অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
জনমত এবং সংসদের বিরোধীদলের সদস্যদের মতামতকে উপেক্ষা করেই বাকশালী কায়দায় নির্বাচন কমিশন গঠন আইন পাস করলেন শেখ হাসিনা। নির্বাচন কমিশনে নিজেদের পছন্দের লোকদের বসাতেই মূলত শেখ হাসিনা তড়িঘড়ি করে নিজেদের প্রস্তাবিত বিষয়গুলোই সংসদে আইন হিসেবে পাস করলেন।
বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন একটা গুরুত্বপূর্ণ সাংবাধানিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কিভাবে গঠিত হবে তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন ছিল না। দীর্ঘদিন ধরেই প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোসহ দেশের বিশিষ্টজনেরা নির্বাচন কমিশন গঠনের সুনির্দিষ্ট আইন করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। যাতে দেশের মানুষের ভোটাধিকারের স্বার্থে দল নিরপেক্ষ লোকেরা সেখানে বসতে পারে।
কারণ, ২০১৩ ও ২০১৭ সালে কথিত সার্চ কমিটির নামে শেখ হাসিনা তার নিজেদের লোকদের দিয়ে ইসি গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করেছিল। দেখা গেছে, প্রতিটি কমিটিই ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডার দেখে দেখে নাম প্রস্তাব করেছে। আর রাষ্ট্রপতিরাও চোখ বন্ধ করে সেই প্রস্তাব মেনে নিয়ে শেখ হাসিনার পছন্দের লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে।
এর ফলে দেখা গেছে-বিগত দুইটি নির্বাচনই ভোটারবিহীন হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে কাজী রকিবউদ্দিন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনার জন্য সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছে। যার কারণে বিনাভোটে ১৫৪ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছিল। এরপর, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নুরুল হুদা দিনের ভোট রাতে করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় এনেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে দুইটি নির্বাচনই ছিল সবার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথাতো বলার দরকার নাই।
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সকলেই একটি নির্বাচন কমিশন গঠন আইনের উপর জোর দিয়েছিল। পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের আগেই একটি আইন করার দাবি জানিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাদের দাবি মেনে নিয়েছেন। সরকার ইসি গঠনের আইনও করেছেন। তবে সেই আইন শেখ হাসিনা নিজের মত করেই পাস করেছেন। কোনো পক্ষের মতামতকে তিনি গ্রহণ করেননি।
ইসি গঠন আইনে রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনদের পক্ষ থেকে প্রায় দুইশ’র কাছা কাছি প্রস্তাব করা হয়েছিল। আইনমন্ত্রী ইসি আইনের যে খসড়া সংসদে পেশ করেছিলেন-সেটাতো অনেক কিছু সংশোধন আনার জন্য প্রস্তাব করেছিলেন বিরোধীদলের সদস্যরা। কিন্তু সরকার কারো প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। আইনমন্ত্রীর প্রস্তাবিত খসড়াই সংসদে আইন হিসেবে পাস হয়েছে।
সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হল-সার্চ কমিটি কাদেরকে সার্চ করেছে বা কাদের নাম প্রস্তাব করেছে সেটাও প্রকাশ করা হবে না। মানে সব কিছুই হবে অতি গোপনে। এরপর, সার্চ কমিটি যাদের নাম প্রস্তাব করবে রাষ্ট্রপতি সেটা প্রকাশ করতে পারবে না। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী-প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। সুতরাং, এখানে প্রধানমন্ত্রী যাদের নাম পছন্দ করবেন রাষ্ট্রপতিকে তাদের নামই ঘোষণা দিতে হবে।
Discussion about this post