বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাদিসুরের চাচা বেতাগী উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি থেকে খবরটি হাদিসের পরিবারকে জানানো হয়েছে।
ফোরকান বলেন, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট সাজিদ হোসেনের মাধ্যমে তাঁরা জেনেছেন, বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’তে রকেট হামলায় ওই জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান মারা গেছেন। এ খবরে হাদিসের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে।
স্বজনদের দাবি, যে করেই হোক হাদিসুরের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হোক। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা-বাবা। পরিবারের পক্ষ থেকে ছেলের মরদেহ দেশে আনার জন্য সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন।
নিহত হাদিসুরের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা বাজারসংলগ্ন চেয়ারম্যান বাড়ির বাসিন্দা মো. আবদুর রাজ্জাক (অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক) ও আমেনা বেগম দম্পতির বড় ছেলে হাদিসুর।
নিহতের ছোট ভাই তারেক বলেন, ‘গতকাল বুধবার শেষবারের মতো হাদিসের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের মুঠোফোনে কথা হয়েছিল। হাদিস ইউক্রেনে আটকে থাকার কথা আগেই পরিবারকে জানিয়েছিলেন। বড়ভাই হাদিসুর পরিবারের সবার কাছে দোয়া চেয়েছিলেন যেন নিরাপদে বাড়িতে ফিরতে পারেন।’
তারেক আরও জানান, ‘চার ভাইবোনের মধ্যে হাদিসুর রহমান দ্বিতীয়। চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে ৪৭ ব্যাচে লেখাপড়া শেষ করে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগ দেন হাদিসুর। এবার বাড়ি ফিরলেই হাদিসুরকে বিয়ে করানো হবে বলে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পাঁচ দিন আগে হাদিসুর তাঁর মা আমেনা বেগমকে মোবাইলে জানিয়েছিল যুদ্ধে আটকা পড়ার কথা। তখন থেকেই আমরা শঙ্কায় ছিলাম, শেষ পর্যন্ত সেটাই সত্য হলো। এখন মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে আরও বেশি দুশ্চিন্তায় আছি। আমরা জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় মরদেহ দেশে আনার চেষ্টা করব।’
হাদিসুর মা আমেনা বেগমের ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে শোকে পাগলপ্রায়। বাবা আবদুর রাজ্জাক বাকরুদ্ধ।
আমেনা বেগম বিলাপ করে বলেন, ‘বাজানে মোরে কইছে, এইবার বাড়তে আইয়া ঘর উডাইবে, আর ভাঙা ঘরে থাহন লাগবেনা। ঘরহান উডান অইলে বিয়া কইরা বউ ঘরে আনবে। মোর পোলাডার লাশটা আইন্না দ্যান, মোর পোলাডারে মুই একনজর দেকমু, আর কিচ্ছু চাইনা।’
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাহাবুদ্দিন আহমেদ জানান, নিহত হাদিসুরের মরদেহ দেশের আনার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।
বিএসসি সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে আটকে পড়ে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’। জাহাজটিতে ২৯ জন বাংলাদেশি নাবিক ছিলেন। জাহাজটি বর্তমানে ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দর চ্যানেলে নোঙর করা আছে। রকেট হামলার পরে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে। সিরামিকের কাঁচামাল ‘ক্লে’ পরিবহনের জন্য জাহাজটি তুরস্ক থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায়।
সেখান থেকে কার্গো নিয়ে ইতালি যাওয়ার কথা ছিল। তবে যুদ্ধাবস্থা এড়াতে জাহাজটিকে সেখানে পৌঁছানোর পরই পণ্য বোঝাই না করে দ্রুত ফেরত আসার জন্য নির্দেশনা দেয় শিপিং করপোরেশন। শেষ মুহূর্তে বন্দরের পাইলট না পাওয়ায় ইউক্রেনের জলসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশের এই জাহাজটি। এরপর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
সূত্র: আজকের পত্রিকা
Discussion about this post