বুধবার, নভেম্বর ৫, ২০২৫
Analysis BD
No Result
View All Result
No Result
View All Result
Analysis BD
No Result
View All Result
Home slide

ভালোবাসা দিবসের আড়ালে কি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হারিয়ে গেল

ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২
in slide, অতিথি কলাম
Share on FacebookShare on Twitter

রাশেদুজ্জামান রাশেদ

‘আজি দখিন-দুয়ার খোলা,/ এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো…’—এভাবেই বসন্তকে আহ্বান করেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই বসন্ত এসে গেছে। আহা! কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে। কিন্তু বসন্তের প্রথম দিনই ছিল বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের জন্য এক কলঙ্কময় দিন। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত হলেও আমাদের দেশের ইতিহাসে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু খুব আশ্চর্যের বিষয়, সেই বছরের এই দিনে ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে ঢাকার রাজপথ, কিন্তু তা কেউ মনে রাখে না। অথচ উড়ে এসে জুড়ে বসা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নিয়ে মেতে আছে তরুণসমাজ।

১৪ ফেব্রুয়ারি, এমন কি পরদিনও ঢাকায় ঝরেছিল শিক্ষার্থীদের রক্ত। কেন রক্ত দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা? এমন প্রশ্ন কি আমাদের শিক্ষার্থীদের ভেতর জাগ্রত হয়? উত্তর খুব স্পষ্ট শিক্ষার্থীদের রক্তে রঞ্জিত ইতিহাস রাষ্ট্র কখনো বুঝতে দিতে চায় না। তাহলে শিক্ষার্থীরা জানবে কীভাবে? কথার প্রসঙ্গে যদি বলা হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কোনো শিক্ষার্থীকে যদি প্রশ্ন করা হয়, ‘বাবা, বলো তো বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কবে?’ সেই শিশুশিক্ষার্থী অকপটে তার সঠিক উত্তর বলে দিতে পারবে। কিন্তু যখন বলা হবে শিক্ষা দিবস কবে? তখন সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। এমনকি কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও বলতে পারে না। স্বাধীন দেশে শিক্ষাব্যবস্থা কোন পথে। শিক্ষা যে কোনো পণ্য নয়, শিক্ষা শিক্ষার্থীদের অধিকার, এ কথা রাষ্ট্র বারবার ভুলিয়ে রাখতে চায়। ফলে বিজ্ঞানভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক শিক্ষানীতির দাবিতে রাজপথে শিক্ষার্থীদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আজ চাপা পড়ে আছে।

ভালোবাসা আদান-প্রদান করতে তো কোনো দিনক্ষণের প্রয়োজন পড়ে না। কারণ, প্রিয়জনের প্রতি মানুষের ভালোবাসা থাকে অবিরাম। ফলে ভালোবাসা কোনো দিবস, মাস, বছর কিংবা কালে আবদ্ধ নয়। সব সময়ই থাকে প্রিয়জনের জন্য একরাশ ভালোবাসা। এটি সর্বজনীন। অথচ এই ভালোবাসা দিবসকে উপলক্ষ করে পুঁজিবাদী গোষ্ঠী সাধারণ জনগণের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর বাণিজ্যিক কৌশলের প্রধান হাতিয়ার এখন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।

তৎকালীন পাকিস্তান আমলের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাব, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল শিক্ষাকে সর্বজনীন করা। সেই সময়ে সামরিক শাসন আইয়ুবের খানের শিক্ষাসচিব ড. এস এম শরিফ, অর্থাৎ শরিফ কমিশন রিপোর্ট কয়েকটি সুপারিশ করেছিল, তা হলো শিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধি এবং উচ্চশিক্ষা সংকোচনের জন্য উদ্দেশ্যমূলক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যেমন ডিগ্রি কোর্স দুই বছর থেকে তিন বছর করা, কলেজ পর্যায়ে বছর শেষে পরীক্ষা ও তার ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তী বর্ষে উন্নীত হওয়ার শর্ত, অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী পরীক্ষার ফলাফলের শর্ত। এগুলোকে ছাত্ররা সাধারণ পরিবারের সন্তানদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ বন্ধ করার ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে। ফলে শরিফ কমিশন বাতিলের দাবিতে ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষার অধিকার আদায়ের জন্য ঢাকার রাজপথে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পুলিশের গুলিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন মোস্তফা ওয়াজিল্লাহ, বাবুল প্রমুখ ছাত্রনেতারা।

সামরিক শাসক আইয়ুব খানের মতোই হাঁটতে চেয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের এরশাদ সরকার। সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খান ১৯৮২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর একটি নতুন শিক্ষানীতির প্রস্তাব করেন। সেখানে প্রথম শ্রেণি থেকেই আরবি ও দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য মাপকাঠি করা হয় মেধা অথবা ৫০ শতাংশ ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা। ফলে সেই ধর্মভিত্তিক ও বাণিজ্যিকীকরণ শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ১৭ সেপ্টেম্বর আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয় ছাত্রসংগঠনগুলো। তারপর শুরু হয় ছাত্র আন্দোলন, কালক্রমে যেটি গণ-আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। ছাত্রসমাজের দাবি ছিল একটি অবৈতনিক বৈষম্যহীন শিক্ষানীতি। কিন্তু ড. মজিদ খান যে নীতি ঘোষণা করেন, সেখানে শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের দিকে ঠেলা দেওয়ার চক্রান্তই দেখা যায়। তাই শুরু থেকেই ওই নীতির বিরোধিতা করতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

১৪ ফেব্রুয়ারিতে স্মারকলিপি দিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল করে সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, জলকামান, অবশেষে নির্বিচারে গুলি চালায়। ফলে লুটিয়ে পড়েন দিপালী সাহা, জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব, কাঞ্চনসহ নাম না জানা অসংখ্য শহীদ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপের মুখে বাধ্য হয়েছিল বাতিল করতে কুখ্যাত মজিদ কমিশনের শিক্ষানীতি। সেই কারণেই ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, স্বৈরাচার ছাত্র প্রতিরোধ দিবস কোনো ছাত্রসংগঠন বা রাষ্ট্র এই দিবস পালন করে না। তাই ভালোবাসার ফুল তাঁদের চরণে দিই, যাঁরা শিক্ষা রক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে রাজপথে জীবন দিলেন। ভালোবাসার প্রাণ ওই শহীদেরা। সেই ভালোবাসার কল্যাণেই এই মাটির ইতিহাস কখনোই ভোলার নয়।

স্বাধীন জাতি হিসেবে বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন এবং মজিদ কমিশনের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একই ধারায় বিজ্ঞানভিত্তিক গণতান্ত্রিক শিক্ষানীতির লক্ষ্য কতটা অর্জিত হলো, শিক্ষাব্যবস্থায় কী কী দুর্বলতা ও অসংগতি রয়ে গেছে, তা রাষ্ট্রকে বিশ্লেষণ করে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। তা না হলে শহীদের রক্তের ঋণের প্রতি অশ্রদ্ধা করা হবে। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আড়ালে যেন পড়ে না থাকে স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র প্রতিরোধ দিবস।

লেখক: সংবাদকর্মী

সম্পর্কিত সংবাদ

Home Post

রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ না হয়ে রাজনীতির হাতিয়ার: গোয়েন্দা সংস্থা ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা

সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫
Home Post

সন্ত্রাসের দুই মুখ: গাইবান্ধার সিজু হত্যা ও বসুন্ধরায় সামরিক ষড়যন্ত্র

আগস্ট ১০, ২০২৫
Home Post

জুলাই বিপ্লব: গণআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্ররূপান্তরের যুগসন্ধিক্ষণে রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক দায় ও চূড়ান্ত অগ্নিপরীক্ষা

মে ৩১, ২০২৫

Discussion about this post

জনপ্রিয় সংবাদ

  • রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর: ১৫ বছর পরেও বেপরওয়া খুনিরা, সুবিচার পায়নি শহীদ পরিবার

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • Trademark Web based poker Crazy Expensive diamonds Gambling enterprise Video slot Genuine Imitation Financial

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • ভাষা আন্দোলন ও এর ঘটনা প্রবাহ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • পাহাড়ে পরিকল্পিতভাবে বাঙালি উচ্ছেদ ও ডি ইসলামাইজেশন করা হচ্ছে

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • Tagesordnungspunkt Spielbank Maklercourtage Ohne Einzahlung 2024

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

সাম্প্রতিক সংবাদ

রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ না হয়ে রাজনীতির হাতিয়ার: গোয়েন্দা সংস্থা ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা

সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫

সন্ত্রাসের দুই মুখ: গাইবান্ধার সিজু হত্যা ও বসুন্ধরায় সামরিক ষড়যন্ত্র

আগস্ট ১০, ২০২৫

জুলাই বিপ্লব: গণআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্ররূপান্তরের যুগসন্ধিক্ষণে রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক দায় ও চূড়ান্ত অগ্নিপরীক্ষা

মে ৩১, ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাব

মে ২১, ২০২৫

ইশরাকের মেয়র হতে বাধা কোথায়?

মে ২১, ২০২৫

© Analysis BD

No Result
View All Result

© Analysis BD